প্রতিশ্রুতি রেখেছে অন্তর্বর্তী সরকার। প্রবাসীদের জন্য ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রথমবারের মতো চালু করেছে ভিআইপি লাউঞ্জ। সোমবার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস আনুষ্ঠানিকভাবে এই লাউঞ্জের উদ্বোধন করেন। তিনি বলেন, ‘প্রবাসী শ্রমিকরা দেশ গড়ার কারিগর। জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থানেও তারা বড় ভূমিকা পালন করেছেন। জাতি তাদের কাছে কৃতজ্ঞ। প্রবাসীরা এখানে মেহমানের মতো থাকবেন।’ উল্লেখ্য, বাংলাদেশী প্রবাসী শ্রমিকদের সহায়তা করার লক্ষ্যে জাতিসংঘের অভিবাসী বিষয়ক সংস্থা আইওএম লাউঞ্জটির পৃষ্ঠপোষকতা করেছে। বিমানবন্দরে প্রবাসীদের সহায়তা করার জন্য প্রায় ১শ’ জন স্বেচ্ছাসেকেরও পৃষ্ঠপোষক আইওএম। পরে আরও ১শ’ জন সহায়তা কর্মী নিয়োগ দেওয়া হবে। আপাতত লাউঞ্জটিতে প্রবাসী শ্রমজীবীদের জন্য থাকছে বিশ্রামের স্থান এবং ভর্তুকি মূল্যে খাবারের ব্যবস্থা। রয়েছে ইন্টারনেট সুবিধা। পরে সংযুক্ত করা হবে আরও সুযোগ-সুবিধা। তদুপরি বিমানবন্দরে ‘ড্রপ অফ’ অঞ্চলে যাত্রী ও তাদের স্বজনদের বিশ্রামের জন্য বেবিচক সেখানে অচিরেই চালু করতে যাচ্ছে প্রায় ১ হাজার আসনবিশিষ্ট আরেকটি লাউঞ্জ। এর জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বেবিচক কর্তৃপক্ষ সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য।
উল্লেখ্য, বর্তমানে বিশ্বের ১৬৮টি দেশে কমবেশি ১ কোটি ২০ লাখ বাংলাদেশী শ্রমজীবী বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত রয়েছেন। প্রবাসী শ্রমজীবীরা বিদেশে কাজ করে বছরে ২ হাজার ৪০০ কোটি মার্কিন ডলারের বেশি প্রবাসী আয় বা রেমিটেন্স পাঠিয়ে থাকেন। বাংলাদেশী মুদ্রায় যার পরিমাণ ২ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার সমান। কষ্টার্জিত এই অর্থে প্রতিবছর সমৃদ্ধ হচ্ছে দেশের অর্থনীতি। বাড়ছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ। অথচ তারাই দেশে আসা-যাওয়ার পথে সর্বাধিক হয়রানি, অবহেলা ও লাঞ্ছনার শিকার হয়ে থাকেন। যথাযোগ্য মর্যাদা ও সম্মান পান না। সেই ক্ষেত্রে আনন্দের সংবাদ এই যে, অনেক বিলম্ব হলেও প্রবাসীদের সেই দুর্গতির অবসান হতে চলেছে। এখন থেকে আর যাতে বিমানবন্দরে প্রবাসীরা হয়রানির শিকার না হন, তা নিশ্চিত করতে হবে বেবিচকসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে।
ইতোমধ্যে বদলে গেছে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সার্বিক সেবার মান। অথচ কিছুদিন আগেও এই বিমানবন্দর ব্যবহারকারী অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক রুটের যাত্রীদের অভিযোগের অন্ত ছিল না। বাস্তবে দেশব্যাপী সংঘটিত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার অন্যতম দাবি সর্বত্র সংস্কার কর্মসূচির ছোঁয়া লেগেছে শাহজালাল বিমানবন্দরেও। বহির্গমন ও অভ্যন্তরীণ যাত্রীরা এখন বিমান থেকে অবতরণ করে খুব সহজেই পাচ্ছেন কাক্সিক্ষত সেবাÑ তা সে হোক না কেন বিমানবন্দরের কর্মী অথবা প্রযুক্তিগত সুবিধা। যেমনÑ এখন হাত বাড়ালেই পাওয়া যায় যাত্রীদের লাগেজ বহনের ট্রলি, একই সঙ্গে লোডার বা পোর্টারের আন্তরিক সেবা। ফলে, একজন যাত্রী খুব সহজেই বিপুল পরিমাণের লাগেজ নিয়ে টার্মিনাল থেকে একেবারে চলে যেতে পারেন রাস্তা পর্যন্ত কার পার্কিং এলাকায়। সময়মতো লাগেজ পেতেও সমস্যা হয় না। এর পাশাপাশি বিআরটিসির সৌজন্যে নামমাত্র ভাড়ায় পাওয়া যাচ্ছে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত শাটল বাস সার্ভিস। বিনামূল্যে টেলিফোন, ইন্টারনেট, ওয়াইফাই সেবা ইত্যাদি। বাংলাদেশ বিমানের জনপ্রিয় থিম হলো আকাশে শান্তির নীড়। এর মাধ্যমে আকাশ ভ্রমণে শুধু আরামদায়ক সুব্যবস্থাই বোঝায় না, একই সঙ্গে সার্বিকভাবে সর্বোচ্চমানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়টিও বোঝায়। হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরের সার্বিক যাত্রীসেবার মান আরও আধুনিক ও উন্নত হলে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আরও ছড়িয়ে পড়বে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে।
বিমানবন্দরে প্রবাসী সেবা
শীর্ষ সংবাদ: