ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ২ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

আদালতের মানবিক নির্দেশ

প্রকাশিত: ১৯:৪৪, ১৬ নভেম্বর ২০২৪

আদালতের মানবিক নির্দেশ

গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার চিত্রাপাড়া গ্রামের জামাল মিয়া পেশায় দিনমজুর। তার প্রথম সন্তান সাজ্জাদ মিয়া সপ্তম শ্রেণির ছাত্র। দ্বিতীয় সন্তান ফারিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণির ছাত্রী। এ ছাড়া এক মাস বয়সী দুটি কন্যাসন্তানও রয়েছে তার। উল্লেখ্য, যমজ দুই কন্যাশিশুর জন্মের এক সপ্তাহের মাথায় মায়ের মৃত্যু ঘটে। স্ত্রীর মৃত্যুর পর সদ্য জন্ম নেওয়া দুগ্ধপোষ্য দুই কন্যাসহ চার সন্তান ও বৃদ্ধা মায়ের দেখাশোনা জামালই করতেন। কিন্তু কয়েকদিন পরই এক হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে তাকে চলে  যেতে হয় কারাগারে। গত ৮ নভেম্বর দিবাগত রাতে কোটালীপাড়া থানা-পুলিশ জামাল মিয়াকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যায় এবং গোপালগঞ্জ সদর থানায় হস্তান্তর করে। পরবর্তীতে ৯ নভেম্বর গোপালগঞ্জ সদর থানা পুলিশ তাকে স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির ক্রীড়া সম্পাদক শওকত আলী দিদার হত্যা মামলায় সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠায়। যদিও পরিবারের পক্ষ থেকে তাকে নির্দোষ বলে দাবি করা হয়।
গ্রেপ্তারের পর জামাল মিয়ার অনুপস্থিতিতে সন্তানরা ঘরে খাবার সংকটে দিনাতিপাত করছে অনেক কষ্টে। বিশেষ করে নবজাতক দুই শিশুর অবস্থা সবচেয়ে বেশি শোচনীয়। গণমাধ্যমে প্রকাশিত এমন সংবাদ আদালতের নজরে আনেন কয়েকজন আইনজীবী। পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন দেখে স্বপ্রণোদিত হয়ে ওই শিশুদের খাবারদাবার ও সামগ্রিক দেখভালের বিষয়ে গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসকসহ সমাজসেবা কার্যালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চ। সেই সঙ্গে গোপালগঞ্জের আলোচিত চার শিশুর দিনমজুর বাবা জামাল মিয়াকে জামিন দিয়েছেন আদালত। মানবিক দিক থেকে তাকে জামিন দেওয়া হয়েছে। এতে ওই চার শিশু সন্তানও ফিরে পেয়েছে তার বাবাকে।
পৃথিবীতে এমন কোনো দেশ নেই যেখানে চুরি-ডাকাতি-প্রতারণার পাশাপাশি খুন-ধর্ষণ-রাহাজানি-লুটপাট ইত্যাদির মতো অপরাধ সংঘটিত হয় না। সমাজে অপরাধ প্রবণতা হ্রাস ও শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বিচারব্যবস্থা। অপরাধ দমন বিশেষজ্ঞ ও আইনবিদদের মতে, অপরাধপ্রবণতা দূরীকরণে অপরাধীকে শাস্তির কঠোরতা নয়, বরং সংশোধনের উত্তম সুযোগ দেওয়া জরুরি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পর দেশব্যাপী হত্যাকাণ্ডসহ নানা অপরাধে মামলা হচ্ছে। এসবের মধ্যে সুনির্দিষ্ট তথ্যপ্রমাণহীন মামলাও রয়েছে অসংখ্য, যেগুলো নিয়ে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। তবে ইতোমধ্যে কাউকে হয়রানির জন্য মিথ্যা মামলা দায়ের করলে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সেই সঙ্গে তদন্তে কোনো আসামির সম্পৃক্ততা পাওয়া না গেলে মামলা থেকে তার নাম প্রত্যাহারের ব্যবস্থা নিতে বলেছে পুলিশ সদর দপ্তর। যাচাই-বাছাই না করে মিথ্যা বা ভুয়া মামলা দিয়ে নিরপরাধ মানুষকে হয়রানি না করার অনুরোধ এসেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকেও, যা ইতিবাচক। এমতাবস্থায় সম্প্রতি মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে আদালত  কর্তৃক গোপালগঞ্জের জামাল মিয়ার জামিনের আদেশটি নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। এমন নির্দেশ বিচার বিভাগের প্রতি দেশের মানুষের আস্থা বাড়াতে সহায়ক হবে বলেই প্রত্যাশা।

×