একটি দেশের স্বাস্থ্য খাত মানুষের জীবনকে বেঁচে থাকার আলো দেখায় আবার মরণ যাত্রার এক ধাপকে এগিয়ে দেয়। এ ভিন্ন অলংকরণ তখনই প্রযোজ্য হয় যখন যেভাবে তা কাজ করে। কিন্তু বড় দুর্ভাগ্যের বিষয় আমরাই এই স্বাস্থ্যের খাতের প্রতি বেশি উদাসীন। আমরা কি খাবার খাচ্ছি, তা নিয়ে খুব সচেতন কিন্তু আমাদের শরীরে যে ড্রাগ অ্যাকুমুলেশন হচ্ছে এবং একপর্যায়ে তা বিষাক্ততা তৈরি করে কিডনি, লিভারের ক্ষতি করছে, তার দিকে খেয়াল করি না। আপনি পাঁচদিন খাবার না খান, সমস্যা নেই কিন্তু ওষুধ সেবনে দেহে যে সঞ্চিত ওষুুধের বিষাক্ততা আপনাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে, তা তো কল্পনাতীত। আর এই কাজটাই বেশি হয় আমাদের দেশে। স্বাস্থ্য খাতে আমাদের উন্নয়ন না হলেও এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স এর ক্ষেত্রে আমাদের উন্নয়ন হয়েছে। যেখানে উন্নত দেশের মানুষ ফার্স্ট জেনারেশনের অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করছে, সেখানে আমরা থার্ড কিংবা ফোর্থ জেনারেশনের এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করছি। এটা যে কত বড় আমাদের জন্য অশনিসংকেত, তা বলে শেষ করা যাবে না। এমন একটা সময় আসবে আমাদের দেশের জনগণের শরীরে কোনো অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করবে না। তখন সামান্য রোগেই আমরা মৃত্যুর দিকে ধাবিত হব। তার একটা উদাহরণ দেই। আমাদের দেশে একটি নবজাতক শিশু যে রকম এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স নিয়ে ভূমিষ্ঠ হয়, তা উন্নত দেশের বয়োজ্যেষ্ঠ অসুস্থ রোগীদের ক্ষেত্রেও তেমনটা দেখা যায় না । ভাবা যায়, আমাদের জীবন কোন দিকে যাচ্ছে।
এখন বিশ্লেষণে আসি, আমাদের দেশের স্বাস্থ্য খাতের মান এমন নাজুক কেন? দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত নিউজের প্রেক্ষিতে একটি উদাহরণ দেই। গত ৩ সেপ্টেম্বর স্বাস্থ্যব্যবস্থার বিষয়ভিত্তিক সংস্কার, চিকিৎসাসেবার গুণগত মানোন্নয়ন, কাঠামো শক্তিশালীকরণে ১২ সদস্যের বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে প্রজ্ঞাপন জারি করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। বড় আশ্চর্যের বিষয় হলো কোনো ফার্মাসিস্টকে ওই কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। ফার্মাসিস্ট ব্যতীত স্বাস্থ্য খাতের খুঁটি একেবারে নড়বড়ে হওয়া কি স্বাভাবিক নয়? একজন গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্ট শুধু ওষুধের উপরেই তার গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করে। তার একাডেমি জীবনের সবকিছু ওষুধকে ঘিরেই। বড় দুঃখের বিষয়, আমাদের দেশে স্বাস্থ্যখাতে ফার্মাসিস্টদের সুযোগ দেওয়া হয় না। যে দেশের ওষুধের মাত্রায় ঠিক রাখার উদ্যোগ নেয় না কর্তৃপক্ষ, সে দেশের স্বাস্থ্য খাতের প্রত্যাশিত উন্নয়ন কিভাবে সম্ভব?
আমাদের পূর্বসূরীরা অতীতে দেশের স্বাস্থ্য খাত নিয়ে কি ভেবেছেন বা করেছেন। তা আমাদের দেখার বিষয় নয়। আমরা নতুন প্রজন্ম, আমরা আমাদের প্রজন্মের জন্য প্রত্যাশিত স্বাস্থ্য খাত বিনির্মাণ করব। আমাদের তারুণ্য দীপ্তিকে সমর্পণ করব দেশের মানুষের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিতে। সেই দৃঢ় প্রতিজ্ঞায়, গত ৩১ সেপ্টেম্বর দৈনিক কালের কন্ঠে প্রকাশিত ‘গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্টদের কথা ভাবুন’ শিরোনামে আমার লেখাটি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মাননীয় স্বাস্থ্য উপদেষ্টাকে ইমেল করেছি। যদিও এখনো সাড়া পাইনি। তবে বিশ্বাস, তিনি অবগত হবেন। গত ১৩ই নভেম্বর মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানীর ৪৮তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে দুই উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ ও মাহফুজ আলম আমাদের ক্যাম্পাসে এসেছিলেন। তখন আমরা ঐ অনুষ্ঠানের একফাঁকে ‘হসপিটাল ফার্মেসি চালু ও স্বাস্থ্য খাত সংস্কার’ দাবিতে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর লিখিত এক স্মারকলিপি সভায় উপস্থিত উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের কাছে হস্তান্তর করেছি। একটু ভাবুন, আমরা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থী। আমরা যখনই বুঝতে পেরেছি, ক্রমাগত ওষুধের এমন অপব্যবহার কেমন ক্ষতি করছে মানুষের জীবনকে। আর এই মানুষের টাকায় আমরা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছি। আমরা আমাদের বিবেকের তাড়নায় প্রধান উপদেষ্টা ও স্বাস্থ্য উপদেষ্টার নজরে আনার জন্য ক্রমাগত চেষ্টা করছি। আমরা তরুণ প্রজন্মরা আমাদের স্থান থেকে সর্বোচ্চ সাধ্যমতো চেষ্টা করছি। এখন বাকিটা ভাবার বিষয় নীতিনির্ধারকদের। আমরা বিশ্বাস করি, বিদেশে নয় বরং স্বদেশের কল্যাণে কাজ করতে পারাটাই আসল সার্থকতা। এ দেশ যে আমার প্রিয় মাতৃভূমি। আমরা চাই দেশের স্বাস্থ্য খাতে আশানুরূপ উন্নয়ন হোক, তরুণ ফার্মাসিস্টরা স্বাস্থ্য উন্নয়নে সুযোগ পাক।
স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়ন ও প্রত্যাশা
শীর্ষ সংবাদ: