যে খেলাটি কিছুদিন আগেও পুরুষদের খেলা হিসেবে পরিচিত ছিল, এখন নারীদের মধ্যে বিশেষত জনপ্রিয়তা অর্জন করছে, তা হলো ফুটবল। বিশ্বব্যাপী ফুটবলের প্রতি মেয়েদের আগ্রহ বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং অনেক দেশে এই খেলার জন্য বৈষম্যহীন সুযোগও সৃষ্টি হচ্ছে। এর পেছনে রয়েছে পারিবারিক ট্যাবু হ্রাস, সমাজের মানসিকতার পরিবর্তন, নারীদের প্রতি সম্মান এবং সমর্থন, এবং খেলাধুলায় তাদের সমান অংশগ্রহণের দাবির উত্থান।
বিশ্বের অনেক দেশের মতো বাংলাদেশেও ফুটবলে মেয়েদের অংশগ্রহণ ছিল সীমিত এবং অনেক জায়গায় নিষিদ্ধ না থাকলে অলিখিতভাবে কেউ তার কন্যা সন্তানদের সে পথে এগুতে দিতে চাইতো না। ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশে ১৯৭০-এর দশক পর্যন্ত বেশিরভাগ দেশেই নারীদের জন্য ফুটবল ছিল একটি অদ্ভুত বা বিভ্রান্তিকর বা অশালীন খেলা। তবে ধীরে ধীরে এই মনোভাব পরিবর্তিত হতে শুরু করে, বিশেষ করে ১৯৯১ সালে প্রথম নারী বিশ্বকাপ ফুটবল প্রতিযোগিতা আয়োজনের মাধ্যমে; তবে বাংলাদেশ নারীরা ফুটবলের দিকে এগোয় প্রায় ২০০৫ সালের পর থেকে যদিও সাউথ এশিয়ান বা এসএ গেমস খেলতে ২০০৯ সালের জুলাইয়ে প্রথম নারী ফুটবল দল গড়া হয়েছিল। হাজারো বাধা বিপত্তি, অসহযোগিতা, অসাম্য আচরণ এখনো বিরাজমান ফুটবলে মেয়েদের জন্য। তার মধ্যে অন্যতম- আর্থিক সমর্থনের অভাব, মিডিয়া কাভারেজের কমতি এবং সমাজের পক্ষ থেকে বৈষম্যমূলক দৃষ্টিভঙ্গি। তবে এসব চ্যালেঞ্জের মধ্যে দিয়েও নারী ফুটবলাররা নিজেদের শক্তি, দক্ষতা এবং নেতৃত্ব প্রমাণ করছেন এবং টানা দ্বিতীয় বারের মতো সাফ জিতেছে, যা অনন্য এবং সত্যিই অভাবনীয়। বিশেষ করে ২০১৮ সালে সাফ নারী ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর, দেশের ফুটবল মহলে এক নতুন উৎসাহ এবং আশার সঞ্চার হয়, তা এখনো যে বিরাজমান এবং এটা নিয়মিত করার জন্য সবার যে প্রচেষ্টা তা অবশ্যই প্রশংসার দাবি রাখে। সাবিনা-তহুরারা আমাদের নতুন উদ্যমী বাংলাদেশের ফুটবলকে নেতৃত্ব দিচ্ছে যা নারী ফুটবলসহ সমাজের বিভিন্ন স্তরে থাকা নারী ও তাদের পরিবারকেও অনুপ্রাণিত করছে এবং করবে। ছেলেদের ফুটবল যেখানে প্রতিনিয়ত পিছিয়েছে সেখানে মেয়েদের ফুটবলের ক্রমাগত এগিয়ে যাওয়া নিশ্চয়ই তাদের অনুপ্রাণিত করবে। বলতেই হবে, বর্তমান বাংলাদেশে নারী ফুটবল কেবল একটি খেলা নয়; এটি সামাজিক পরিবর্তনের একটি চিত্রও। ফুটবলে মেয়েরা নিজেদের অবস্থান প্রতিষ্ঠিত করার মাধ্যমে সমাজে মেয়েদের শক্তি এবং স্বাধীনতার প্রতি এক নতুন ধারণা সৃষ্টি করছে। বিশেষ করে, নারীরা যখন দেখতে পায় যে তারা খেলাধুলায় সমানভাবে অংশগ্রহণ করতে পারে, তখন তাদের আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি পায় এবং সামাজিক গতিশীলতায় এক নতুন দিক উন্মোচিত হয়, স্বপ্ন দেখায় এক নতুন বাংলাদেশেরও। সমগ্র দুনিয়াজুড়ে নারীদের ফুটবল খেলার প্রতি যে আগ্রহ বেড়েছে, তা নিশ্চিতভাবেই সামাজিক কাঠামোতে একটি বৃহৎ পরিবর্তন আনছে এবং ভবিষ্যতে এটি আরও বিস্তৃত হবে। ফুটবলের সে প্রশস্ত পথে বাংলাদেশের নারীরাও তার জায়গায় আগলে রেখে পুরো পথ দখল করবে সে আশা বাংলার বাঘিনীরা জাগিয়ে রেখেছে এবং সম্ভব তারাই করবে বলে বাংলাদেশের বিশ্বাস। শুধু অভিনন্দন নয় সমর্থন, আর্থিক সহযোগিতা নয় বৃহৎ পরিকল্পনা, ভালো সময়ে নয় খারাপ সময়েও পাশে থাকা, মৌখিক বা লোকদেখানো নয় মানসিকভাবে ও দর্শক হয়ে সমর্থন দেওয়া আমাদের বাঘিনীদের নিয়ে যাবে অনন্য উচ্চতায়, কারণ তারাই তো বাংলাদেশের ব্র্যান্ড, ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর!
নীলফামারী থেকে