.
দুর্নীতি সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রবেশ করেছে। দেশের বিপুল সংখ্যক মানুষ দুর্নীতিগ্রস্ত সমাজ ও সংস্কৃতির অংশীদার হয়ে উঠেছেন। এক ধরনের মেনে নেওয়ার মনোভাবও চলে এসেছে বহুজনের মধ্যে। সমাজে শিক্ষা, সুরুচি, সুন্দর আচরণ ইত্যাদি ইতিবাচক দিক এবং সুকুমারবৃত্তি যখন পর্যুদস্ত হতে থাকে, কিংবা আড়ালে চলে যেতে থাকে, তখন অর্থবিত্তই মানুষের কাছে বিরাট হয়ে দেখা দেয়। যেনতেন উপায়ে অর্থোপার্জনের অপসংস্কৃতি একটি সমাজকে গ্রাস করলে, সেখানে প্রকট হয়ে ওঠে দুর্নীতি। নিকট অতীতে বহুবার শোনা গেছে একটি স্লোগান। সেটি হলো দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স গ্রহণ করা। যারা এসব বলেছেন, তারাই বাস্তবে রোপণ করেছেন মহাদুর্নীতির বিষবৃক্ষ। সেই বৃক্ষ শাখা-প্রশাখা বিস্তার করেছে, শিকড় ছড়িয়ে দিয়েছে বহুদূর পর্যন্ত। তাই নতুন করে দায়িত্বপ্রাপ্ত কেউ যদি দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার কথা বলেন, তবে স্বাভাবিক কারণেই মানুষ সংশয়ে পড়ে যায়।
এমন কোনো খাত কি খুঁজে পাওয়া যাবে, যেটি দুর্নীতির ছায়ায় লালিত পালিত হয়নি? তাই শুধু স্বাস্থ্য খাতের কথা বলা হলে অন্যরকমই লাগবে। তবু স্বাস্থ্যের কথা এজন্যই বলা যে, এটি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে মানুষের জীবন মরণের সঙ্গে সম্পৃক্ত। বিশেষ করে মহাদুর্যোগ করোনাকালে দেশের স্বাস্থ্য খাতে ব্যাপক মহাদুর্নীতি হয়েছে। মানুষের চরম সংকটকালে যে ব্যক্তি বা যে গোষ্ঠী সেটিকেই পুঁজি করে আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়ে ওঠেন, তারা কি মানুষ? করোনা মহামারির সময় ভাইরাসটির টিকা আমদানি থেকে শুরু করে বিভিন্ন হাসপাতালের সরঞ্জামাদি কেনাকাটায় সীমাহীন দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে একের পর এক। অভিযোগ আছে, তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে চলে এই দুর্নীতির কর্মযজ্ঞ। এরই মধ্যে ৫ জানুয়ারির নির্বাচন শেষে গঠন হয় নতুন সরকার। স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পান ডা. সামন্ত লাল সেন। তিনি সীমাহীন দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করলেও শেষ পর্যন্ত পারেননি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নতুন মহাপরিচালক নানা সংকটের মুখে দায়িত্ব নিলেও স্বাস্থ্য খাতকে দুর্নীতিমুক্ত করাই তার প্রধান লক্ষ্য বলেছেন। প্রতিটা মানুষের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ করবেন তিনি। এমনকি দীর্ঘদিনের বঞ্চনার শিকার চিকিৎসকদের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যেও কাজ করবেন বলে জানিয়েছেন।
স্বাস্থ্যের সঙ্গে অনেক বিষয় জড়িত। এর ভেতর ওষুধ, স্বাস্থ্য পরীক্ষা তথা প্যাথলজি খরচ বড়। এই দুটি খাতেও কি গণমানুষের জন্যে সাশ্রয়ী নীতি গ্রহণ করা সম্ভব হয়েছে? দেশে জীবন রক্ষাকারী বিভিন্ন ওষুধের দাম দফায় দফায় বাড়ছে। বিশেষ করে অসংক্রামক রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধের দাম বেশি বেড়েছে। কারণ, এসব ওষুধ রোগীদের নিয়মিত সেবন করতে হয়। সেই সুযোগে কোম্পানিগুলো এসব ওষুধের দাম বাড়াচ্ছে। দেশের অধিকাংশ মানুষ চিকিৎসা নিতে বাধ্য হয় বেসরকারি খাতে, সেখানে খরচ অনেক বেশি এবং সরকারের প্রায় কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। আরও উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, সেবার মান কিছুটা বাড়ার পরও দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসাসেবা নিতে আসা অধিকাংশ রোগী কোনো ওষুধ পান না। অবস্থার পরিবর্তনে সব মহলকে মানুষের সেবার মহান আদর্শের বিষয়টি মাথায় রেখে আন্তরিকতার সঙ্গে উদ্যোগী হতে হবে। স্বাস্থ্যসেবা মানুষের মৌলিক প্রয়োজন। সেটি পূরণে আন্তরিক ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের বিকল্প নেই। এক্ষেত্রে দুর্নীতির বিষবৃক্ষ উপড়ে ফেলা চাই।