ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ৫ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

পর্যটনের মৌসুম

-

প্রকাশিত: ২০:৪৯, ১৯ নভেম্বর ২০২৪

পর্যটনের মৌসুম

সম্পাদকীয়

ষড়ঋতুর নৈসর্গিক বৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ আবহমান বাংলা শুধু সৃজন ব্যক্তিত্বের আধার ছিল না, তার চেয়েও বেশি বিদেশী পর্যটক, ক্ষুদ্র নৃ-তাত্ত্বিক গোষ্ঠী এবং ভিন দেশের রাজা-মহারাজাদের আকর্ষণীয় স্থান হিসেবে ছিল প্রসিদ্ধ। সমুদ্র, পাহাড়, নদী পরিবেষ্টিত ক্ষুদ্র এই সৌন্দর্যের তীর্থভূমি আজও বিশ্ব পর্যটকদের মুগ্ধ করার জন্য এক অপার বিস্ময়। সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ডের মতো দেশগুলোর প্রকৃতির অপার মাধুর্য যেমন সারাবিশ্বকে আনন্দ আর ভ্রমণের খোরাক জোগায়, সে মাত্রায় বাংলাদেশও তার নৈসর্গিক ডালি সাজিয়ে ভ্রমণবিলাসী মানুষের মনোরঞ্জন করতে বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করে না।

প্রকৃতিই তার সমস্ত সৌন্দর্য আর মাধুরী অবারিত করে শ্যামল-সবুজ বাংলাকে বিশ্ব দরবারে দর্শনীয় স্থান হিসেবে চিহ্নিত করেছে। দেশে পর্যটন মৌসুম শুরু হয় মূলত সেপ্টেম্বর-অক্টোবর থেকে। আর ভরা মৌসুম থাকে মূলত দুমাস- নভেম্বর ও ডিসেম্বর। পর্যটকরা এ সময় দেশের নানা জায়গায় ঘুরে বেড়ান। শিক্ষাবর্ষ শেষ হয়ে যাওয়ায় স্কুলের শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার চাপ থাকে না। বৃষ্টি-বাদল, ঝড়-তুফান ও গরমের যন্ত্রণা থাকে না। আবহাওয়াও থাকে ঘুরে বেড়ানোর উপযোগী।
তবে শুধু প্রকৃতির দানে ভরপুর হওয়ার চাইতে প্রাসঙ্গিক সব সুযোগ-সুবিধাও পর্যটকদের জন্য থাকা অত্যন্ত জরুরি। পর্যটন অর্থনীতিতে দক্ষিণ এশিয়ার ছোট দেশগুলো বড় দৃষ্টান্ত দেখালেও অপার সম্ভাবনাকে পুরোপুরি কাজে লাগাতে পারছে না বাংলাদেশ। বিগত সরকার দেশের পর্যটন খাতের পরিকল্পিত বিকাশে যে ট্যুরিজম মাস্টারপ্ল্যান বা মহাপরিকল্পনা হাতে নিয়েছিল, তা বাস্তবায়নে কোনো গতি নেই। এমনকি মহাপরিকল্পনার প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে যেসব বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে, সেগুলোও থমকে গেছে। এতে পর্যটন অর্থনীতির বড় স্বপ্ন শুরুতেই যেমন ধূসর হয়ে পড়েছে, তেমনি বিদেশী পর্যটক আকর্ষণে কার্যকর পদক্ষেপ না থাকায় বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের স্বপ্নও অধরাই থেকে গেছে। গত এক-দেড় দশক ধরে দেশের সম্প্রসারিত অর্থনীতিতে পর্যটনের প্রত্যাশিত হিস্যা মিলছে না। 
দেশের অর্থনীতির জন্য পর্যটন একটি বড় সম্ভাবনাময় খাত। পর্যটনের উন্নয়নে ১৯টি মন্ত্রণালয়ের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সম্পৃক্ততা আছে। কিন্তু এসব সংস্থার মধ্যে সমন্বয়হীনতার অভিযোগ খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের দীর্ঘদিনের। তবে এই শিল্পের বিকাশ ও মানোন্নয়নে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর সমন্বিত অংশগ্রহণ জরুরি। এছাড়াও বৃহত্তর চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, সিলেট, শ্রীমঙ্গল থেকে শুরু করে অন্যত্র ইকো ট্যুরিজম প্রয়োজন। বিশেষ করে আন্তঃসংযোগ বাড়ানো চাই।

পাশাপাশি রিলিজিয়ন ট্যুরিজমের সম্ভাবনাকেও গুরুত্ব দেওয়া দরকার। এই খাতে মনোযোগ দিলে দেশের সৌন্দর্য, কর্মসংস্থান এবং জিডিপিতে এর অবদান বাড়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। ইতোমধ্যে দেশে শীতের আমেজ শুরু হয়ে গেছে। তাই পর্যটনের ভরা মৌসুমে দেশী-বিদেশী পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠুক দেশের প্রতিটি পর্যটনকেন্দ্র- এই প্রত্যাশা।

×