যে কোনো সরকারি, আধাসরকারি কিংবা ব্যাংকের চাকরির জন্য পুলিশ ভেরিফিকেশন জরুরি। কেননা, একজন ব্যক্তি কোনো দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত কিনা বা তার পরিচয়ে কোনো গোপনীয়তা রয়েছে কিনা, এ বিষয়ে সঠিক তথ্য প্রয়োজন। কিন্তু এখানে বহুকাল যাবৎ যোগ্যতার মাপকাঠি পরিমাপে মুখ্য ভূমিকা রাখছে স্বজনপ্রীতি ও রাজনৈতিক পরিচয়। বর্তমানে যা দেশের জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। এক্ষেত্রে গড়ে উঠেছে অনিয়মের পাহাড়।
পুলিশ ভেরিফিকেশনের পদ্ধতি প্রায় ৯৬ বছর ধরে চলছে। ব্রিটিশ আইনের ম্যানুয়াল অনুযায়ী এখানে কয়েক ধরনের প্রশ্নের অনুসন্ধান এবং তদন্ত করা হয়। এতে অনেক সময় অনেক চাকরিপ্রার্থী বাদও পড়ে। ব্রিটিশদের তদন্তের মূল বিষয় ছিল আত্মীয়স্বজনের মধ্যে কেউ রাজনীতি করে কিনা কিংবা রাষ্ট্রবিরোধী কেউ আছে কি না। দুঃখজনক হলেও সত্যি, বর্তমানে প্রাধান্য পায় চাকরি প্রার্থীর আত্মীয়স্বজন ক্ষমতাসীন দলের রাজনীতি করে কিনা। না করলে কাক্সিক্ষত চাকরি থেকে বঞ্চিত হতে হয়। আর এই প্রথা ভাঙার সুপারিশ করছেন পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রধান সফর রাজ হোসেন।
ব্যাংকের একজন গার্ড থেকে ক্লার্ক সবার চাকরি গুরুত্বপূর্ণ। অনেক সময় নাম, পরিচয় পরিবর্তন করে কেউ চাকরিতে ঢুকতে পারে। পরে দেখা যেতে পারে, সে কোনো অপরাধের সঙ্গে জড়িত। সুতরাং ভেরিফিকেশন জরুরি। পুলিশ ভেরিফিকেশন হবে কিন্তু সেখানে আত্মীয়স্বজনের রাজনৈতিক বিবেচনা আমলযোগ্য হবে না বলে জানান পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রধান।
দেশের উন্নতির অন্যতম অন্তরায় দুর্নীতি। আর যে কোনো সেক্টর দুর্নীতিমুক্ত হলে সেখানে বাড়বে কর্মদক্ষতা। আইনের প্রতি মানুষের আনুগত্য বাড়াতে পুলিশ বিভাগকে দুর্নীতির বাইরে রাখা একান্ত প্রয়োজন। জানা যায়, নতুন সরকারের সংস্কারে পুলিশের বেতন কাঠামো নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। পুলিশসহ সরকারের সব বিভাগকে রাজনীতিমুক্ত রাখার চেষ্টা করছে। বিগত ১৫ বছরের নিকট অতীতে পুলিশের অন্য বিভাগের অনেকে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংযুক্ত ছিলেন এবং দুর্নীতির মাধ্যমে পদোন্নতি নেওয়ার চেষ্টা করেছেন বিভিন্নভাবে। এগুলো বন্ধের সুপারিশের কাজ করবেন তারা। যা দেশের জন্য যথেষ্ট ইতিবাচক।
পুলিশের কার্যক্রম প্রথম শুরু হয়েছিল প্রাচীন মিসরীয় সভ্যতায়। সে সময়ে বিশেষায়িত পুলিশের ইউনিট ও তাদের কার্যাবলি ছিল বিদ্যমান। আধুনিক যুগে পুলিশের প্রয়োজনীয়তা আরও বেশি অনস্বীকার্য। তাই পুলিশের সমস্যা, সীমাবদ্ধতা, ঝুঁকি ও চ্যালেঞ্জ জেনেও বিবেচনায় নিয়ে আমাদের একটা বাস্তবধর্মী এবং টেকসই পুলিশ সংস্কারের পথ বেছে নেওয়া সময়ের দাবি।
পুলিশি সেবা হলো অনেক উঁচুমানের। অথচ সরকার, রাজনৈতিক দল ও প্রভাবশালী গোষ্ঠী নিজেদের স্বার্থ আদায়ে ব্যবহার করে পুলিশকে। এ ধরনের অপপ্রয়াস থেকে এই প্রশাসনিক বিভাগকে মুক্ত রাখতে হবে। পুলিশের প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার করে এ বাহিনীকে আরও স্বায়ত্তশাসিত, স্বচ্ছ ও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপমুক্ত রাখতে হবে। পুলিশকে সবার আগে হতে হবে জনবান্ধব। পুলিশ ও জনগণের মধ্যে বাড়াতে হবে মিথস্ক্রিয়া। সেবা ও কর্তব্য দিয়ে অর্জন করতে হবে মানুষের আস্থা ও ভালোবাসা। পুলিশ কর্মকর্তা বা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের দল, মত ও ধর্ম নির্বিশেষে সবার সঙ্গে সুসম্পর্ক ও যোগাযোগ রাখাও জরুরি।
পুলিশ ভেরিফিকেশন
শীর্ষ সংবাদ: