ওয়ার্ল্ড ট্রাফিক ইনডেক্স -২০২৩ অনুযায়ী যানজটের দিক থেকে বিশ্বের মধ্যে পঞ্চম স্থানে রয়েছে রাজধানী ঢাকা। ২০১৯ এর ইনডেক্স অনুযায়ী, ঢাকা শীর্ষ স্থান অর্জন করেছিল যানজটের শহর হিসেবে। এই যানজটের কারণ গুলোর মধ্যে অন্যতম প্রধান কারণ ফুটপাত থেকে শুরু করে রাস্তার মাঝামাঝি পর্যন্ত হকার ব্যবসা ও গাড়ি পার্কিং এর মাধ্যমে রাস্তা দখল করা। যে রাস্তায় চলবে গাড়ি, মানুষ পৌঁছাবে তার গন্তব্যস্থলে ;সেই রাস্তাগুলো দখলে চলে গেছে অব্যবস্থাপনার অবৈধ নিয়মের বেড়াজালে। এখানে অব্যবস্থাপনায়ই যেন হয়ে গেছে নিত্যদিনের নিয়ম। দখলকৃত ফুটপাত (যা মানুষের হেঁটে চলাচলের উদ্দেশ্যে তৈরি) তা এখন হকারদের দখলে।মানুষের চলাচলের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে তারা গড়ে তুলেছে ব্যবসার স্থান। যেখানে চলে খাবারের ব্যবসা - পোশাকের ব্যবসা সহ নিত্যদিনের ব্যবহার্য সামগ্রীর ব্যবসা। সেখানে নেই কোনো শৃঙ্খলা- নেই কোনো নিয়ম-নীতি। হকারদের ইচ্ছা - স্বাধীনতা নষ্ট করছে সাধারণ মানুষদের মূল্যবান সময়। এছাড়াও এটি খুব খারাপভাবে পরিলক্ষিত হচ্ছে যে, রাস্তার প্রায় মাঝামাঝি জায়গা জুড়ে গাড়ি পার্কিং। গাড়িগুলো পার্কিংয়ের উদ্দেশ্য থাকে যাত্রী ধরা, সাথে এমনটিও দেখা যায় যে, ব্যক্তিগত গাড়িগুলো গাড়ি পার্কিংয়ের নিষিদ্ধ স্থানে (রাস্তার প্রায় মাঝামাঝি জায়গা) দাঁড় করিয়ে ব্যক্তিগত প্রয়োজনীয়তা সেরে নেওয়া।পাশাপাশি লোকাল বাস চালকদের যাত্রী ধরার প্রতিযোগিতা যেমনই মূল্যবান সময়ের জন্য হুমকি, তেমনই এই প্রতিযোগিতা জীবননাশের ক্ষেত্রেও হুমকিস্বরূপ। বাস স্টপেজের জন্য নির্দিষ্ট স্থান তো ব্যবহৃত হয়ই না। বরং ব্যস্ত রাস্তার মাঝ বরাবর আড়াআড়িভাবে গাড়ি দাঁড় করানো হয় যাত্রী ধরার প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে। অনিয়মের শীর্ষে থাকা ঢাকা শহর যা কিনা বাংলাদেশের রাজধানী;সেখানে অনিয়মকে শুধুই মুখ বুঁজে সহ্য করে, নানা অজুহাত দেখিয়ে প্রশ্রয় দেওয়ার কাজ চলমান।
এখনই সময় পরিবর্তনের। এখন সম্ভব না হলে কখনোই সম্ভব নয়। এর জন্য দরকার কঠোর ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ আইন।যা আমাদের মূল্যবান সময় ক্ষেপণের বিপরীতে গিয়ে কাজ করবে। অনিয়ম থেকে রক্ষা করবে দেশকে, দেশের জনগণকে।উচ্ছেদকৃত হকারদের ব্যবসার বিকল্প স্থান হিসেবে ব্যস্ত রাস্তার পরিবর্তে নির্ধারিত স্থান নির্বাচন করতে হবে। রাস্তার পাশে বা মাঝামাঝি কিংবা যেখানে সেখানে গাড়ি পার্কিং কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করতে হবে, সাথে আইনের প্রয়োগও করতে হবে।বেপরোয়া গাড়িচালকদের আইনের আওতায় নিয়ে শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। এসব সমাধানের দিকে না তাকিয়ে শুধু মাথা পেতে সহ্য করে যাওয়া কখনোই ভালো ফল দেবে না, বরং দেশ কঠিন পরিস্থিতি সম্মুখীন হবে। জনগণ নিয়েই দেশ আর সেখানে সাধারণ মানুষের মূল্যবান সময় অপ্রত্যাশিত হুমকির মুখোমুখি হলে দেশের উন্নয়ন আদতে সম্ভব নয়;বরং উন্নয়নের রোড ম্যাপের বাস্তবিক ফলাফল তলানিতে জমবে।কারণ,যানজটে বসে থেকে মানুষের দ্বারা দেশের উৎপাদনশীলতা বাড়বে না। যদিও মেট্রোরেল কিছুটা সমাধান নিয়ে এসেছে, তবুও তা অতি কিঞ্চিৎ এবং রাজধানীর সব এলাকার জন্য পর্যাপ্ত নয়। এই যানজট মানুষের মূল্যবান সময় খেয়ে ফেলার সাথে মানসিক স্বাস্থ্যকেও ভীষণভাবে প্রভাবিত করে। কিছুটা হলেও বলা যায়,অতিরিক্ত যানজট মেধা পাচারকেও উদ্বুদ্ধ করে। সুতরাং এর সমাধানের পন্থা খোঁজা,কঠোর ট্রাফিক আইন প্রয়োগ করা এবং নিজ নিজ জায়গা থেকে সচেতন থাকা এই মুহূর্ত থেকেই দরকার।
শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়