দেশের যখন একটি বিরাট অংশ শহরের আলোর ঝলমলে আধুনিকতায় উদ্ভাসিত, তখন চরাঞ্চলের মানুষেরা এখনো জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত কাটাচ্ছে বিদ্যুতের স্পর্শহীনতায়। শহরের সুবিধা ও চকমকের বিপরীতে চরাঞ্চলের মানুষগুলো যেন এক আলোকবঞ্চিত অন্ধকারে বন্দি। তাদের জীবনযাত্রার মৌলিক চাহিদা হিসেবে বিদ্যুৎ, সুপেয় পানি, ও অন্যান্য সুবিধা পাওয়ার অধিকার থাকলেও তারা তা থেকে বহু দূরে। দিনের পর দিন তাদের জীবন কাটছে গ্রীষ্মের প্রচণ্ড গরমে ফ্যানের শীতল বাতাস ছাড়া, সন্ধ্যার পর অন্ধকারে পড়াশোনা কিংবা কাজকর্ম চালিয়ে নেওয়ার অক্ষমতায়।
শহরের উজ্জ্বল আলোয় মোড়ানো বিলাসী জীবনের পাশে চরাঞ্চলের মানুষের জীবন যেন এক বৈষম্যময় সংগ্রামে পরিপূর্ণ। তারা প্রত্যেকদিনই সামান্য বিদ্যুতের আশায় থাকে। বিশেষ করে গ্রীষ্মের খরতাপে যখন শহরের মানুষ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে থাকে, তখন চরাঞ্চলের মানুষজন ফ্যানের সামান্য বাতাসের জন্য আকুল হয়ে থাকেন। মোবাইল চার্জ দেওয়া থেকে শুরু করে দৈনন্দিন কাজগুলোতেও বিদ্যুতের প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু বিদ্যুৎ সুবিধার অভাবে তাদের তা কল্পনাতেও নেই।
এমনই একটি উদাহরণ হলো চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়ন, যেখানে কিছু পরিবার সীমিত পরিসরে সোলার প্যানেলের সাহায্যে দিনে দুই ঘণ্টা বিদ্যুৎ পায়, যা তাদের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ। অধিকাংশ চরাঞ্চল কৃষিজীবী হওয়ায় তাদের বিদ্যুতের প্রয়োজন হয় চাষাবাদের কাজেও। কিন্তু বিদ্যুতের প্রয়োজনীয়তা সত্ত্বেও সমাজের উচ্চশ্রেণির কাছে তাদের দাবি দমিত হয়। ফলে বিদ্যুতের জন্য তাদের সংগ্রাম যেন এক অবিচ্ছেদ্য নিয়মে পরিণত হয়েছে।
শিশুদের লেখাপড়ায় বিদ্যুতের অভাব সবচেয়ে বড় বাধা। রাতের বেলায় পড়াশোনার সুবিধা না থাকায় তারা পিছিয়ে পড়ছে। আধুনিক শিক্ষায় তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় বিদ্যুতের প্রয়োজন আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। চিকিৎসা, বিনোদন ও অন্যান্য মৌলিক সেবাগুলো থেকেও তারা বঞ্চিত, যা তাদের জীবনকে আরও কঠিন করে তুলেছে।
চরাঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে।
১. যে সব চরাঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ কঠিন, সেখানে সরকারি উদ্যোগে সৌরবিদ্যুৎ ব্যবস্থা সম্প্রসারিত করা যেতে পারে। সোলার প্যানেলের মাধ্যমে প্রতিটি পরিবারকে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থা করা সম্ভব।
২. চরাঞ্চলগুলোর ভৌগোলিক মানচিত্রায়নের মাধ্যমে বিদ্যুৎ গ্রিডের নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ করা জরুরি। নদী পারাপার করে বিদ্যুৎ লাইনের সম্প্রসারণ করে চরাঞ্চলগুলোকে বিদ্যুতের আওতায় আনার জন্য উন্নত অবকাঠামো গড়ে তোলা যেতে পারে।
৩. চরাঞ্চলের মানুষকে তাদের অধিকার সম্পর্কে অবগত করতে এবং নিজ নিজ এলাকার উন্নয়নে অবদান রাখতে স্থানীয় পর্যায়ে শিক্ষামূলক কর্মসূচির আয়োজন করা প্রয়োজন। এর জন্য সরকারি সহযোগিতা ও নীতিমালা প্রণয়ন জরুরি।
৪. চরাঞ্চলের মানুষের মৌলিক অধিকার হিসেবে বিদ্যুৎ সুবিধা নিশ্চিত করতে সরকারকে আরও সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে। এই অঞ্চলের বিদ্যুৎ উন্নয়নে নির্দিষ্ট বাজেট বরাদ্দ ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করা প্রয়োজন।
চরাঞ্চলে বিদ্যুৎ প্রয়োজন
শীর্ষ সংবাদ: