টানা দ্বিতীয়বারের মতো সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপ জিতল বাংলাদেশের নারী ফুটবল দল। সেরা খেলোয়াড় ঋতুপর্ণা চাকমা। সাফ নারী ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপে কাঠমান্ডুতে নেপালকে ২-১ গোলে পরাজিত করে বিজয়ের উল্লাসে দেশে ফেরেন সাবিনা, ঋতুপর্ণা চাকমা, রুপনা চাকমা, মনিকারা। ২০২২ সালে একই প্রতিপক্ষকে হারিয়ে প্রথমবার দক্ষিণ এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্বের এই আসরের শিরোপা জিতেছিল বাংলাদেশের মেয়েরা। এবারও ব্যতিক্রম নয় খেলার শেষ মুহূর্তে ঋতুপর্ণা চাকমার গোলে পুরো মাঠে দাপট দেখিয়ে কোচ পিটার বাটলারের অধীনে ট্রফি ধরে রাখে তারা। দেশে ফেরা বিজয়ী ফুটবলারদের বরণ যেন ২০২২ সালের মতোই কোনো কিছুই কমতি ছিল না বাংলার বাঘিনীদের জন্য। ছাদ খোলা বাসে করেই রাজধানীতে বরণ করে নেওয়া হয় হাজারো দর্শকের ভিড়ে।
বাংলাদেশ নারী ফুটবল অল্প দিনের না, ২১ বছর হয়ে গেছে মেয়েদের ফুটবল। ঘরোয়া ফুটবল শুরু হয়েছে ২০০৪ সাল থেকে। এর ২০ বছর পরও এশীয় পর্যায়ে খেলতে পারবে না বা সুযোগ পেয়েও কাজে লাগাবে না তা কিন্তু থেমে থাকেনি। খেলাধুলায় নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে ১৯৭২ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ মহিলা ক্রীড়া সংস্থা প্রতিষ্ঠা লাভ করে। ২৯ জানুয়ারি ২০১০ সালে দলটি সর্বপ্রথম নেপালের বিপক্ষে ম্যাচ খেলার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ফুটবলে প্রবেশ করে। প্রথমবারের মতো দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবলের শিরোপা হিসেবে ২০২২ সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের ট্রফি জয়ী বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা ফুটবল দল। ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২২ তারিখের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালে স্বাগতিক নেপালকে ৩-১ গোলে হারায় বাংলাদেশ। এবারের রোমাঞ্চকর শিরোপা নির্ধারণী লড়াইয়ে বাটলারের দল ৫২তম মিনিটে এগিয়ে যায় মনিকা চাকমার গোলে। চার মিনিটের ব্যবধানে নেপাল সমতায় ফেরে আমিশা কারকির গোলে। এর পরবর্তী ৮১তম মিনিটে বাম পায়ে দূরপাল্লার অসাধারণ লক্ষ্যভেদে বাংলাদেশের জয় নিশ্চিত করেন ঋতুপর্ণা চাকমা।
সাবিনাদের ট্রফি জয়ের মিশনের আগে জানা গেছে গত মাসের বেতন পাননি সাবিনা খাতুনরা। শুধু তা-ই নয়, মে ও জুলাই মাসে অনুষ্ঠিত চারটি ম্যাচের ম্যাচ ফিও দেশে ফেরা পর্যন্ত বুঝে পাননি নারী দলের ফুটবলাররা। তারপরও অদম্য বাংলাদেশের ফুটবল অঙ্গনে নারীরা বেশ এগিয়ে যাচ্ছে। এটা নিঃসন্দেহে আমাদের গর্বের বিষয় যে পুরো বিশ্বে বাংলার নারীরা দাপট দেখাতে পারছে। তাঁদের এই অর্জন একদিনের নয়। বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুলের ভাষাতে যদি বলি, ‘কোনোকালে একা হয়নিকো জয়ী পুরুষের তরবারি, প্রেরণা দিয়াছে শক্তি দিয়াছে বিজয়লক্ষ্মী নারী।’ নারী-পুরুষের সমানতালে বিশ্ব দরবারে এগিয়ে যাচ্ছে আগামীর বাংলাদেশ। নারী ফুটবলে প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে যেভাবে উঠে এসেছে ঋতুপর্ণা, সাবিনারা। সেই ধারাবাহিকতা অব্যাহত রেখে প্রতিভাবান ফুটবলার খুঁজে আরও উদ্যোগ নিতে হবে বাফুফেকে। ফুটবলে নারীদের নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে