একটা সময় ছিল, যখন তীব্র যানজটের মধ্যে পেছন থেকে হুইসেলের শব্দ কানে ভেসে এলে সবাই নিজ দায়িত্বে গাড়িটিকে সাইড দিয়ে তাড়াতাড়ি যাওয়ার সুযোগ করে দিতেন। সময়ের পরিবর্তন হয়েছে। মানুষ পাল্টে গেছে। এখন যত উচ্চশব্দেই হুইসেল বাজুক না কেন, কেউ জায়গা করে দিতে চান না। সবাই সন্দেহের নজরে চোখ বড় করে তাকায়। কিন্তু কেন এই পরিবর্তন ঘটল? মানুষই বা কেন সন্দেহের নজরে তাকাতে শুরু করল?
সাধারণত অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিস কিংবা অন্যান্য জরুরি পরিষেবার কাজে নিয়োজিত যানবাহনগুলো ইমারজেন্সি সাইরেন বাজিয়ে থাকেন। কিন্তু বর্তমান চিত্র একটু ব্যতিক্রম। অ্যাম্বুলেন্সে রোগী না থাকলেও কিংবা জরুরি কোনো তাড়া না থাকার পরেও রাস্তায় সবার আগে যাওয়ার প্রতিযোগিতায় মত্ত হয়ে অযথাই ইমারজেন্সি হুইসেল বাজিয়ে থাকেন চালকরা। রোগী না থাকলেও সাধারণ যাত্রী পরিবহনকালীন সময়ে উচ্চ শব্দে এসব সাইরেন বাজিয়ে দাপিয়ে চলে বেড়ায় অ্যাম্বুলেন্স। এসব দৃশ্য যখন সাধারণ মানুষের চোখে একের পর এক ধরা পড়ছে, ঠিক তখন বিশ্বাস নষ্ট হচ্ছে। শুধু তাই নয়, ভিআইপি গাড়ি, সচিব বা সরকারি কর্মকর্তাদের গাড়ি, ফ্যামিলির সদস্যদের বহনের সময় বা ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহারের সময়ও হর্ন বাজিয়ে থাকেন। এতে সাইড দেওয়া তো দূরে থাক, উল্টো মানুষ বিরক্ত বোধ করেন। ইদানীং মোটরসাইকেলেও ইমার্জেন্সি হর্ন হুটার ব্যবহার লক্ষ্য করা যাচ্ছে। মাইক্রো, প্রাইভেট কারে ‘পুলিশ’ ‘আইনজীবী’ ‘ডাক্তার’ ইত্যাদি স্টিকারের ভিড়ে সাধারণ যাত্রী খুঁজে পাওয়া মুশকিল হয়ে যায়। সবাই ভিআইপি, সবাই গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব, সবাই হুটার বাজায়, কাকে রেখে কাকে সাইড দেবে! ট্রাফিক পুলিশও নিশ্চয় মাঝে মাঝে বিড়ম্বনায় পড়ে যায়! ২০১৮ সালের সড়ক পরিবহন আইনের ৮৪ ধারায় মোটরযানের নির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কোনো ধরনের আকার, ব্রেক ও স্টিয়ারিং গিয়ার, হর্ন, আসন সংখ্যা, হুইল বেইজ, রিয়ার ওভার, চাকার আকার, সাইলেন্সার পাইপ, ইঞ্জিন, রং পরিবর্তন করা হলে প্রথমবার ১৫ হাজার এবং ২য় বার ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করার কথা বলা আছে। কিন্তু এই বিধান কতটা গুরুত্ব পাচ্ছে এবং কার্যকর হচ্ছে তা পরিষ্কার নয়।
ইমারজেন্সি হর্ন নির্ধারিত কিছু জরুরি যানবাহনের জন্য অনুমোদিত এবং অবশ্যই জরুরি কাজে ব্যবহারকালীন সময়ে বাজানো উচিত। জরুরি কাজ ব্যতিত অহেতুক সময়ে-অসময়ে সাইরেন বাজিয়ে মানুষের ভোগান্তি সৃষ্টি করা অনর্থক। এতে করে মানুষের মাঝে বিশ্বাস নষ্ট হচ্ছে এবং জরুরি সেবার গাড়িটি আসল নাকি নকলÑ এ ব্যাপারে সন্দেহ তীব্র হচ্ছে। এতে করে সত্যিকারার্থে জরুরি কাজে নিয়োজিত যানবাহনগুলো গুরুত্ব পাচ্ছে না। তাই যত্রতত্র ইমার্জেন্সি হুইসেল বাজানো ঠেকাতে সরকারের কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। পাশাপাশি নৈতিক দায়িত্ববোধের জায়গা থেকে আমাদেরও এসব কাজ থেকে বিরত থাকা প্রয়োজন। ভুয়া ভিআইপি কিংবা পেশার পরিচয় নয়; বরং বাংলাদেশের একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমাদের দায়িত্বশীল হওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
ইমার্জেন্সি হুইসেলের অপব্যবহার
শীর্ষ সংবাদ: