পর্নোগ্রাফি হলো যৌন উত্তেজনা সৃষ্টিকারী ডিজাইন করা কামুক আচরণের চিত্র। অর্থাৎ, এটি সম্পূর্ণরূপে অভিনয়কৃত দুজন ব্যক্তির উত্তেজনাময় শারীরিক মিলনের মুহূর্ত। ইতোমধ্যে এর ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে বিশালাকার শিল্প, চলছে রমরমা অর্থনৈতিক ব্যবসা। বেডবিবল ওয়েবসাইটের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বর্তমানে পর্নো শিল্প থেকে বিশ্বব্যাপী বার্ষিক আয় প্রায় ১০০ বিলিয়ন ডলার। ইন্টারনেটের বিভিন্ন ওয়েবসাইটের একটি হলো পর্নো সাইট, যেখানে রয়েছে অসংখ্য পর্নো ভিডিও। ট্যাব, ল্যাপটপ ও ডেস্কটপে ইন্টারনেটের সহায়তায় পর্নো সাইটে ঢুকে পর্নোগ্রাফি দেখা সম্ভব হলেও বেশিরভাগ মানুষ প্রধানত মোবাইল ফোনেই দেখে থাকেন। ফলে আজকাল পর্নোগ্রাফিতে আসক্তের সংখ্যা ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। এক সময় পর্নোগ্রাফি শব্দটা শুনলেই তরুণ-তরুণীরা সংকোচ বোধ করত। কিন্তু আজকাল যেন বিষয়টি তেমন কিছুই নয়। ছোটো ছোটো বাচ্চা থেকে শুরু করে প্রাপ্ত বয়স্কদের মাঝেও এই আসক্তির মাত্রা ক্রমেই প্রবল থেকে প্রবলতর হচ্ছে। যার বিরূপ প্রভাবে সামাজিক সম্পর্কগুলোও দিন দিন হয়ে উঠছে ভঙ্গুর।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পাশাপাশি বাংলাদেশের হাজার হাজার কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণী আন্তর্জাতিক পর্নোগ্রাফি চক্রের খপ্পরে পড়ছে। অভিভাবকদের অজান্তে তারা স্বেচ্ছায় লৈঙ্গিক পরিচয় গোপন করে ইন্টারনেটে নগ্ন ছবি শেয়ার করছে। এক পর্যায়ে যখন বুঝতে পারছে যে, তারা আন্তর্জাতিক পর্নোগ্রাফি চক্রে জড়িয়ে পড়েছে তখন তাদের আর কিছুই করার থাকছে না। কাজেই এই বিষয়টি থেকে নিজেদের নিরাপদ রাখার ক্ষেত্রে সকলের সচেতনতাই সর্বোত্তম পন্থা। সামাজিক বিশ্লেষকদের মতে, মাদকাসক্তির মতো পর্নোগ্রাফিও একটা আসক্তি। অনেকে পর্নোগ্রাফিকে আধুনিক মাদক বলেও আখ্যায়িত করেন। প্রধানত নৈতিক শিক্ষার অভাবেই মানুষের পর্নোগ্রাফিতে আসক্তি বাড়ছে। এছাড়া অজানার প্রতি কৌতূহলও একটা বড় কারণ। পর্নোগ্রাফির রয়েছে সুদূরপ্রসারি নেতিবাচক প্রভাব। পর্নো আসক্ত বাক্তির সর্বাধিক ক্ষতি হয় শারীরিক। পর্নোগ্রাফির মাত্রাতিরিক্ত আসক্তির ফলে কাজে দীর্ঘ সময় মনোযোগ ধরে রাখতে না পারা, মেজাজ খিটখিটে হওয়া, রুক্ষ আচরণ, রাতে পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়া, স্মৃতিশক্তিলোপসহ নানা সমস্যা দেখা দেয়। এমনকি এক পর্যায়ে অনেকের মাঝে বিষণ্ন্নতা, হীনম্মন্যতা, আত্মবিশ্বাসের অভাব, চঞ্চলতা, উদ্দীপনা ও উদ্ভাবনী শক্তি লোপ পাওয়ার মতো বিভিন্ন লক্ষণও দেখা দেয়। সেই সঙ্গে তাদের সামাজিক, ধর্মীয় দিক দিয়ে বিচ্ছিন্ন ও আত্মামর্যাদাহীন হয়ে পড়তেও দেখা যায়।
যৌনতা প্রাণী জগতের খুবই স্বাভাবিক একটি বিষয়। প্রাণী জগতের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে সুস্থ ও স্বাভাবিক যৌন সম্পর্ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যুগ যুগ ধরে প্রচলিত সামাজিক ও ধর্মীয় রীতিতেও বৈধ যৌন সম্পর্কের বিষয়ে কোনোরূপ নিষেধ নেই। বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে এ বিষয়ে উৎসাহ প্রদান করা হয়। কিন্তু সমস্যাটা তখনই হয়, যখন তা পর্নোগ্রাফির মতো আসক্তির পর্যায়ে চলে যায়। সাধারণত পর্নোগ্রাফির ভয়াবহ পরিণতিতে সমাজে অশ্লীলতা, ধর্ষণ, নারী পাচারের মতো নানা অপরাধমূলক কর্মকান্ড বৃদ্ধি পায়। বিশেষত পর্নোগ্রাফির সহজলভ্যতা এবং সুস্থ বিনোদনের অভাবÑ পর্নোসাইট ব্যবহারকারী বা গ্রাহক বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। গবেষণায় উঠে এসেছে, মাদক গ্রহণের ফলে মানুষের মস্তিষ্ক থেকে যে ডোপামিন নির্গত হয়, ঠিক একই ডোপামিন পর্নোগ্রাফি দেখলে মস্তিষ্ক থেকে নির্গত হয়। ফলে ব্যক্তি পুনরায় একই কাজে লিপ্ত হয়ে নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। কাজেই দেশে পর্নোগ্রাফি বন্ধে সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ এখন সময়ের দাবি। তা না হলে না ভবিষ্যতে বিষয়টি মহামারীর মতো সমাজকে করালগ্রাসে আছন্ন করে ফেলতে পারে।
নীল ছবির আসক্তি
শীর্ষ সংবাদ: