এসেছে নতুন শিশু, ছেড়ে দিতে হবে স্থানÑ বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যায়ের সাথে সুকান্ত ভট্টাচার্যের এই লাইনটি যেন নিবিড়ভাবে জড়িয়ে আছে। বছর ঘুরেই একদিকে যেমন দুয়ারে কড়া নাড়ে ধূসর স্মৃতি পিছনে ফেলে প্রবীণ বিদায়, বাতাসের ছন্দে ছন্দে মিশে যায় বেদনার সুর, ছেড়ে যাওয়ার আকুতি। অন্যদিকে নবীনদের আগমনী বার্তা সুবাস ছড়ায় ক্যাম্পাসের অলিতে, গলিতে, চতুষ্কোণে। বৃক্ষের নতুন কুঁড়ি, বাগানে বাগানে নতুন ফুলের নিজস্ব ঘ্রাণে ঘ্রাণে মাতোয়ারা হওয়া ছাপিয়ে দৃষ্টি কেড়ে নিবে নবীনদের আগমন।
রাত পোহালেই গোপালগঞ্জে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় নবীন শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখরিত হবে।
৫৫ একরে নবীনদের পদচারণা ফিরিয়ে আনবে সজীবতা, উৎসবে উচ্ছ¡াসে ভারি হবে প্রাণের মেলা।
বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন, আকাঙ্ক্ষার বীজ আমাদের মস্তিষ্কে সাবলীলভাবে বপন হয় স্কুল থেকেই, কারো কারো ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের ধারণা চাষ হয় কলেজের গন্ডিতে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার তাড়না নিউরনে গেঁথে যায়, যা একজন শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজের নামে একটা সিট বরাদ্দ করতে বারংবার উদ্দীপ্ত করে।বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করা প্রত্যেক শিক্ষার্থীর লালিত স্বপ্ন। আর আজ থেকে সেই লালিত স্বপ্ন পূরণ হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের আঙ্গিনায় কদম ফেলার মাধ্যমে। অনেকের মস্তিষ্কে ঘুরপাক খাবে এই লাইনটিÑ ‘না পাওয়ার গোলক ধাঁধায় তোমাকে পেয়ে আর সইনি তর, ভেতরে ভেতরে সর্বদা প্রকম্পিত হয় প্রাণের পঞ্চান্ন একর’। নবীন শিক্ষার্থীদের মাঝে রঙিন স্বপ্ন বাসা বাঁধবে এটাই অনুমেয়। অনেকেই চাকচিক্যের মাঝে তলিয়ে যায়, খুঁজে পায় না দিশা, কেউবা অতিরিক্ত প্রত্যাশা চাপে নুয়ে পড়ে। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ে পা রাখার পর কিছু জিনিস মাথায় রাখলে নতুন পথচলা সুগম হয়ে ওঠে। কিছু বিষয় তুলে ধরা হলো:
বন্ধু নির্বাচনে সতর্কতা অবলম্বন করা
ইউরিপিদিস বলেছেন, একজন বিশ্বস্ত বন্ধু দশ হাজার আত্মীয়ের সমান। আমাদের জীবনে কিংবা চলার পথে দামি অলংকারের চেয়েও দামি বন্ধুত্ব তথা বিশ্বস্ত বন্ধু অধিক প্রয়োজন। দামি অলংকার সর্বোচ্চ বাহ্যিক সৌন্দর্য বাড়ায়, দেহে বাসা বাঁধতে পারে। একজন দামী বন্ধু হৃদয়ে বাসা বাঁধে, তৃপ্তি ও প্রশান্তি যোগায়। তাই বিশ্বস্ত বন্ধুর প্রয়োজনীয়তা অত্যধিক। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে সঠিক বন্ধু খুঁজে পাওয়াই দায়। পাশাপাশি হাঁটলেই যেমন পাশে থাকা হয় না, তেমনি পাশাপাশি ক্লাস করলেই বন্ধু হয়ে যায় না।
বন্ধু নির্বাচনের ক্ষেত্রে অবশ্যই কিছু জিনিস গুরুত্ব দেওয়া উচিত। যেমন: যার কাছে নির্দ্বিধায় সবকিছু বলা যায়, প্রতিটা কথা যে মনোযোগ দিয়ে শুনে, সুযোগ পেলেই ছলে বলে কৌশলে যে ছোট করতে চায় না বরং সর্বদা অনুপ্রাণিত করার চেষ্টা করে, পাশে থাকার জন্য কোন স্বার্থ পুঁজি করে না এমন বৈশিষ্ট্যের মানুষকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করায় জোর দেওয়া উচিত।
অতিরিক্ত প্রত্যাশা পরিহার করা
মানব জীবনে প্রত্যাশা অসীম। প্রত্যাশের সঙ্গে প্রচেষ্টার যুগ সূত্র থাকা আবশ্যক না হলে অনায়াসে হতাশা বাসা বাঁধে। অনেক নবীন শিক্ষার্থী প্রত্যাশা চাপ সামলাতে না পেরে ভেঙ্গে পড়ে। প্রত্যাশা যেখানে কম, সুখেরা সেখানে বসবাস করে। কারো ওপর অথবা কোন কিছুর ওপর অতিরিক্ত প্রত্যাশা না রাখার শ্রেয়, এতে করে পূর্ণতা না আসলেও জীবনে বিষাদের কালো ছায়া নেমে আসে না।
নিজেকে ভালো রাখতে তৎপর থাকা
পৃথিবীর সবচেয়ে নিখুঁত ভালোবাসা হলো নিজের প্রতি ভালোবাসা। নতুন শিক্ষার্থীদের অবশ্যই নিজের প্রতি যতœবান হওয়া উচিত, নিজেকে ভালো রাখার গুরু দায়িত্ব নিজ কাঁধে বহন করতে হবে। ক্যাম্পাসে আসার পরেই সবকিছু নিয়ে এত ব্যস্ত হয়ে পড়ে নিজেকে নিয়ে ভাবার সময় থাকে না। আমরা অন্যকে মূল্য দিতে দিতে নিজের মূল্যায়নের কথা ভুলতে বসি, সব সময় অন্যকে ভালো রাখতে এতটা আত্মনিয়োগ করি নিজের ভালো থাকার কথা ভুলক্রমেও মনে পড়ে না। ফলশ্রুতিতে এত সময় সব মুখোশ খুলে পড়ে, গুরুত্বের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা মানুষগুলোর অপেক্ষায় হতাশার চাদরে আবৃত হয়ে যায়।
তখন ঘুরে তাকানোর বন্দোবস্ত সংকীর্ণ হয়ে যায়। তাই সময় থাকতে শুরু থেকেই নিজের প্রতি যতœবান হওয়া প্রয়োজন। নিজের ভালোবাসার শতভাগ নিজের জন্য ঢেলে দিতে হবে, স্বীয় ভালোবাসার চাদরে মসৃণভাবে মুড়িয়ে রাখতে হবে।
যথাযথ লক্ষ্য নির্ধারণ করা
পাখি উড়তে যেমন ডানা প্রয়োজন, একটা জাহাজ পরিচালনার জন্য যেমন নাবিক প্রয়োজন তদ্রæপ মানবজীবন পরিচালনার জন্য সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য থাকতে হবে। তাই বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শুরু থেকেই লক্ষ্য নির্ধারণ করা অতিব জরুরী কোথায় যেতে চায়, কতটুকু চূড়ায় আরোহন করতে চায় নির্ধারণ করা গেলেই সফলতা আসার সম্ভাবনা প্রবল হয়। অন্যথায় বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের গোধূলি বেলায় কোন দিক দিশা খুঁজে পাওয়া যায় না। স্বপ্ন পূরণের জন্য অবশ্যই থাকতে হবে সুনির্দিষ্ট গন্তব্য।
লক্ষ্যটা স্বপ্নের মধ্যে নির্ধারণ করা উচিৎ যেন স্বপ্ন পূরণের তাড়না লক্ষ্যের কাছে পৌঁছে দেয়। গন্তব্য ছাড়া কখনোই সফলতার সোপানে আরোহণ করা সম্ভব নয়। তাই লক্ষ্য ও স্বপ্ন হতে হবে এক সূত্রে গাঁথা। লক্ষ্যের দিকে মৃদু মৃদু পায়ে হেঁটে যেতে যেতে যেন দেখা হয় স্বপ্নের।
পরিবেশের সাথে মানিয়ে নেওয়া
বিশ্ববিদ্যালয় বিভিন্ন ধর্ম, বর্ণ, জেলা থেকে উঠে আসা মানুষের সমাবেশ। একেক জনের আচার রীতি সংস্কৃতি ভিন্ন ভিন্ন হয়, তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব কিছু নিয়ম নীতি ও সংস্কৃতি আছে। নবীন শিক্ষার্থীদের উচিত যত দ্রæত সম্ভব পরিবেশের সাথে মানিয়ে নেওয়া এবং নিজস্ব বলয় সৃষ্টি করা যেন পরিবার থেকে দূরে থেকেও অভাব টুকু পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে কাটিয়ে উঠা যায়।
নিজের পছন্দকে গুরুত্ব দেওয়া ও প্রতিভার পরিচর্যা করা
সারাদিনে কমপক্ষে এক থেকে দুই ঘন্টা নিজের জন্য রাখতে হবে, যে সময়টা একান্ত নিজের।আত্ম উপলব্ধি করতে হবে কোন কাজটা করতে পছন্দ করি, কোন কাজটা অধিক গুরুত্ব দেওয়া উচিৎ সনাক্ত করতে হবে। নিজের ভেতর লুকিয়ে থাকা সুপ্ত প্রতিভার যতœ নিতে হবে এতে করে প্রতিভার বিচ্ছুরণ ঘটবে। অন্যথায় অযতেœ অবহেলায় অঙ্কুরেই প্রতিভার অপমৃত্যু ঘটবে।
উক্ত বিষয়গুলো মাথায় রেখে বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজের অবস্থান জানান দিলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যায় রঙিন হবে।
শিক্ষার্থী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়