বেশ কয়েক মাস ধরে অস্থির নিত্যপণ্যের বাজার। বিশেষ করে চাল-আটা, মাংস-ডিম, চিনি, চাল, ডাল ও ভোজ্যতেলের দামে প্রায় উল্লম্ফন ঘটেছে। ফলে, সাধারণ মানুষ তো বটেই, মধ্যবিত্ত শ্রেণিরও হাঁসফাঁস অবস্থা। নুন আনতে পান্তা ফুরায় আর কি! শুল্ক প্রত্যাহারের পরেও চালের বাজারেও কোনো সুসংবাদ নেই। প্রশ্ন হলো, সপ্তাহের ব্যবধানে কিছু নিত্যপণ্যের দাম কমবেশি হতেই পারে। তাই বলে এক লাফে কোনো কোনো পণ্যের দাম কয়েকগুণ বৃদ্ধি পাবেÑ তা কোনো যুক্তিতেই গ্রহণযোগ্য নয়। নিত্যপণ্য আমদানিকারকসহ পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা অজুহাত দিচ্ছেন ডলারের দাম বৃদ্ধি, টাকার অবমূল্যায়ন, মূল্যস্ফীতিসহ সময়মতো এলসি খুলতে না পারা ইত্যাদি। এসবের কমবেশি প্রভাব থাকলেও চাল-মাংস ও ডিমের দাম এক লাফে এত বাড়বে কেন? প্রায়ই বলা হয়ে থাকে যে, আমরা চাল, মাংস-ডিম-দুধে প্রায় স্বনির্ভর। তাহলে কেন বাড়ছে দাম। সংশ্লিষ্ট খামারিরা বলছেন, পোলট্রি ফিড বেশি দামে কিনতে হচ্ছে বলে দাম বেড়েছে। বাজারে চাহিদা অনুপাতে সরবরাহের ঘাটতি অজুহাতও বলা হচ্ছে। কিন্তু এর কোনোটাই যুক্তিসংগত ও গ্রহণযোগ্য নয়। কিছুদিন আগেও ডিম সিন্ডিকেটের সংবাদ এসেছিল গণমাধ্যমে। ধরপাকড় ও জরিমানার খবরও আছে। বাস্তবে পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি একটুও। অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ আক্ষেপ করে বলেছেন, সব ধরনের শুল্কছাড় দেওয়া সত্ত্বেও নিত্যপণ্যের দাম কমছে না, এটা দুঃখজনক। মূলত দেশের ভোগ্য ও নিত্যপণ্যের বাজার জিম্মি হয়ে পড়েছে ৩৬টি শক্তিশালী ও ক্ষমতাধর কোম্পানি ও প্রতিষ্ঠানের কাছে। তাদের কাছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় তথা সরকারও যেন অসহায়। অথচ ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে সময় সময় সরকার সবরকম সাহায্য-সহযোগিতা করছে তাদের। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে নিত্যপণ্যের আমদানির এলসি খুলতে যথাযথ নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। পোশাক পণ্যসহ রপ্তানি আয়ও বাড়ছে। প্রবাসী আয়ের ধারাও ইতিবাচক। বর্তমানে ডলারের দামও প্রায় স্থিতিশীল। এমতাবস্থায় আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীদের যখন সহনশীল থাকার কথা, তখন হঠাৎ করে তারা নিত্যপণ্যের বাজারে কারসাজি শুরু করেছেন কেন, তা বোধগম্য নয়। এমন হতে পারে যে, রমজানকে সামনে রেখে নিত্যপণ্যের দাম আরও এক দফা বাড়ানো তাদের মূল লক্ষ্য। যা কাম্য তো নয়ই, প্রত্যাশিতও নয়।
বাংলাদেশ ব্যাংক আসন্ন পবিত্র রমজান উপলক্ষে বিদেশ থেকে চাল, গম, ডিম, ভোজ্যতেল, ছোলা, ডাল, মটর, পেঁয়াজ, মসলা, চিনি ও খেজুরÑ ১১টি পণ্য বাকিতে আমদানির সুযোগ করে দিয়েছে ব্যবসায়ীদের। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, এসব পণ্য ৯০ দিনের সাপ্লায়ার্স বা বায়ার্স ক্রেডিটের আওতায় আমদানি করা যাবে, যা বহাল থাকবে ২০২৫ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত। ফলে, ব্যবসায়ী ও আমদানিকারকদের তাৎক্ষণিক ডলারের প্রয়োজন পড়বে না। ব্যাংকগুলো যথাযথ প্রক্রিয়া মেনে ঋণপত্র (এলসি) খুললেই আমদানি করা যাবে পণ্য। তাহলে রমজানে নিত্যপণ্যের জোগান নিশ্চিত হবে বাজারে। তবে একটা সময় পরে পরিশোধ করতে হবে আমদানির দায়। এর আগে এসব পণ্য আমদানির শর্ত অর্থাৎ জামানতের মূল্য রাখার নির্দেশ সহজ করার জন্যও প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। ব্যবসায়ীরা এসব সুযোগ নিয়ে নিত্যপণ্যের দাম ক্রেতাদের জন্য সহনীয় পর্যায়ে রাখবে বলেই প্রত্যাশা। ভোক্তা তথা রোজাদারদের প্রতি সেটাই হবে তাদের প্রদত্ত পবিত্র রমজানের উপহার।
নিত্যপণ্যে ব্যাংকিং সুবিধা
শীর্ষ সংবাদ: