রাজধানী ঢাকায় ভোগান্তিহীন গণপরিবহনের দাবি দীর্ঘদিনের। উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল চালু হওয়ার পর এই রুটে যাত্রীদের ভোগান্তি কমেছে। অন্যান্য রুটে লক্কড়ঝক্কড় বাস সার্ভিসে যাত্রীদের ভোগান্তির পাশাপাশি রাস্তায় বিশৃঙ্খলা তৈরি হচ্ছে প্রতিনিয়ত। নগরীতে যানজটের অন্যতম কারণ অপরিকল্পিত বাস সার্ভিস। বিশে^র সকল শহরে পাবলিক ট্রান্সপোর্ট হিসেবে ট্যাক্সি ক্যাব থাকলেও স্বার্থান্বেষী মহলের কারসাজিতে বাংলাদেশে এই কৃষ্টি গড়ে ওঠেনি। সিএনজি অটোর স্বেচ্ছাচারিতায় যাত্রীদের জীবন অতিষ্ঠ। অতীতে নগরীর মেয়রগণ একাধিকবার চেষ্টা করেও রাজধানীর পাবলিক ট্রান্সপোর্টের কোনো পরিবর্তন আনতে পারেননি। লক্কড়ঝক্কড় বাস মালিকদের দাপটে প্রশাসন ছিল অসহায়। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বদলেছে পরিস্থিতি। বর্তমান সরকার রাষ্ট্রের নানা ক্ষেত্রে সংস্কার শুরু করেছে। সংস্কার কাজে হাত দিয়েছে রাজধানীর পরিবহন ব্যবস্থায়। সম্প্রতি রাজধানীর বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটির সভায় নগরীর গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফেরানোর গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।
বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ঢাকা মহানগরীতে আর বিভিন্ন নামের বাস থাকবে না। বাসগুলোর নাম হবে ‘নগর পরিবহন’। ঢাকার ভেতরে ৩৪টি এবং ঢাকার বাইরে শহরতলি পরিবহন নামে ৮টিসহ মোট ৪২টি রুটে চলবে নগর পরিবহন। এগুলোর গায়ে রুটের নাম ও নম্বর থাকবে। সব বাস থামতে হবে নির্দিষ্ট স্টপেজে, থাকবে টিকেটিং ব্যবস্থা। ক্রমান্বয়ে প্রি-পেইড কার্ডও ইস্যু করা হবে। এই ব্যবস্থায় বাসগুলো যত্রতত্র যাত্রী ওঠানামা করাতে পারবে না। নগর পরিবহনে যুক্ত হলেই কেবল রাজধানীতে চলতে পারবে যাত্রীবাহী বাস। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রশাসক ও কমিটির সভাপতি নজরুল ইসলাম জানান, রাজধানীতে গণপরিবহন পরিচালনার জন্য নগর পরিবহনের আওতায় আসতে আবেদন করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। এখন পর্যন্ত ৮০টি বাস কোম্পানি আবেদন করেছে। আগামী ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত কোম্পানিগুলো আবেদন করতে পারবে। তিনি আরও জানিয়েছেন, রেশনালাইজেশন কমিটি আপাতত এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিজনেস মডেল ও বাসগুলো কিভাবে চলবেÑ তার রূপরেখা তৈরির জন্য আরও একটি কমিটি করা হবে। আগামী ১১ ডিসেম্বর আবার রেশনালাইজেশন কমিটি বৈঠকে বসবে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, নগর পরিবহনের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার যে সুযোগ তৈরি হয়েছে, তাতে বাস মালিকরা সহযোগিতা করবেন। রাজধানীতে চালু হবে আরামদায়ক ট্রান্সপোর্টেশন সিস্টেম।
২০১৬ সালে ছয়টি কোম্পানির অধীনে ছয় রঙের বাস নামানোর উদ্যোগ নিয়েছিলেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের তৎকালীন মেয়র আনিসুল হক। ২০১৭ সালে তার মৃত্যুর পর থেমে যায় প্রকল্পটি। ২০২০ সালে বাস রুট রেশনালাইজেশন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রাথমিকভাবে ৯টি ভিন্ন ভিন্ন রঙের ২২টি কোম্পানি ও ৪২টি রুটের প্রস্তাব করা হয়েছিল। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে যাত্রা শুরু করেছিল ঢাকা নগর পরিবহন। পরিকল্পনা ছিল ধীরে ধীরে পুরো রাজধানীর গণপরিবহন ব্যবস্থাকে একটি কোম্পানির আওতায় আনা। তিন বছর পেরিয়ে গেলেও এ পরিকল্পনা আলোর মুখ দেখেনি। মাঝে কয়েকটি রুটে বাস চললেও এখন তা বন্ধ রয়েছে। ডিটিসির তথ্য অনুযায়ী, ঢাকায় নগর পরিবহন চলাচল শুরুর সময় বাস রুট ছিল ১১০টি। পরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১২০টি। বর্তমানে ঢাকায় প্রায় ১৩০টি রুটে বাস চলাচল করছে। এখন রুট কমিয়ে আনা হলে দাঁড়াবে ৪২টি।
অপরিকল্পিত সড়ক ব্যবস্থাপনায় রাজধানীর অসহনীয় যানজটে মানুষের ভোগান্তি দীর্ঘদিনের। এ নিয়ে অতীতে সংশ্লিষ্ট বিভাগের তেমন কোনো মাথাব্যথা লক্ষ্য করা যায়নি। তখন সিটি করপোরেশন কিংবা ট্রাফিক বিভাগের কর্মকর্তাগণ যানজটের নানা কারণ ব্যাখ্যা করতেন। এসব ব্যাখ্যার বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশেষজ্ঞরা। শেষের দিকে আর কোনো ব্যাখ্যা দেওয়ারও প্রয়োজন মনে করেননি তারা। ভাবখানা এমন ছিল ‘যেমন চলছে চলুক’। সময় সময় ভিআইপি চলাচল নির্বিঘ্ন করতে পারলেই দায়িত্ব শেষ। তারপর যা হয়, হতে থাক। রাস্তায় ট্রাফিক পুলিশ ছিল প্রচুর। তারা সবসময় ব্যস্ততার মধ্যেই সময় কাটিয়েছেন। অনেক স্থানে তাদের গলদঘর্ম হতে দেখা গেছে। স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক সিগন্যালের পরিবর্তে কী কারণে নিজেরা এই দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন, তারাই ভালো বলতে পারবেন। এ নিয়ে একাধিকবার ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, ঢাকা মহানগরীর রাস্তায় গাড়ির ঘনত্ব অনেক বেশি। সময় ভেদে গাড়ির চাপ কম বা বেশি থাকে। এসব কারণে নাকি ট্রাফিক সিগন্যাল চালু করা সম্ভব হয় না। বিশেষজ্ঞরা এই যুক্তি উড়িয়ে দিয়ে বলেছেন, বিশে^র সকল নগরীতেই সময়ভেদে গাড়ির চাপ কমবেশি থাকে। ঢাকার চেয়ে গাড়ির সংখ্যা সকল উন্নত শহরেই বেশি। গাড়ির চাপ সামলাতেই প্রয়োজন হয় আধুনিক ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা। উন্নত শহরগুলোতে রাস্তায় ট্রাফিক পুলিশ দেখাই যায় না। কন্ট্রোল রুমে বসে তারা ট্রাফিক সিগন্যাল নিয়ন্ত্রণ করেন। আমাদের ট্রাফিক পুলিশকে কেন রাস্তায় গলদঘর্ম হতে হবে?
এক সময় যানজটের জন্য প্রায় অচল হওয়ার উপক্রম হয়েছিল প্রতিবেশী পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতা। দীর্ঘ সময় কলকাতা যানজটের নগরী হিসেবে তালিকার শীর্ষে ছিল। গত কয়েক বছরে কলকাতার ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় আমূল পরবর্তন হয়েছে। ট্রাফিক সিগন্যালেই সেখানে নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে যানবাহন। তাহলে কি কলকাতার ট্রাফিক দিন দিন কমে যাচ্ছে? বর্তমানে বিশে^র এক নম্বর যানজটের শহরের তালিকায় কলকাতাকে ছাড়িয়ে স্থান করে নিয়েছে ঢাকা। ট্রাফিক বিভাগের কাছে এসব উদাহরণ ও যুক্তি কী কারণে উপেক্ষিত কেউ জানে না। কয়েক বছর আগে সিটি করপোরেশন থেকে বলা হয়েছিল, অবকাঠামো নির্মাণ করে দেওয়া সিটি করপোরেশনের দায়িত্ব। করপোরেশন তা করে দিচ্ছে। ট্রাফিক বিভাগের সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ডিভাইডার, রাস্তার ট্রাফিক সিগন্যাল ইত্যাদি সিটি করপোরেশন থেকে করা হচ্ছে। কয়েক বছর আগে কোটি কোটি টাকা খরচ করে রাস্তায় ট্রাফিক সিগন্যালিং ব্যবস্থা চালু করা হয়েছিল। এগুলো এখন পড়ে আছে অব্যবহৃত। লাল-সবুজ-হলুদ লাইটগুলো জ্বলছে আর নিভছে। খরচ করছে সরকারের বিদ্যুৎ। বেশিরভাগই অচল হয়ে গেছে। ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে প্রাণান্ত খেটে যাচ্ছেন ট্রাফিক সার্জেন্ট কিংবা পুলিশ। কাজের কাজ হচ্ছে না কিছুই।
ব্যক্তির সিদ্ধান্তে মেন্যুয়েল পদ্ধতিতে ট্রাফিক আইন পরিচালনার পাশাপাশি রাজধানীর যানজটের আরও একটি অন্যতম কারণ সড়কের নৈরাজ্য। এই নৈরাজ্যে মুখ্য ভূমিকা পালন করছে যাত্রীবাহী বাস। রাস্তার যেখানে-সেখানে বাসগুলো থেমে যাত্রী ওঠাচ্ছে-নামাচ্ছে। যাত্রী ওঠানোর প্রতিযোগিতায় বাস থামিয়ে রাখা হচ্ছে রাস্তার মাঝখানে। এরপর শুরু হয় আগে যাওয়ার প্রতিযোগিতা। রাস্তায় বাসের এমন চলাচলে মনে হয় না বাস চালকরা আইন-কানুনের কোনো তোয়াক্কা করেন। এতে শুধু যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে এমন নয়, প্রতিদিনই দুর্ঘটনায় প্রাণ হারাচ্ছে যাত্রী কিংবা পথচারী। ২০/২৫ মিনিট অন্যায়ভাবে আটকে থাকার পর একটি গাড়ি আর কোনো আইনেরই তোয়াক্কা করে না। অনেক ড্রাইভারকে বলতে শুনেছি, ট্রাফিক কর্মকর্তা নিজেই যখন আইন ভেঙে এতক্ষণ গাড়ি আটকে রাখেন, তখন আইন মানতে আমাদের আর দায় কি? যাত্রীবাহী বাসের এই প্রতিযোগিতা থামানো এবং যাত্রীসেবার মান বাড়াতে এবার নেওয়া হয়েছে বড় ধরনের উদ্যোগ। ৪২টি রুটে চলবে একটি মাত্র কোম্পানির বাস। কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হলে বাসগুলোর বিপজ্জনক প্রতিযোগিতা থাকবে না। যাত্রীরা পাবেন আরামদায়ক যাতায়াত ব্যবস্থা।
যানজটের আরও একটি উল্লেখযোগ্য কারণ হচ্ছে, শহরে পার্কিং স্বল্পতা। প্রতিদিন বাড়ছে গাড়ি। সেভাবে তৈরি হচ্ছে না অবকাঠামো। পার্কিং ব্যবস্থা গড়ে তোলার দিকে সিটি করপোরেশন কিংবা অন্য কোনো সংস্থার কোনো উদ্যোগ নেই। রাস্তায় গাড়ি বের হলে কোথাও না কোথাও থামতেই হবে। পার্কিং না পেলে গাড়িটিকে রাস্তার ওপরই দাঁড়িয়ে থাকতে হবে। এ জন্য কখনো মামলা বা জরিমানা গুনতে হলেও করার কিছু নেই। নগরীতে পার্কিং নির্মাণের দাবি দীর্ঘদিনের। পার্কিং নির্মাণের জন্য এত খালি জায়গাও পাওয়া কঠিন। এজন্য বিশেষজ্ঞরা বহুতল পার্কিং নির্মাণের কথা বলে আসছেন। বাণিজ্যিক এলাকা মতিঝিলে দু’একটি নির্মিতও হয়েছে। চাহিদার তুলনায় তা খুব কম। নগরীর সকল এলাকায় সরকারি বা বেসরকারি উদ্যোগে এমন অনেক বহুতল পার্কিং নির্মাণ জরুরি হয়ে পড়েছে।
পার্কিং সমস্যার অনেকটা সমাধান এবং সড়কে প্রাইভেট গাড়ির চাপ কমাতে পারে সুষ্ঠু গণপরিবহন ব্যবস্থা। রাজধানী ঢাকায় বসবাস করছে প্রায় দুই কোটি মানুষ। বিশ্বের সকল বড় শহরে গণপরিবহনের প্রতি বিশেষ নজর দেওয়া হয়। আমাদের দেশে এটি গুরুত্বহীন একটি খাত। বিআরটিসির কিছু বাস রাস্তায় দিয়েই সরকারের দায়িত্ব শেষ। বড় শহরগুলোতে যাত্রীদের জন্য থাকে অনেক বিকল্প ব্যবস্থা। প্রধান গণপরিবহন পাতাল রেলের পাশাপাশি রাস্তায় থাকে বাস। এগুলো পরিচালনা করে সরকার কিংবা প্রাইভেট কোম্পানি। প্রি-পেইড টিকেট কিংবা বাসে উঠে ড্রাইভারের কাছে ভাড়া মিটিয়ে এসব বাসে চলাচল করা যায়। এর বাইরে বিকল্প হিসেবে থাকে ট্যাক্সি সার্ভিস। ঢাকায় বাস সার্ভিসের দুরবস্থায়ও ট্যাক্সির কৃষ্টি গড়ে ওঠেনি। ২০০৩ সালে একবার চেষ্টা করা হয়েছিল। কিছু হলুদ (শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত) এবং কিছু কালো ট্যাক্সি রাস্তায় নামানো হয়। ভারতে তৈরি নিম্নমানের গাড়ি দিয়ে শুরু করা এসব ট্যাক্সি খুব অল্প সময়ের মধ্যেই অকেজো হয়ে পড়ে। নতুন করে আর কোনো ট্যাক্সির অনুমোদন দেওয়া হয়নি। আরও পরে সরকার দুটি প্রতিষ্ঠানকে খুবই অল্প কয়েকটি ট্যাক্সির অনুমোদন দিয়েছিল। সেসব কিছুদিন রাস্তায় চলেছে। গাড়ি স্বল্পতা এবং অত্যধিক ভাড়ার কারণে যাত্রীরা আর ট্যাক্সি সার্ভিসে অভ্যস্ত হওয়ার সুযোগ পায়নি। পরে আর সরকার ট্যাক্সির বিষয়টি নিয়ে কখনো মাথা ঘামায়নি। বিশ্বের কোনো রাজধানী শহরে ট্যাক্সি সার্ভিস নেই, এটি কল্পনাই করা যায় না। অজ্ঞাত কারণে আমাদের রয়েছে ট্যাক্সিবিরোধী নীতি। রাস্তায় প্রয়োজন মতো ট্যাক্সি পাওয়া গেলে পার্কিং সমস্যা এড়াতে অনেকেই ট্যাক্সির ওপর নির্ভরশীল হতো। হ্রাস পেত রাস্তায় পরিবহনের সংখ্যা।
অনেক ক্ষেত্রে রাস্তা বা ফুটপাতে অবৈধ দোকানপাট যানজটের সৃষ্টি করছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, গুলিস্তানের হকারদের কারণে যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভারের সুফল অনেকটাই ম্লান হয়ে গেছে। যাত্রাবাড়ী থেকে একটি গাড়ি ফ্লাইওভারে উঠে কয়েক মিনিটে গুলিস্তান এলাকায় পৌঁছেও হকার সৃষ্ট যানজটে আটকে থাকতে হচ্ছে দীর্ঘ সময়। অতীতে অনেকবার অভিযান পরিচালনা করা হলেও এইসব এলাকা ২৪ ঘণ্টার বেশি হকারমুক্ত থাকেনি। হকারদের নেটওয়ার্ক এতটাই শক্তিশালী যে, প্রশাসন এখন হাল ছেড়ে দিয়েছে। ঢাকার দুই সিটি, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর সিটি করপোরেশন এবং সাভার ও কেরানীগঞ্জ নিয়ে তৈরি হয়েছে মেগা সিটি ঢাকা। বিশাল এই সিটির যানবাহন চলাচল ব্যবস্থায় তেমন কোনো পরিকল্পনাই দৃষ্টিগোচর হয় না। রাজধানীর যানজট নিরসনে সরাসরি জড়িত অন্তত এক ডজন সংস্থা। এসব সংস্থার মধ্যে কোনো সমন্বয় নেই। যে যার মতো করে চালাচ্ছে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড। একটি সংস্থা কাজ শেষ করার ছয় মাসের মাথায় আরেকটি সংস্থা কাজ শুরু করছে। এভাবে রাস্তা কাটা হচ্ছে বারবার। নাগরিকদের ভোগান্তি আর শেষ হচ্ছে না।
বড় প্রকল্পগুলোতেও রয়েছে পরিকল্পনার অভাব। বিশেজ্ঞদের মতে, সড়কে আরও একটি ক্যান্সার তৈরি হচ্ছে বিমানবন্দর থেকে গাজীপুর পর্যন্ত রাস্তায়। এক যুগ ধরে যাত্রীদের কষ্ট দিচ্ছে বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) নামক প্রকল্প। বিমানবন্দর থেকে বিআরটি চালু হলে এই গুরুত্বপূর্ণ সড়কে মানুষের ভোগান্তি আরও বাড়বে। এর কারণ, বিআরটির জন্য নির্ধারিত রাস্তার মাঝখানের দুটি লেনে আর কোনো যানবাহন উঠতে পারবে না। সেক্ষেত্রে রাস্তার প্রস্থ কমে যাবে। স্বল্প প্রস্থের এই রাস্তা ধরেই চলতে হবে যাত্রীবাহী বাস, পণ্য পরিবহনের ট্রাক-লরি, প্রাইভেটকারসহ স্বল্প গতির যানবাহন। শুধু বিআরটির যাত্রীরা দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছতে পারলেও বাকি সকল যাত্রীর ভোগান্তি হবে অকল্পনীয়। এছাড়া গাজীপুর থেকে রাজধানীগামী একজন যাত্রীকে বিআরটি পৌঁছে দেবে বিমানবন্দর পর্যন্ত। ওখান থেকে রাজধানীতে ঢুকতে হবে সাধারণ গণপরিবহনে। স্বাভাবিকভাবেই যাদের সামর্থ্য রয়েছে, তারা গণপরিবহনের এই ভোগান্তিতে যাবে না। গাড়িতে করেই তারা ঢাকা-গাজীপুর চলাচল করবে। এর সঙ্গে যুক্ত হবে ময়মনসিংহ, জামালপুর, নেত্রকোনাসহ বিস্তীর্ণ এলাকার যানাবাহন। ফলে, রাস্তায় গাড়ির সংখ্যা কমার কোনো সম্ভাবনা নেই।
নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী রাজধানীর ৪২ রুটে একটি কোম্পানির বাস চলাচল করলে, এর নিয়ন্ত্রণ যাবে একটি কর্তৃপক্ষের হাতে। ফলে, স্বাভাবিকভাবেই রাস্তায় বাসের বিশৃঙ্খলা থাকার কথা নয়। এর পাশাপাশি ফুটপাত দখলমুক্ত করা, রাস্তা থেকে অবৈধ হকার উচ্ছেদ, পর্যাপ্ত কার পার্কিং ব্যবস্থা, আধুনিক ট্যাক্সি ক্যাব সার্ভিস চালু, অটো সিগন্যালিং ব্যবস্থা এবং গোটা ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা একটি কর্তৃপক্ষের অধীনে ন্যস্ত করতে পারলে রাজধানী ঢাকা, বন্দরনগরী চট্টগ্রামসহ বড় শহরগুলোর দুঃসহ যানজট নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে।
লেখক : নির্বাহী সম্পাদক, জনকণ্ঠ
গণপরিবহনে শৃঙ্খলার গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ
শীর্ষ সংবাদ: