ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১

জবির দ্বিতীয় ক্যাম্পাস

প্রকাশিত: ১৯:৪৩, ১৪ নভেম্বর ২০২৪

জবির দ্বিতীয় ক্যাম্পাস

উনিশ পেরিয়ে বিশে পদার্পণ করেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি)। ২০০৫ সালে এটি প্রতিষ্ঠিত হয় প্রথমে মূল ও পরে কলেজ হিসেবে। ঐতিহ্যবাহী জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শত সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও দাঁড়িয়ে আছে পুরান ঢাকার সদরঘাট এলাকায়। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ সবকিছুতেই জগন্নাথ কলেজের শিক্ষার্থীদের অবদান অনস্বীকার্য। হাজার হাজার শিক্ষার্থীর নানা স্বপ্ন ও আকাক্সক্ষার স্থান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হলেও শিক্ষার্থীরা আবাসন সুবিধা, প্রশস্ত ক্যাম্পাস, আধুনিক গবেষণাগার সংকটে ভুগছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষার্থীদের গবেষণায় পর্যাপ্ত সুবিধা দিয়ে থাকে। সেখানে জবির শিক্ষার্থীরা তা থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছে বছরের পর বছর।
কিছুদিন ধরে জবি শিক্ষার্থীরা তাদের দাবি আদায়ে কঠোর হয়েছে। আশার খবর হলো, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বয়ংসম্পূর্ণ ক্যাম্পাসের মেগা প্রকল্পটি একনেক সভায় পাস হয়েছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষা এবং পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। শিক্ষা উপদেষ্টা বলেছেন, ‘আমি নিজে উদ্যোগ নিয়ে একনেক সভায় প্রকল্পটি পাস করিয়ে নিয়েছি। কেরানীগঞ্জে সম্পূর্ণ একটা নতুন ক্যাম্পাস তৈরি করা হবে। বাংলাদেশে এত বড় একটা নতুন ক্যাম্পাস আগে কখনো তৈরি করা হয়নি। সেখানে ছাত্রাবাস, প্রশাসনিক ভবন, স্কুল, চিকিৎসাকেন্দ্র সবই থাকবে।’
বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ২০ বছরের এ যাত্রায় শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দাবি তুললেও কোনো লাভ হয়নি। এবার শিক্ষার্থীরা অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে পাঁচ দফা দাবি  পেশ করেছে। স্বৈরাচার আমলে নিয়োগপ্রাপ্ত প্রকল্প পরিচালককে আইনের আওতায় আনতে হবে। অবিলম্বে বাকি ১১ একর জমি অধিগ্রহণের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। পুরাতন ক্যাম্পাস নিয়ে স্বৈরাচার সরকারের আমলের সব চুক্তি বাতিল করতে হবে। সম্প্রতি ইউজিসির ঘোষিত পাইলট প্রকল্পে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ষিক বাজেট সর্বনিম্ন ৫০০ (পাঁচশত) কোটি টাকা বরাদ্দ করতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে প্রতিষ্ঠানটির বয়স ১৯ হলেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে এর যাত্রা শত বছরের পুরনো। ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দে ঢাকা ‘ব্রাহ্ম স্কুল’ নামে যাত্রা শুরু করে ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানটি। এরপর ১৮৭২ খ্রিস্টাব্দে নাম বদলে বালিয়াটির জমিদার কিশোরীলাল রায় চৌধুরী তার বাবার নামে জগন্নাথ স্কুল নামকরণ করেন। ১৮৮৪ খ্রিস্টাব্দে এটি দ্বিতীয় শ্রেণির কলেজ ও ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দে প্রথম শ্রেণির কলেজের রূপ পায়। এরপর নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে আজকের অবস্থানে পৌঁছেছে প্রতিষ্ঠানটি। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে বর্তমানে ৩৮টি বিভাগ ও ২টি ইনস্টিটিউট চালু রয়েছে, যেখানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৭ হাজারের বেশি। বিপরীতে শিক্ষক রয়েছেন ৭০০ জন। দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় সুবিধা বঞ্চিত থাকুক, এটা কাম্য নয়। বাজেটে বরাবরই শিক্ষা খাতকে অবমূল্যায়ন করা হয়। আবার পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও বাজেট বরাদ্দে থাকে বৈষম্য।  বৈষম্যহীন দেশ ও সমাজ গড়তে এসব অবিলম্বে দূর করা এবং শিক্ষা খাতকে অগ্রাধিকার দেওয়া একান্ত প্রয়োজন।

×