ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১

ফিলিস্তিনের মানুষের দুঃখ-দূর্দশার শেষ কোথায়

মো. জাহিদ হাসান

প্রকাশিত: ১৯:৩১, ১৩ নভেম্বর ২০২৪

ফিলিস্তিনের মানুষের দুঃখ-দূর্দশার শেষ কোথায়

এই  বিশ্ব আজও ক্ষুধার্থ  মানুষের অন্ন যোগাতে ব্যর্থ। আমাদের বেঁচে থাকার জন্য যে ৬টি মৌলিক চাহিদা রয়েছে যথা-খাদ্য, বস্ত্র,বাসস্থান, চিকিৎসা,শিক্ষা  বিনোদন। যার কোনটি এখন ফিলিস্তিন তথা গাজার মানুষের নামের পাশে যুক্ত করা সম্ভব না। ফিলিস্তিনের এই চরম দুর্দশার কারন জানতে হলে ফিরে যেতে হবে ১৯৪৮ সালের ১৪ মে ইসরায়েল নামক রাষ্ট্রের জন্মের মাঝে। জাতিসংঘ এক তরফা ভাবে ফিলিস্তিনের Ðকে দ্বি-Ðিত করে ইসরায়েল নামক রাষ্ট্র প্রতিষ্টা করে। যা ফিলিস্তিনিদের ইতিহাসে "নাকবা" বা বিপর্যয় নামে পরিচিত। পরবর্তী কয়েক দশক ধরে ইসরাইলী দখলদারিত্ব এবং বসতি স্থাপন ফিলিস্তিনিদের মৌলিক মানবাধিকার ওপর চরম আঘাত হানে। ১৯৬৭ সালের আরব -ইসরায়েল দিনের যুদ্ধে আরব রাষ্ট্র পরাজিত হলে ইসরায়েল পশ্চিম তীর, গাজা উপত্যকা এবং পূর্ব জেরুজালেম দখল করে। এই দখলদারিত্ব ফিলিস্তিনিদের জন্য নতুন এক দুঃস্বপ্নের নাম হয়ে উঠে যা আজও চলমান। আরব রাষ্ট্র পরাজিত হওয়ার মূলে ছিল নিজ দেশের ব্যক্তি স্বার্থ এবং নিজ দেশের Ð বৃদ্ধি যা ইসরায়েলের বিজয়ের পথ সুগম করে। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ ১৯৬৭ সালে ২৪২ নম্বর প্রস্তাবে ইসরায়েলকে দখলকৃত অঞ্চল থেকে সরে যাওয়ার আহŸান জানায়। যা ইসরায়েল জাতিসংঘের প্রস্তাবকে আমলে না নিয়ে দখলদারিত্ব কার্যক্রম বাড়িয়ে চলেছে। কিন্তু এই জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠার মূল উদ্দেশ্য ছিল বিশ্বশান্তি, নিরাপত্তা মানবাধিকার রক্ষা করা। যা পৃথিবীর ৮০০ কোটি মানুষের আস্থা নির্ভরতার জায়গা হলেও জাতিসংঘ একাধিকবার ব্যর্থতার প্রমাণ দিয়েছে। জাতিসংঘ তথা বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য পূরণে ব্যর্থ হওয়ার প্রেক্ষাপটে অক্টোবর হামাস ইসরাইলের অভ্যন্তরে নজিরবিহীন হামলা চালায়। আর এই হামলা শুধু অক্টোবরকে কেন্দ্র করে না। এই হামলার সাথে জড়িয়ে আছে (১৯৪৮-২০২৩) দীর্ঘ ৭৫ বছরের শোষণ, নিপীড়ন, নিজ  মি থেকে বিতাড়িত এবং মি দখল সহ সকল মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়ার ইতিহাস। ইসরায়েলে অতর্কিত এই হামলা ছিল ফিলিস্তিনিদের ন্যায্য অধিকার তথা স্বাধীনতার শেষ লড়াই কেননা ইসরায়েলের সাথে আরব বিশ্বের অধিকাংশ দেশ শত্রæতা থেকে সরে এসে সমঝোতা চুক্তির দারপ্রান্তে পৌঁছে গিয়েছিল যা বাস্তবায়ন হলে ফিলিস্তিন তথা গাজা পৃথিবীর সবচেয়ে বড় উন্মুক্ত কারাগারে রুপ লাভ করতো। তাই সবদিক বিবেচনায় ফিলিস্তিনিদের নিজ Ð টিকিয়ে রাখতে ইসরায়েলে হামলার বিকল্প ছিল না। হামাসের এই হামলায় ইসরাইলে দেশি-বিদেশি সর্বমোট ১১৯৫ জন প্রাণহানি ঘটে এবং হামাসের হাতে  জিম্মি হন বিদেশিসহ ২৪৮ জন ইসরাইলী। জিম্মি উদ্ধারের নামে নেতানিয়াহু প্রশাসন গাজায় যে নিরবিচ্ছিন্ন বিমান হামলা স্থল অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে যা গোটা পৃথিবীর কাছে অজানা নয়। হামাস নিধনের নামে  গাজায় যে যুদ্ধ পরিচালনা করছে তা স্রেফ জাতিগত নিধন বা গণহত্যা ছাড়া কিছুই নয়। এই পর্যন্ত নিহত  ৪৩ হাজার ৬০০ জন, যার মধ্যে ৭০ শতাংশ নারী শিশু। এই নিরপরাধ শিশু হত্যা কখনোই  মানবতার জন্য গ্রহণযোগ্য নয়। এখন পর্যন্ত ফিলিস্তিন উপত্যকায় আহত প্রায় ৭৫ হাজারের বেশি মানুষ ধারণা করা হচ্ছে ধ্বংসস্তুপের নিচে চাপা পড়ে আছে ১০ হাজারের অধিক লাশ। গাজা সিটির ৯০ শতাংশ ঘরবাড়ি বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। এত আর্তনাদ এত ধ্বংস তবুও নিরব বিশ্ব তাকিয়ে রয় যুক্তরাষ্ট্রের দিকে। যুক্তরাষ্ট্র, কাতার মিশরের মধ্যস্থতায় একাধিকবার যুদ্ধ বিরতির টেবিলে পৌছালেও তা আলোর মুখ দেখেনি। মিত্র যুক্তরাষ্ট পশ্চিমা একাধিক নেতার ঢালাও সমর্থন যা সবুজ সংকেত হিসেবে নেতানিয়াহুকে করে তুলেছে রক্তপিপাসু বেপরোয়া। বাইডেন প্রশাসন মিত্র ইসরায়েলকে দিয়েছে বিলিয়ন ডলারের  অস্ত্র সহায়তা অন্য দিকে গাজায় দিয়েছে নাম মাত্র ত্রাণসামগ্রী যা যুক্তরাষ্ট্রের দ্বি-মুখী নীতির বহিঃপ্রকাশ। যুক্তরাষ্ট্র সহ একাধিক দেশের পাঠানো হাজার হাজার ট্রাক ত্রাণ বোঝায় গাড়ি আটকে আছে ইসরায়েলের সীমান্তে। যা ইসরায়েল খাদ্যকে অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করছে। তাই সবদিক বিবেচনায় বাইডেন প্রশাসন গাজার মানুষের মৌলিক স্বার্থ উপেক্ষা করেই যুদ্ধবিরতির রোড ম্যাপ এঁকেছেন। তবে বাইডেন হোয়াইট হাউজ ছাড়ার আগ মুহূর্তে শেষবারের মতো হয়তো যুদ্ধ বিরতির একটা প্রস্তাব দিবেন তবে সেটা কতটা ফলপ্রসূ হবে তা এখন দেখার বিষয়। এদিকে হোয়াইট হাউস ট্রাম্পকে বরণ করতে প্রস্তুত। ট্রাম্প নির্বাচনী প্রচারণায় যে সকল অঙ্গিকার করে নির্বাচনে জয়লাভ করেন। তার মধ্যে অন্যতম ইসরায়েল -ফিলিস্তিন সংকট রাশিয়া -ইউক্রেন যুদ্ধে সমাপ্তি টানা।  ট্রাম্পের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করলে দীর্ঘ বছরের অধিক সময় ধরে চলা ইসরায়েল -ফিলিস্তিন যুদ্ধের ইতি ঘটবে। একই সাথে ট্রাম্প যদি ফিলিস্তিনিদের স্বার্থ উপেক্ষা করে কোন ধরনের সমঝোতায় পৌছাতে চায় তাহলে সেটি ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংকটের কোন সমাধান দিবে না। ‚-রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলেছেন  ফিলিস্তিন-ইসরায়েল অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দ্বি-রাষ্ট্র তত্ত¡ এর একমাত্র সমাধান। তাই মধ্যপ্রাচ্য সহ গোটা বিশ্ব স্থিতিশীল রাখতে ১৯৯৩ সালের অসলো শান্তি চুক্তি অনুযায়ী ইসরায়েল -ফিলিস্তিন দ্বি-রাষ্ট্র ভিত্তিক সমাধান করার মাধ্যমে বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব।

 

শিক্ষার্থী, ঢাকা কলেজ

×