ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ৪ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

রাজধানীতে হর্ন বন্ধে আইন

প্রকাশিত: ১৯:৩২, ১৮ নভেম্বর ২০২৪

রাজধানীতে হর্ন বন্ধে আইন

সারাদেশেই দিন দিন বাড়ছে শব্দ দূষণ। তবে শব্দ দূষণে সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী রাজধানীবাসী। কেননা, ঢাকার শব্দদূষণের প্রধান উৎস হলো যানবাহনের হর্ন। এখানে গভীর রাতেও উচ্চমাত্রার শব্দ শোনা যায়। এছাড়াও রয়েছে বিভিন্ন ফ্ল্যাট বা অন্যান্য স্থানে চালুকৃত জেনারেটর, মাইক বা সাউন্ড বক্স, নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন যন্ত্রের শব্দ। ফলে, রাজধানীর বেশিরভাগ মানুষই শব্দ দূষণের শিকার হচ্ছেন। সেই সঙ্গে ঢাকা শহর বিশ্বের অন্যতম কোলাহলপূর্ণ শহরগুলোর একটিতে পরিণত হয়েছে, যেখানে গড় শব্দের মাত্রা ১১৯ ডেসিবেল। এই যখন অবস্থা, তখন পানি সম্পদ এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান জানিয়েছেন, শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে ডিসেম্বর মাসের শেষ থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত ঢাকার ১০টি রাস্তায় হর্ন বাজানো বন্ধে সচেতনতা তৈরি করা হবে। তারপর আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে ঢাকার ১০টি রাস্তায় হর্ন বাজানো বন্ধে আইন প্রয়োগ করা হবে।
মহানগরীর হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, আবাসিক এলাকা– কোনো স্থানই আর নীরব নেই। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী, আবাসিক এলাকায় নিরাপদ শব্দসীমা ৫৫ ডেসিবেল। বাণিজ্যিক ও যানজটপ্রবণ এলাকায় এই মাত্রা ৭০ ডেসিবেল। তবে বাস্তবতা হলো- নীরব এলাকা হিসেবে ঘোষিত  স্থানগুলোতেও শব্দ দূষণে টিকে থাকা দায়। গ্রহণযোগ্য মাত্রার অধিক শব্দে অস্থির মনুষ্য ও প্রাণিকূল। মাত্রাতিরিক্ত শব্দ দূষণের কারণে শিশুদের শ্রুতিহীনতাসহ নানা রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে। শব্দের এই দূষণ নিয়ে সংশ্লিষ্ট কারও কোনো মাথাব্যথা নেই। অথচ সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ ও শব্দ দূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা ২০০৬ অনুযায়ী যে কোনো মোটরযান নির্ধারিত শব্দমাত্রার অতিরিক্ত শব্দমাত্রা সৃষ্টিকারী কোনো যন্ত্র, যন্ত্রাংশ বা হর্ন মোটরযানে স্থাপন বা ব্যবহার করতে পারবে না। এই অপরাধের জন্য সড়ক পরিবহন আইনে অনাধিক তিন মাসের কারাদণ্ড বা অনধিক ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড কিংবা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে। কিন্তু মাঠ পর্যায়ে দেখা যায়, মাঝে-মধ্যে দুই একটি অভিযান শেষ করেন পরিবেশ অধিদপ্তর ও সংশ্লিষ্ট কর্তা ব্যক্তিরা।
যখন তখন কারণে অকারণে যানবাহনের হর্ন বাজানো যেন নিত্যদিনের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। ফলে, শব্দ দূষণের দিক থেকে বিশ্বের প্রথম সারিতে রয়েছে বাংলাদেশ। শব্দ দূষণের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই করা জরুরি। বেপরোয়া হর্ন ব্যবহারের কারণ হিসেবে অসচেতনতা, আইনের প্রতি শ্রদ্ধার অভাবকে দেখছেন চালক ও সাধারণ মানুষ। গুরুত্বপূর্ণ কিছু সড়ক ও মহাসড়কেও এখন রিক্সা, ব্যাটারিচালিত রিক্সা, মোটরগাড়ি একই সঙ্গে চলে। আবার অনেক পথচারীও তাদের ইচ্ছামতো রাস্তায় চলাচল করেন। ফলে বাস, সিএনজি, মাইক্রোবাস, জিপ গাড়িসহ বিভিন্ন যানবাহন চলাচলের গতি কমে যায়। আর তখনই চালকরা অযাচিত হর্ন বাজায়। এরূপ পরিস্থিতি উন্নয়নে চালকদের সচেতন হওয়া দরকার। বিশেষজ্ঞদের মতে, সড়কে বিশ্ঙ্খৃলার কারণেই শব্দ দূষণ বেশি হচ্ছে। কাজেই শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজন পরিকল্পিত নগর পরিকল্পনা। দূষণ নিয়ন্ত্রণে শুধু আইনের প্রয়োগই যথেষ্ট নয়, জনগণের ঐকান্তিক সচেতনতা ও সহায়তাও জরুরি।

×