ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১

জামালপুরে সোলার পার্ক

প্রকাশিত: ১৯:৪৫, ১৪ নভেম্বর ২০২৪

জামালপুরে সোলার পার্ক

অন্তর্বর্তী সরকারের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ বর্তমানে সমধিক প্রচলিত জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরতা কমিয়ে আনতে গুরুত্বারোপ করেছে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে। এক্ষেত্রে বিকল্প হিসেবে জলবিদ্যুৎ, সৌরবিদ্যুৎ ও বায়ুবিদ্যুৎ হতে পারে সর্বাধিক সাশ্রয়ী ও অফুরন্ত উৎস। তবে দেশে যেহেতু জলবিদ্যুতের সুযোগ সীমিত, সেক্ষেত্রে সূর্যের অফুরন্ত আলো তথা রৌদ্রালোক ব্যবহার করে সৌরবিদ্যুৎ হতে পারে সবচেয়ে সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব। তুলনায় বায়ুবিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন কিছুটা ব্যয়বহুল এবং এর জন্য অনুকূল স্থানও পর্যাপ্ত নয়। সে অবস্থায় সরকার সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে, যা বাংলাদেশের আবহাওয়া ও জলবায়ু পরিবর্তন প্রতিরোধে সর্বাধিক উপযোগী, অনুকূল ও ব্যয়সাশ্রীয় হতে পারে। সর্বোপরি পরিবেশবান্ধব। এককথায় যাকে বলে গ্রিন এনার্জি। এরই অংশ হিসেবে জামালপুরে ২০ হাজার একর সুবিশাল সরকারি খাস  জমি ও জলাশয়ের ওপর গড়ে তোলা হচ্ছে পাঁচ থেকে ছয় হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম সোলার বা সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের পার্ক। উল্লেখ্য, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এ বিষয়ে একটি প্রাথমিক পরিকল্পনা গ্রহণ করা হলেও বাস্তবে কাজের কাজ হয়নি কিছুই।
এর পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন স্থানে আরও অন্তত ৪০টি সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নের পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার, যা সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য। আগামী সপ্তাহের মধ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানির এসব প্রকল্পের কাজ শুরু হতে পারে। এর পাশাপাশি অগ্রাধিকার দেওয়া হবে শিল্প-কারখানায় ‘রুফটপ’ সোলার প্রযুক্তির মাধ্যমে পরিবেশবান্ধব সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপরও। বর্তমান সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানির উৎস থেকে অন্তত চার হাজার মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে, যা হবে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। উল্লেখ্য, বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে সোলার প্যানেলের দাম কমে আসছে ক্রমশ। ফলে বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর নির্মাণ ব্যয়ও কমবে বহুলাংশে। তদুপরি গ্রীষ্ম প্রধান বাংলাদেশে অফুরন্ত সূর্যালোক পেতেও কোনো সমস্যা হবে না। ফলে এই বিদ্যুৎ হবে পরিবেশবান্ধব ও ব্যয়সাশ্রয়ী। সর্বোপরি কমবে বিদেশমুখী আমদানিনির্ভর জ্বালানিনির্ভরতা।
নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারে এশিয়ার দেশগুলো এগিয়ে আছে। ২০২২ সালে চীন নবায়নযোগ্য খাত থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছে ১৪১ গিগাওয়াট। একই বছরে ভারত উৎপাদন করেছে ১৫ দশমিক ৭ গিগাওয়াট। অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও ক্লিন এনার্জি বা পরিবেশবান্ধব জ্বালানি ব্যবহারের পথে হাঁটছে। বর্তমানে দেশে ৫০ হাজার মেগাওয়াটের বেশি সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। জার্মানি ও বাংলাদেশের সৌরশক্তির তুলনামূলক বিশ্লেষণ থেকে দেখা যায়, জার্মানির যে কোনো জায়গায় সূর্য থেকে আসা সর্বোচ্চ সৌরশক্তিও বাংলাদেশের চেয়ে কম। বাংলাদেশ তার চেয়ে অনেক সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে। দেশে বাতাস থেকে ১ হাজার এবং বর্জ্য থেকে ৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। এই বিপুল সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে পারলে বিদ্যুৎ উৎপাদনে আমাদের পরনির্ভরশীলতা দূর হতে পারে। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার উন্নয়নশীল দেশে নবায়নযোগ্য শক্তির বিভিন্ন উৎস কাজে লাগানো সময়ের দাবি।

×