ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ২ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

বাড়ছে সারের দাম

প্রকাশিত: ১৯:৪৬, ১৬ নভেম্বর ২০২৪

বাড়ছে সারের দাম

দেশে এবারে বর্ষা মৌসুমের বাইরেও প্রলম্বিত সময়ে অতি বৃষ্টি ও বন্যায় আমনের উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর পাশাপাশি বিঘ্নিত হয়েছে শাক-সবজি ও ফলমূলের আবাদ। নিত্যপণ্যের বাজারে এর  নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। চাল থেকে শুরু করে প্রায় সব পণ্যের দাম বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। বাজার পরিস্থিতি সামাল দিতে এবং সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ কমাতে অন্তর্বর্তী সরকার ইতোমধ্যে চাল-গমসহ কয়েকটি নিত্যপণ্য আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অনেক পণ্যের আমদানি শুল্ক কমানোসহ কিছু ক্ষেত্রে দেওয়া হয়েছে ব্যাংকিং সুবিধাও। এরপরেও অনেক ক্ষেত্রে আমদানিকারকদের তেমন আগ্রহ পরিলক্ষিত হচ্ছে না। যেমনÑ দাম বৃদ্ধির লাগাম টেনে ধরতে চাল আমদানিতে শুল্ক প্রত্যাহার করা হলেও আমদানিকারকরা তেমন আগ্রহ দেখাচ্ছেন না নানা অজুহাতে। এমতাবস্থায় সরকারকে সমধিক গুরুত্বারোপ করতে হবে আগামী বোরো ও রবিশস্যের মৌসুমকে সামনে রেখে উৎপাদন বাড়াতে কৃষকের কাছে ভর্তুকি মূল্যে সব রকমের সার পৌঁছে দেওয়া। এর পাশাপাশি উন্নতমানের বীজ, সেচ সুবিধা, ডিজেল প্রাপ্তি, কীটনাশক, বিদ্যুৎ ইত্যাদিও সহজলভ্য করা।
তবে বর্তমানে সারের বাজারে তেমন কোনো সুসংবাদ নেই বললেই চলে। ইতোমধ্যে বাজারে প্রায় সব রকম সারের দাম বেড়েছে, কোনো কোনোটি প্রায় দ্বিগুণ। অনেকক্ষেত্রে ডিলারের কাছে পর্যাপ্ত সারও পাওয়া যায় না বলে কৃষকের অভিযোগ রয়েছে। কৃষকের ভাষ্য, ডিলারদের দোকানে সারের সরকারি মূল্য তালিকা টাঙানো থাকলেও কোথাও এ দামে সার পাওয়া যায় না। এমনকি দেশে উৎপাদিত টিএসপি সারের দাম বর্তমানে প্রায় দ্বিগুণ। বর্তমান সরকার নির্ধারিত সারের দামÑ ইউরিয়া ও টিএসপি ৫০ কেজির প্রতি বস্তা ১ হাজার ৩৫০ টাকা এবং এমওপি ১ হাজার টাকা। বেশি দামের পাশাপাশি দেশীয় টিএসপি, ইউরিয়া এবং এমওপি সার ন্যায্য দামে না পাওয়ায়, অনেক ক্ষেত্রে কৃষক বাধ্য হয়ে বিএডিসির মাধ্যমে আমদানিকৃত সার ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছে। তবে এক্ষেত্রে ফলনে কাক্সিক্ষত সুফল পাওয়া যায় না। আশার কথা এই যে, সরকার খাদ্য পণ্য আমদানির পাশাপাশি সার আমদানি করারও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। এখন যেটি দরকার তাহলো কৃষকের কাছে চাহিদামতো যথাসময়ে ন্যায্য মূল্যে সার পৌঁছে দেওয়া।
ইতোপূর্বে সাবেক সরকার তথা কৃষি মন্ত্রণালয় সবরকম সারের দাম বাড়িয়েছে। সাবেক কৃষিমন্ত্রী স্বীকার করেছেন, দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা, ডলারের দাম, আন্তর্জাতিক বাজারে সারের দামসহ বিপুল ভর্তুকি বিবেচনায় নিয়ে দাম বাড়ানোর বিকল্প ছিল না। উল্লেখ্য,  গত তিন বছর ধরে সারের দাম বাড়ছে আন্তর্জাতিক বাজারে। কৃষককে ধারদেনা, স্ত্রীর গহনা, গরু ও সম্পদ বিক্রি করে সার কিনতে হয়। ফলে, সারের দাম বাড়ায় তারা কিছুটা হলেও চাপে পড়েন। এও সত্য যে, কিছু কৃষক প্রয়োজনের চেয়ে বেশি সার ব্যবহার করেন বিশেষ করে ইউরিয়া। তাতে জমি ও ফসলের ক্ষতি হয়। সে ক্ষেত্রে পরিমিত পরিমাণে ইউরিয়া সারের ব্যবহার হলে কৃষকের উৎপাদন খরচ কমে আসবে। এর পাশাপাশি কৃষকের কাছে ন্যায্য দামে সবরকম সারপ্রাপ্তি নিশ্চিত করা বাঞ্ছনীয়।

×