ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১

ছাত্র শিক্ষক সম্পর্কের একাল সেকাল

নাফিজ-উর-রহমান

প্রকাশিত: ১৯:৩২, ১৩ নভেম্বর ২০২৪

ছাত্র শিক্ষক সম্পর্কের একাল সেকাল

আমার কাছে আদর্শ শিক্ষক-শিক্ষার্থী সম্পর্কের অর্থ হলো শ্রদ্ধা, বিশ্বাস, স্নেহ, শাসন এবং সহযোগিতার সংমিশ্রণ। ১০ বছর আগের ঘটনা দিয়েই শুরু করা যাক,যখন আমি ক্লাস সিক্স পড়তাম। দূর থেকে কোনো শিক্ষকে আসতে দেখলে মাথা নামিয়ে হাটতাম, হাটার গতি কমিয়ে দিতাম। শিক্ষকের সম্মানার্থে সাইকেল থেকে নেমে হাটতে হাটতে যেতাম। শিক্ষক সামনে আসলে তাকে বিনয়ের সাথে সালাম দিয়ে একটু দূরে সরে গিয়ে তারপর সাইকেলে উঠতাম। ক্লাসে শিক্ষক ঢুকলেই সবাই উঠে দাঁড়িয়ে সুর করে সালাম দেওয়া, শিক্ষক বসতে না বলা পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকা, শিক্ষকের ভয়ে ক্লাসে নীরব থাকা, নিজেদের মধ্যে মারামারি হলে মিটিয়ে নেওয়া , শিক্ষকের কানে খবর না পৌঁছানো, কতকিছুই না  করতাম তার সৌজন্যে আমরা বেয়াদবি বা পড়ায় অমনোযোগী হলে শিক্ষকেরা বুঝিয়ে বলতেন, কখনো বকা দিতেন, কোনো কিছুতে কাজ না হলে বেত্রাঘাত করতেন। উচু গলায় শিক্ষকের সাথে কথা বলা দূরে থাকুক, আমরা কথা বলতেই ভয় পেতাম। তবু আমাদের সম্পর্ক ছিল মধুর মতোন। আমাদেরকে কোনো শাস্তি দিলে তা মাথা পেতে মেনে নিতাম। তখন শিক্ষকেরা আমাদের শাসন বা মারধর করলেও আমাদের প্রতি শিক্ষকদের ছিল অগাধ ভালোবাসা। আমাদেরও শিক্ষকদের প্রতি ছিলো একরাস সম্মান। যেটা ছিলো পরিমাপের উর্ধ্বে।

ঠিক ১০ বছর পর বর্তমানের ঘটনা বলি। এখনকার ছাত্ররা শিক্ষকদেরকে আর ভয় পায় না। কারণ শিক্ষকদের কাছ থেকে শাসন করার ক্ষমতা কেড়ে নেওয়া হয়েছে। ক্লাসে শিক্ষক ভালোমন্দ কিছু বললেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বাইরে গিয়ে তাকে হুমকি দেয় হয়। ছাত্ররা বাইকে করে ঝড়ের গতিতে শিক্ষকদের পাশ কাটিয়ে চলে যায়। তাহলে কোথায় থাকলো শিক্ষকের সেই সম্মান? খবরের শিরোনামেই দেখা যায় শিক্ষক শিক্ষার্থীদের হাতে হেনস্তার শিকার হচ্ছে। শিক্ষার্থীর আঘাতে শিক্ষকের মৃত্যু, জুতার মালা গলায় দিয়ে পুলিশের গাড়িতে উঠানো-এসব ঘটনা প্রায়ই খবরের শিরোনামে দেখা যাচ্ছে। এই জুলাই বিপ্লবের সময়কার কথাই ধরুন না কেন, শিক্ষার্থীরা জোর করে শিক্ষককে পদত্যাগ করালো। অনেক ক্ষেত্রে শিক্ষকের সাথে হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে। খবরে  দেখেছিলাম পদত্যাগ পত্রে সই করতে গিয়ে একজন শিক্ষক হার্ট স্ট্রোক করে। কোথায় গেল সেই ১০ বছর আগের আমাদের সময়? আমাদের আর তাদের মধ্যে কি শুধুই সময়ের পার্থক্য, নাকি অন্য কিছু? পারিবারিক শিক্ষা, সামাজিক আচরণ, বোধশক্তি সবকিছুই কি তাহলে হারিয়ে গেলো? আমাদের সময় আমাদের অভিভাবকেরা শিক্ষকদেরকে বলতো,"স্যার,মাংস আপনার,হাড্ডি আমার" কিন্তু বর্তমানে শিক্ষকেরা ছাত্রদের শাসন করলেই তাদের নামে মানহানির মামলা হয়ে যাওয়া মতো অবস্থা হয়। কারণ, শিক্ষকের চেয়ে এখন শিক্ষার্থী অভিভাবকের ক্ষমতা বেশি।

দেশের উন্নয়ন শিক্ষার মান অক্ষুন্ন রাখতে হলে এবং শিক্ষার্থীদের মানবিকতা শ্রদ্ধাবোধ শেখাতে হলে শিক্ষদেরকে তাদের ক্ষমতা ফিরিয়ে দিতে হবে এবং আমাদের শিক্ষার্থীদেরকেও শিক্ষকদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে তাহলেই আবার ফিরে আসবে ছাত্র শিক্ষকের সেই মধুর দিনগুলি।

শিক্ষার্থী,ঢাকা কলেজ

×