বর্তমানে মানুষ ব্যাংকে টাকা জামানতের চেয়ে সঞ্চয়পত্র ক্রয় বেশি নিরাপদ মনে করছে। কারণ, সম্প্রতি কিছু ব্যাংক গ্রাহকের আমানতের টাকা ফেরত দিতে ব্যর্থ হয়। এতে কমেছে ব্যাংকের ওপর আস্থা। এ জন্য সঞ্চয়কারীরা ব্যাংকে টাকা না রেখে নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে সঞ্চয়পত্র কিনছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি ২০২৪-২৫ সালের তৃতীয় মাস সেপ্টেম্বরে সঞ্চয়পত্র বিক্রি ইতিবাচক ধারায় ছিল। ঐ মাসে আগের সুদ-আসল পরিশোধ করেও ৪ হাজার ১০৯ কোটি টাকা লাভ হয়। এ ছাড়া চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) আগের আসল-সুদ পরিশোধ করেও ৮ হাজার ৩৩২ কোটি টাকা ইতিবাচক দেখা যায়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছরের তৃতীয় মাস সেপ্টেম্বরে সঞ্চয়পত্র বিক্রির ধারা ছিল নেতিবাচক। ওই সময়ে বিক্রির চেয়ে আগের সুদ-আসল বাবদ বেশি পরিশোধ করতে হয়েছিল প্রায় ১৪৮ কোটি টাকা। আর একই অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) বিক্রির চেয়ে আগের সুদ-আসল বাবদ বেশি পরিশোধ করতে হয়েছিল ১ হাজার ২৬৪ কোটি টাকা।
নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর বিগত সময়ে অবৈধ নিয়ন্ত্রণাধীন থাকা অবস্থায় বিভিন্ন আর্থিক অনিয়মে সংকটে পড়া ব্যাংকগুলো পুনর্গঠন করার পর ওইসব ব্যাংক থেকে আমানত তোলার বাড়তি চাপ তৈরি হয়। আবার শেয়ারবাজারেও বিরাজ করছে মন্দাভাব। সব মিলিয়ে নিরাপদ বিনিয়োগের কেন্দ্রবিন্দু হয় সঞ্চয়পত্র। বর্তমানে ব্যাংক ঋণের সুদ হার বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এতে ব্যাংকে ঋণের সুদহারের পাশাপাশি বেড়েছে আমানতের সুদহারও। কিছু ব্যাংকে আমানতের সুদের হার ১২ শতাংশ ছাড়িয়েছে। তারপরও আকৃষ্ট হচ্ছে না গ্রাহক।
চলতি অর্থবছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংক খাতে আমানতের বার্ষিক প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭ দশমিক ২৬ শতাংশ। অথচ কয়েক মাস আগেও এ খাতে আমানতের প্রবৃদ্ধি ১১ শতাংশের ওপরে ছিল। গত বছর ডিসেম্বরে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ১১ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ। কিন্তু হঠাৎ এ প্রবৃদ্ধি ধসের মূল কারণ আস্থার সংকট। করোনাকালে অনেকেই সঞ্চয়পত্র ভেঙে সংসার চালিয়েছেন, বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মানুষরা। যেকোনো আর্থিক সমস্যায় সহজেই সঞ্চয়পত্র ভাঙা যায় বিধায় সমাজের মধ্যবিত্ত শ্রেণি যাদের সংসার চলছে স্বাভাবিক আয়ে তারা বাড়তি আয়ের জন্য নতুন বিনিয়োগ করতে সঞ্চয়পত্রকেই বেছে নিচ্ছেন। তবে আর্থিক ভারসাম্য রক্ষায় ব্যাংক খাতকে আরও বেশি আস্থা অর্জন করা সময়ের দাবি।
এক বছর আগেও যেখানে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগে মানুষের অনীহা ছিল এক বছরের ব্যবধানে সেই অবস্থার আমূল পরিবর্তন ঘটেছে। সঞ্চয়পত্রে অধিক বিনিয়োগে সরকারও লাভবান হবে। এটা দেশের জন্য ইতিবাচক। একইসঙ্গে ব্যাংক খাতেরও গ্রাহকদের কাছে আরও নির্ভরশীল হতে হবে। চলতি অর্থবছরে (২০২৪-২৫) সঞ্চয়পত্র থেকে ১৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার। তাই সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ যেন সম্পূর্ণ নিরাপদ হয়, সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সর্বদা নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করা উচিত।
সঞ্চয়পত্র বিক্রি ইতিবাচক
শীর্ষ সংবাদ: