.
মাত্র পাঁচ বছর বয়সী নিষ্পাপ নিষ্কলুষ একটি শিশুর নাম মুনতাহা। প্রকৃত অর্থেই শ্বেতশুভ্র শিউলি ফুলের মতো ফুটফুটে মিষ্টি চেহারা, হাসিখুশি মায়াবী চোখ, এলোমেলো চুল। সেই মুনতাহাকে হত্যা করা হয়েছে নিষ্ঠুর নির্মমভাবে। মুনতাহার খুনিরা পাশবিক ও পৈশাচিকভাবে শুধু হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি, অন্তত সাতদিন ধরে তার লাশ পুঁতে রেখেছিল বাড়ির পাশের ডোবার কাদাপানিতে। মুনতাহা সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার সদর ইউনিয়নের বীরদল ভারারিসৌদ গ্রামের শামীম আহমদের মেয়ে। ৩ নভেম্বর শিশুটি নিখোঁজ হওয়ার পর মুনতাহার সন্ধান চেয়ে প্রথমে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করা হয় ছবিসহ। পরে শিশুটিকে অপহরণ করা হয়েছে মর্মে বাবা শামীম আহমদ স্থানীয় থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) এবং অপহরণ মামলা দায়ের করেন। খুনিদের একজন প্রতিবেশী নারী গভীর রাতে বাড়ির পাশের ডোবার কাদাপানি থেকে মুনতাহার লাশ তুলে পাশের একটি পুকুরে ফেলতে গিয়ে হাতেনাতে ধরা পড়ে স্থানীয়দের হাতে।
পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে জানা যায়, মুনতাহার মর্মান্তিক হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িত এককালে তারই গৃহশিক্ষিকা, যে মেয়েটি এলাকায় প্রাইভেট পড়াত। সম্প্রতি মুনতাহার বাবা মেয়েকে ওই গৃহশিক্ষিকার কাছে আর পড়তে দেননি। পুলিশের ধারণা, মুনতাহাকে প্রাইভেট পড়তে না দেওয়ার ক্ষোভ থেকেই ঘটতে পারে এই হত্যাকান্ড। মর্মান্তিক এই খুনের ঘটনায় তিন নারীসহ চারজনকে আটক ও রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে একজন। উল্লেখ্য, মুনতাহার লাশ উদ্ধারের সময় তার গলায় রশি বাঁধা ছিল। আপাত তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এই নিষ্ঠুর হত্যাকান্ডে স্থানীয়রা স্তম্ভিত, শোকে বাকরুদ্ধ। হৃদয়বিদারক এই ঘটনায় দেশবাসীও হতবিহ্বল ও শিহরিত। নির্মম এই হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িতদের তদন্তসাপেক্ষে দ্রুত বিচারসহ ফাঁসি দেওয়ার দাবি উঠেছে। আমরাও নিষ্পাপ শিশু মুনতাহার মর্মান্তিক হত্যাকা-ন্ডের তীব্র নিন্দা জানাই। শিশুটির পিতামাতা ও স্বজনদের জানাই গভীর সমবেদনা।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের মাসিক নির্যাতনের তথ্য থেকে জানা যায়, চলতি বছর সেপ্টেম্বর মাসেই কেবল ১৩০ জন শিশু বিভিন্ন ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়েছে। শিশুকে শারীরিকভাবে অত্যাচার করার মধ্যে পড়ে হাত, জুতা, বেল্ট, খুন্তি, বোতল দিয়ে মারা, লাথি মারা, টানাহেঁচড়া করা, চুল টানা, দাঁড় করিয়ে রাখা, হাঁটু গেড়ে বসিয়ে রাখা, শরীর পুড়িয়ে দেওয়া, ঝাঁকি দেওয়া, ছুড়ে ফেলা, চিমটি দেওয়া ইত্যাদি। গত বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর ঢাকায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ইউনিসেফের দেওয়া তথ্যমতে, বাংলাদেশে বর্তমানে ৫ কোটি ৭০ লাখের কাছাকাছি শিশু রয়েছে, যা দেশের মোট জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ। এর মধ্যে ১৪ বছরের নিচে প্রায় সাড়ে ৪ কোটি শিশু বাড়িতে শারীরিক ও মানসিক সহিংসতার শিকার হচ্ছে। অর্থাৎ, প্রতি ১০ শিশুর মধ্যে ৯ জন বা ৯০ শতাংশ শিশু নির্যাতিত এবং প্রতি সপ্তাহে মারা যাচ্ছে ২০ শিশু। ঘটনার যথাযথ তদন্ত না হওয়া, থানা-পুলিশের গাফিলতি, সময়মতো চার্জশিট না দেওয়া, তদন্ত ও বিচারের দীর্ঘসূত্রতাসহ নানা কারণে শিশুহত্যা ও নিপীড়নকারীরা পার পেয়ে যায়। অথবা গুরুপাপে লঘুদন্ড ঘটে। শিশু মুনতাহার ক্ষেত্রে যেন তেমনটি না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনকে।