ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ৫ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

মেগা প্রকল্পে সাশ্রয়

-

প্রকাশিত: ২০:৪৮, ১৯ নভেম্বর ২০২৪

মেগা প্রকল্পে সাশ্রয়

সম্পাদকীয়

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলনের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ চার মাসে পদার্পণ করেছে। ইতোমধ্যে বিগত সরকারের রেখে যাওয়া ১২ বিলিয়ন রিজার্ভ ২০ বিলিয়নে উন্নীত হয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক আর্থিক সংস্থা থেকে দেশের অর্থনীতি পুনর্গঠনে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার সহযোগিতার আশ্বাসও পাওয়া যাচ্ছে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অধীনে সৃষ্টি হয়েছে ৮৬ হাজারের অধিক কর্মসংস্থান। যথেষ্ট অগ্রগতি হয়েছে ৫ আগস্টের পর সৃষ্ট দেশের ভঙ্গুর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিরও। এখন পর্যন্ত অন্তর্বর্তী সরকারের সাফল্য যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে কিছু ব্যর্থতাও।

বিশেষ করে নিত্যপণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে নেই। সরকার আমদানি করা খাদ্যপণ্যের ওপর থেকে সব ধরনের শুল্ক প্রত্যাহার এবং টিসিবির মাধ্যমে পণ্য বিক্রির ব্যবস্থা করেও নিত্যপণ্যের দাম কমাতে পারছে না। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির জন্য দায়ী সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে বিভিন্ন উপদেষ্টা সতর্কবাণী উচ্চারণ করে আসলেও বাস্তবে সেসব খুব একটা কাজে আসছে না।
সম্প্রতি গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, মেট্রোরেলের ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট লাইন-৫ (এমআরটি লাইন-৫) এর সাউদার্ন রুট (গাবতলী-দাশেরকান্দি) প্রকল্পের ব্যয় পর্যালোচনার পর ১৫ শতাংশ সাশ্রয় করা হয়েছে। ফলে মেট্রোরেলের গাবতলী-দাশেরকান্দি রুটে খরচ কমেছে প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা। প্রকল্পটিতে ঋণের সুদ পরিশোধের সময় কমিয়ে আনা, মূলধন ব্যয় হ্রাস এবং অতিরিক্ত ব্যয় প্রাক্কলনে কম অর্থ ধরে সার্বিক খরচ সাশ্রয় করা হয়েছে। তাছাড়া সংশোধিত প্রকল্প প্রস্তাবটি সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগে জমা দেওয়া হয়েছে।

ধারণা করা হচ্ছে, সেখান থেকে খরচ আরও কমতে পারে। এছাড়া গত মাসে আরও তিন মেগা প্রকল্পে ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি সাশ্রয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পগুলো হচ্ছে– পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প, বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে সেতু বা যমুনা রেল সেতু প্রকল্প ও দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু থেকে ঘুমধুম পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন ডুয়েলগেজ ট্র্যাক নির্মাণ প্রকল্প। 
 বিগত সরকারের আমলে গৃহীত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আওতায় নেওয়া বিভিন্ন প্রকল্পের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে, প্রভাবশালীদের পরামর্শে গুরুত্বহীন ও অপ্রয়োজনীয় অনেক প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল। এডিপিতে এমন অনেক প্রকল্প আছে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এলাকার নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে নেওয়া হয়েছে। কিছু প্রকল্প নেওয়া হয়েছে রাজনৈতিক প্রভাব ও ঠিকাদারদের স্বার্থে। সক্ষমতা প্রদর্শনে সামর্থ্যরে বাইরেও উচ্চাভিলাষী কিছু ‘প্রেস্টিজ’ প্রকল্পও নেওয়া হয়। অত্যন্ত বিশৃঙ্খল অবস্থায় রয়েছে প্রকল্পগুলো।

দুর্নীতির সুযোগ করে দিতে অনেক প্রকল্পে অতিরিক্ত ব্যয় বরাদ্দ দেওয়া হয়। রাজনৈতিক এবং ব্যক্তি প্রয়োজনেই বিশাল ব্যয়ের প্রকল্পটির মাধ্যমে জনগণের ওপর ঋণের বোঝা চাপানো হয়। সেই প্রেক্ষাপটে চলমান প্রকল্পগুলো পর্যালোচনা করছে অন্তর্বর্তী সরকার। পর্যালোচনা এবং অপ্রয়োজনীয় কিংবা কম প্রয়োজনীয় ব্যয় সংকোচনের উদ্যোগ নিঃসন্দেহে একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত।

×