-
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) কর্তৃক প্রথম শ্রেণিতে আটটি পাঠ্যবই নির্ধারিত হলেও, বাস্তবে অধিকাংশ নামিদামি স্কুলে প্রথম শ্রেণির শিশুদের পড়ানো হয় আরও দুই থেকে পাঁচটি বই বেশি। ফলে, ছোট ছোট বাচ্চার পিঠে স্কুল ব্যাগের বোঝা ক্রমশ ভারি হচ্ছে। অতিরিক্ত বই, ক্লাসের খাতা, স্কেল বক্স, পানির বোতল, টিফিন বক্স ইত্যাদি নিত্যপ্রয়োজনীয় সরঞ্জামে ভরপুর স্কুল ব্যাগের ভার বহন করতে অনেক শিশুকে কুঁজো হয়ে হাঁটতে দেখা যায়। এতে শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। বাচ্চাদের স্কুলব্যাগের ওজনের বিষয়ে ২০১৬ সালের ১৭ ডিসেম্বর হাইকোর্ট থেকে রায় দেওয়া হয় যে, একটি শিশুর ওজনের ১০ শতাংশের বেশি ওজন হবে না স্কুল ব্যাগের। উচ্চ আদালতের এমন নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও নানা কারণে তা আজও বাস্তবায়ন হয়নি। ফলে, স্কুল ব্যাগের বাড়তি ওজনের ভার বহন থেকে রেহাই পাচ্ছে না কোমলমতি শিশুরা। অনেক ক্ষেত্রে শিশুদের স্কুল ব্যাগের ওজন তার শরীরের ওজনের শতকরা ৩০ ভাগের বেশি হতে দেখা যায়, যা উদ্বেগজনক।
শিক্ষার্থীর বয়স ও বিকাশের কথা বিবেচনা করে পাঠ্যবই ও পাঠ নির্ধারণ করা হয়। এর অতিরিক্ত বই বাধ্যতামূলকভাবে পড়ানো হলে তা নিঃসন্দেহে ক্ষতিকর। যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীদের ওপর অতিরিক্ত বই চাপিয়ে দিচ্ছে, তারা শুধু বেআইনি কাজই করছে না, শিক্ষার্থীদের ওপর বাড়তি চাপ তৈরি করছে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে, একদিকে বাড়তি বই পড়ার চাপ, অন্যদিকে কোচিংয়ের জন্য চাপÑ এসব সহ্য করতে না পেরে শিশুরা প্রায়ই অসুস্থ হচ্ছে। অনেক শিশু ভুগছে কাঁধের ব্যথায়। লেখাপড়ার বাড়তি চাপ শৈশবের শুরুতেই তার মনোজগতে যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে, তাতে ভবিষ্যতে তাদের উচ্চশিক্ষা অর্জনে বিঘ্ন ঘটার আশঙ্কা তৈরি করছে। অভিভাবকদের অভিযোগ, অতিরিক্ত বই বাধ্যতামূলক করার মাধ্যমে কোনো কোনো স্কুল বইয়ের ব্যবসা করে। উপরন্তু, শিশুদের অতিরিক্ত বই পড়ালেই দক্ষতা বাড়ে না। বরং অনেক সময় শেখার প্রতি বিতৃষ্ণা তৈরি হয়, যা তারা ইতোমধ্যে তাদের সন্তানের মাঝে দেখতে পাচ্ছেন।
শিশুদের সুরক্ষায় শিক্ষার মান বৃদ্ধি এবং বইয়ের বোঝা কমানোর বিষয়ে বিভিন্ন স্কুল কর্তৃপক্ষের দায়িত্বশীল ভূমিকা প্রত্যাশিত। যে বয়সে খেলার ভেতর দিয়ে শিক্ষার আনন্দদায়ক পাঠ নেওয়ার কথা, সে বয়সে শিশুদের টানতে হচ্ছে অতিরিক্ত বই-খাতার বোঝা। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব না হলে আগামী প্রজন্ম বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ও দেশের স্বার্থে শিক্ষাকে শিশুদের জন্য আনন্দদায়ক করতেই নির্দেশনা এসেছে আদালত থেকে। আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়িত হলে কোমলমতি শিশুদের জন্য শিক্ষা আনন্দদায়ক হবে বলে আশা করা যায়। কাজেই দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এ নির্দেশনা গুরুত্বের সঙ্গে মেনে চলা উচিত। সেই সঙ্গে অভিভাবকদের সচেতনতাও প্রত্যাশিত।