ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২০ নভেম্বর ২০২৪, ৬ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

রাষ্ট্র সংস্কারে কমিশন

প্রকাশিত: ১৯:২৮, ২০ নভেম্বর ২০২৪

রাষ্ট্র সংস্কারে কমিশন

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার সম্প্রতি রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষ্যে স্থানীয় সরকার, নারীবিষয়ক, শ্রম অধিকার, স্বাস্থ্য এবং গণমাধ্যম সংস্কারের উদ্দেশ্যে পাঁচটি নতুন কমিশন গঠনের ঘোষণা দিয়েছে। কমিশনগুলো অবিলম্বে কার্যক্রম শুরু করবে এবং সংশ্লিষ্ট সকলের মতামত বিবেচনা করে পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে প্রস্তুতকৃত প্রতিবেদন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাছে হস্তান্তর করবে। বিভিন্ন কমিশনের সদস্যরা চাইলে বিনা বেতনে কাজ করতে পারবেন। তবে এক্ষেত্রে কমিশনের কার্যালয় ও সদস্যদের সুযোগ-সুবিধা ঠিক করবে অন্তর্বর্তী সরকার। এর আগে ১১ সেপ্টেম্বর অন্তর্বর্তী সরকার ছয়টি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র, যেমন- সংবিধান, জনপ্রশাসন, বিচার বিভাগ, নির্বাচন ব্যবস্থা, পুলিশ প্রশাসন ও দুর্নীতিবিরোধী ব্যবস্থা সংস্কারের উদ্দেশ্যে পৃথক পৃথক কমিটি গঠন করে। ফলে, বর্তমানে গঠিত কমিশনের মোট সংখ্যা এগারোয় উন্নীত হলো।
রাষ্ট্র সংস্কারের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে তা হলোÑ সংবিধানের সংস্কার। সাংবিধানিকভাবে রাষ্ট্র সব নাগরিকের সমান গণতান্ত্রিক অধিকার বাস্তবায়নে অঙ্গীকারবদ্ধ। কাজেই সংবিধান হওয়া চাই স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ, ন্যায়নিষ্ঠ ও সর্বজনগ্রাহ্য। বাংলাদেশে স্থানীয় সরকার বিভাগটিও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই বিভাগের নানা কার্যাবলির মাধ্যমে মানুষের নিরাপত্তা, টেকসই উন্নয়ন, জলবায়ু পরিবর্তন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি এবং সামাজিক ন্যায়বিচারসহ অনেকটাই নিশ্চিত হয়ে থাকে। আর গণমাধ্যমকে বলা হয় রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ। কাজেই গণমাধ্যমের স্বাধীনতাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। বিগত বিভিন্ন সরকারের আমলে দেশের স্বাস্থ্য খাতে অবকাঠামোসহ নানা উন্নয়ন হলেও সেসব কতটা সুফল দিচ্ছে, তা নিয়েও রয়েছে প্রশ্ন, যা নিরসন করা আবশ্যক। গণঅভ্যুত্থানের পর নারীর প্রতি বিরাজমান সব বৈষম্য দূর এবং শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকারও নিশ্চিত করা চাই। পাশাপাশি দেশে গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণসহ স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন কমিশন ও পুলিশ প্রশাসন এখন সময়ের দাবি।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ও ক্ষমতার পট পরিবর্তন হয়। এরপর অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান করে গঠিত হয় অন্তর্বর্তী সরকার। এই সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে রাষ্ট্রের বিভিন্ন বিষয়ে সংস্কারের দাবি ওঠে। অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে জনমনে রাষ্ট্র সংস্কারের যে গভীর আকাক্সক্ষা সৃষ্টি হয়েছে, তারই ধারাবাহিকতায় রাষ্ট্রের সংস্কার কাজ এগিয়ে নিতে কমিশন গঠন করা হচ্ছে। নির্বাচনব্যবস্থা, সংবিধান, জনপ্রশাসন, বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন, পুলিশ প্রশাসন, স্বাস্থ্যবিষয়ক, গণমাধ্যম, শ্রমিক অধিকার, নারীবিষয়ক ও স্থানীয় সরকার সংস্কারে বিভিন্ন খাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে এ ধরনের কমিশন গঠন অপরিহার্য। রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে যে কয়টি কমিশন গঠন করা হয়েছে, তাদের কাছে প্রত্যাশাÑ সংস্কার যেন কোনো নির্দিষ্ট গোষ্ঠী বা সম্প্রদায়ের জন্য না হয়ে সবার জন্য হয়। সেই সঙ্গে দায়িত্ব গ্রহণের পর তাদের নানা সুপারিশমালায় যেন জনআকাক্সক্ষা সর্বোচ্চ গুরুত্ব পায় এবং অধিকাংশের প্রতিফলন ঘটে।

×