ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০২ জানুয়ারি ২০২৫, ১৯ পৌষ ১৪৩১

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা ও বিশ্বে তার প্রভাব

রায়হান আহমেদ তপাদার

প্রকাশিত: ২০:৫৭, ৯ নভেম্বর ২০২৪

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা ও বিশ্বে তার প্রভাব

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট অনন্য সাধারণ সাংবিধানিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতার অধিকারী

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট অনন্য সাধারণ সাংবিধানিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতার অধিকারী। তিনি মার্কিন শাসন বিভাগের প্রধান বা আনুষ্ঠানিক রাষ্ট্রপ্রধান, আবার শাসন বিভাগের প্রকৃত কর্ণধার। তিনি ইংল্যান্ডের রাজার মতো রাজত্ব করেন ও প্রধানমন্ত্রীর মতো শাসন করেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতি আর ক্ষমতার প্রশ্নের প্রাসঙ্গিক কারণেই সেটা হয়।  কিন্তু কীভাবে দেশটির প্রেসিডেন্ট পদ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠল, এর ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট, নির্বাহী বিভাগ ও কংগ্রেসের মধ্যে সম্পর্কে ভারসাম্য এবং প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা ও বিশ্বে তার প্রভাব বিস্তার নিয়ে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট কেবল আমেরিকানদের প্রাত্যহিক জীবনের অংশ নন, বরং বিশ্বজুড়েই মানুষ প্রেসিডেন্টকে সব ধরনের সংবাদ ও প্রচারমাধ্যমে দেখেন নিয়মিত। প্রেসিডেন্ট যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাহী বিভাগের নেতৃত্ব দেন, একই সঙ্গে পৃথিবীজুড়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিত্ব করেন। নতুন পলিসি প্রবর্তন, অভ্যন্তরীণ রাজনীতির সংকট, বৈশ্বিক রাজনীতির পরিবর্তন কিংবা রাষ্ট্রীয় সফর সবই গুরুত্বপূর্ণ।

তাই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট সব সময় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে তাই পৃথিবীজুড়েই থাকে তুমুল আগ্রহ, এটিকে আখ্যায়িত করা হয় বৈশ্বিক রঙ্গমঞ্চ হিসেবেও। বর্তমানে প্রেসিডেন্ট অভ্যন্তরীণ আর পররাষ্ট্র সংক্রান্ত প্রায় সব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া ও দেনদরবার করার ক্ষমতা ভোগ করলেও প্রেসিডেন্ট পদটি তৈরির সময় পরিস্থিতি ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা ঘোষণার সময় রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রবল জনমত গড়ে উঠেছিল। স্বাধীনতা ঘোষণার পরপরই কন্টিনেন্টাল কংগ্রেস কলোনিগুলোকে নতুন সংবিধান তৈরির তাগাদা দেয়, যাতে দ্রুত রাষ্ট্রকাঠামো গড়ে তোলা যায়।
নতুন তৈরি করা সংবিধানেই ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণের কথা থাকলেও নিউইয়র্ক ছাড়া সব জায়গাতেই নির্বাহী বিভাগের প্রধানের পদটি দুর্বল করে আইন বিভাগের মুখাপেক্ষী করে রাখা হয়। আইনসভার মাধ্যমেই অধিকাংশ ক্ষেত্রে নির্বাহী বিভাগের প্রধান নির্বাচিত হতেন, নির্বাহী বিভাগের প্রধানদের মেয়াদও করে রাখা হয় এক বছর। ছিল না কোনো ভেটো ক্ষমতাও। ম্যাসাচুসেটসে গভর্নর আইনসভা দ্বারা নির্বাচিত না হলেও প্রিভি কাউন্সিল দ্বারা গভর্নরের ক্ষমতা সীমিত করা হয়। থমাস জেফারসনের মতো অনেকেই আইনসভার ক্ষমতা কেন্দ্রীভূতকরণের সমালোচনা করেছিলেন। ভার্জিনিয়ার গভর্নর জেফারসনের মত ছিল, এক ব্যক্তি স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে পারলে ১৭৩ জনের ভার্জিনিয়ার আইনসভাও স্বৈরতন্ত্র তৈরি করতে পারে।

এসব অভিজ্ঞতা নিয়েই ডেলিগেটরা ১৭৮৭ সালের সাংবিধানিক কনভেনশনে গিয়েছিলেন। অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন নির্বাহী বিভাগকে শক্তিশালী করতে। নির্বাহী বিভাগকে শক্তিশালী করার প্রশ্নটা কনভেনশনে দীর্ঘ বিতর্কের মধ্য দিয়ে গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের আর্কিটেক্ট জেমস ম্যাডিসন এ নিয়ে তার দোদুল্যমানতা চিঠিতে জানিয়েছিলেন জর্জ ওয়াশিংটনকে। আজকে যুক্তরাষ্ট্রের একজন প্রেসিডেন্ট থাকাকে আমরা স্বাভাবিকভাবে নিলেও কনভেনশনে এটি নিয়ে বিতর্ক হয়েছে। বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন, রান্ডোলফরা চেয়েছেন বহু নির্বাহীর নেতৃত্ব। পেনসিলভানিয়ার ডেলিগেট জেমস উইলসন প্রস্তাব দেন একক নেতৃত্বের।

প্রাথমিক বিতর্ক শেষে একক নেতৃত্বের প্রস্তাব পাস হয়, সঙ্গে শর্ত সাপেক্ষে দেওয়া হয় ভেটো ক্ষমতাও। তবে নির্বাহী বিভাগের ক্ষমতা নিয়ে নতুন বিতর্ক তৈরি হয় নিউ জার্সি প্ল্যান উত্থাপিত হলে। প্রায় আড়াই শতাব্দী পার করেছে যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র, কখনোই অনির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা যায়নি। প্রেসিডেন্টই একমাত্র পদ, যেখানে সব আমেরিকানের ম্যান্ডেট নিয়ে নির্বাচিত হন একজন ব্যক্তি। 
যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্টের স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া ও কংগ্রেসের কাছে জবাবদিহির দুটি সুযোগই রাখা হয়েছে। দেশের অভ্যন্তরীণ সব নীতিতে প্রেসিডেন্ট যেমন ভূমিকা রাখেন, দেশের বাইরে ভূমিকা রাখেন প্রধান কূটনীতিক হিসেবে। এসব বিতর্ক শেষে পেনসিলভানিয়ার ডেলিগেট মরিসের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের কমিটি হয়। কমিটির দায়িত্ব ছিল সংবিধানের চূড়ান্ত খসড়া লেখা। দীর্ঘ সময় নিউইয়র্কে থাকা মরিস ব্যক্তিগতভাবে ছিলেন শক্তিশালী নির্বাহী বিভাগের পক্ষে। সর্বশেষ যে সংবিধান প্রস্তুত হয়, তার আলোকে নির্বাহী বিভাগের ক্ষমতার কিছু পরিসর স্পষ্ট হয়। যেমন- কংগ্রেসের সঙ্গে প্রেসিডেন্টের সম্পর্ক।

দুর্বল নির্বাহী বিভাগে প্রেসিডেন্ট সব সিদ্ধান্তে কংগ্রেসের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকেন শক্তিশালী নির্বাহী বিভাগের মডেলে কংগ্রেসকে পাস কাটিয়ে প্রেসিডেন্ট যা ইচ্ছা সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। যুক্তরাষ্ট্রে এমন একটি মডেল তৈরি করা হয়, যাতে প্রেসিডেন্ট স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন, আবার কংগ্রেসের কাছেও জবাবদিহির সুযোগ রাখা হয়। দুর্বল নির্বাহী বিভাগ মডেলে একাধিক প্রেসিডেন্ট থাকেন, সবল নির্বাহী বিভাগে থাকেন একজন। কনস্টিটিউশনাল কনভেনশন শেষে যে সংবিধান গৃহীত হয়, সেখানে একক প্রেসিডেন্টের পাশাপাশি কিছু বিষয়ে সিনেটের পরামর্শক কমিটি তৈরির সুযোগ রাখা হয়।

আইনসভায় তৈরি হওয়া আইনকে বাতিল করা কঠিনই রাখা হয়। নীতিগত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের দায়িত্ব থাকে প্রেসিডেন্টের নেতৃত্বাধীন বিভাগের ওপরই। দুর্বল নির্বাহী বিভাগের মডেলে প্রেসিডেন্ট আইনসভা দ্বারা নির্বাচিত হন, পুনরায় নির্বাচিত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। সবল নির্বাহী বিভাগের মডেলে আবার ঠিক উল্টোটা। বিতর্ক শেষে ইলেকটোরাল কলেজের মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের বিধান তৈরি হয়, সেখানে কোনো মেয়াদসীমা ছিল না। 
পরবর্তী সময়ে জর্জ ওয়াশিংটনের মাধ্যমে দুই মেয়াদের বেশি প্রেসিডেন্সি না করাটা প্রথায় পরিণত হয়, যেটি আইনে পরিণত হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে। যারা শক্তিশালী আইনসভার পক্ষে ছিলেন, তাদের চাওয়া ছিল কংগ্রেস চাওয়ামাত্রই সংখ্যাগরিষ্ঠতা দিয়ে প্রেসিডেন্টকে অভিশংসন করার ক্ষমতা। আবার শক্তিশালী নির্বাহী বিভাগের পক্ষের লোকজন চাচ্ছিলেন, এই ক্ষমতা আইন বিভাগ বা বিচার বিভাগের কাছে গেলেও তাকে অত্যন্ত সংকুচিত করে রাখবে। সর্বশেষ প্রেসিডেন্টকে হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভে সংখ্যাগরিষ্ঠতা আর সিনেটে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার আলোকে অভিশংসনের সুযোগ রাখা হয়। দুর্বল নির্বাহীরা সাধারণত আইনসভা কর্তৃক দেওয়া সীমিত ক্ষমতা ভোগ করতেন।

বিপরীতে ছিল সংবিধান থেকে অসীম ক্ষমতা পাওয়ার সুযোগ, যেখানে আইনসভা কোনো হস্তক্ষেপ করতে পারবে না। সংবিধান প্রেসিডেন্টকে স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা দেয়, সঙ্গে যুক্ত করে দেয় কংগ্রেসের জবাবদিহি চাওয়ার সুযোগও। যেমন- প্রেসিডেন্ট সামরিক বাহিনীর সর্বাধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পান, কিন্তু যুদ্ধ শুরুর জন্য প্রয়োজন আইনসভার অনুমোদন। জর্জ ওয়াশিংটন কিংবা জন অ্যাডামসের সময় শত্রুপক্ষের কোনো যুদ্ধযানে আক্রমণ করা হবে, যুদ্ধের গতি কোন্ দিকে যাবে-সেটিও কংগ্রেসই ঠিক করত। এখন অবশ্য প্রেসিডেন্টরা এসব সিদ্ধান্ত নিজেরাই নেন, কিছু কিছু ক্ষেত্রে কংগ্রেসের সিদ্ধান্তকে উপেক্ষাও করেন।

পররাষ্ট্রনীতি আর যুদ্ধের বিষয়ে ক্ষমতার ভারসাম্য তৈরি করা হয়। পররাষ্ট্রনীতির বিষয়ে কংগ্রেসের অনুমোদনক্রমে নির্বাহী বিভাগ ও বিচার বিভাগ থেকে কর্মকর্তাদের নিয়োগ করার সুযোগ পান প্রেসিডেন্ট। যুদ্ধ শুরুর বিষয়ে প্রেসিডেন্টের যেমন কংগ্রেস থেকে অনুমোদন নিতে হয়, প্রেসিডেন্টের করা সব চুক্তিতেও সিনেটের অনুমোদন নেওয়ার বিধান রাখা হয়।
পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা প্রায় সব সময়ই নিরঙ্কুশ ছিল, এখনো আছে। শক্তিশালী আইনসভার পক্ষের ডেলিগেটরা প্রধান নির্বাহীকে কোনো ভেটো ক্ষমতা দিতে চাননি। পাস হওয়া সংবিধানে প্রেসিডেন্টকে ভেটো ক্ষমতা দেওয়া হয়। একইভাবে সিনেটকেও ভেটো ক্ষমতায় নেওয়া সিদ্ধান্ত উল্টে দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয় দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা দিয়ে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্সির বৈশ্বিক আবেদন যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন থেকে জর্জ ওয়াশিংটন পর্যন্ত ৪৬ জন এই দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০ জানুয়ারির পর দায়িত্ব নিচ্ছেন নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর মধ্যে প্রায় আড়াই শতাব্দী পার হয়েছে, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র কখনোই অনির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা যায়নি।

দুটি বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে যুক্তরাষ্ট্র, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে নেতৃত্ব দিয়েছে পুঁজিবাদী বিশ্বের। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতা বেড়েছে, বেড়েছে বৈশ্বিক আবেদনও। অনেক কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের অনেক সুসংহত প্রতিষ্ঠান থাকার পরও প্রেসিডেন্ট পদই হয়েছে মুখ্য। প্রেসিডেন্টই একমাত্র পদ, যেখানে সব আমেরিকানের ম্যান্ডেট নিয়ে একজন ব্যক্তি নির্বাচিত হন। কংগ্রেসের অনুমোদন সাপেক্ষে তিনি নির্বাহী বিভাগে যে কাউকে নিয়োগ দিতে পারেন, আবার তাকে পদচ্যুতও করতে পারেন। জর্জ ডব্লিউ বুশের সময় প্রেসিডেন্টের এই নির্বাহী ক্ষমতার প্রয়োগ দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে অনেকের।

যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক পরিচিতি সংঘাত নিরসনের ক্ষেত্রে যেমন আছে, সংঘাত তৈরি কিংবা সংঘাতের পক্ষ হওয়ার ক্ষেত্রেও আছে। সংবিধানের দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ, যেখানে নির্বাহী বিভাগের ক্ষমতার কথা আলোচনা করা হয়েছে, সেখানকার ভাষাগত অস্পষ্টতা প্রেসিডেন্টের ক্ষমতাকে বৃদ্ধির সুযোগ দিয়েছে। প্রধান নির্বাহী হিসেবে দেশের অভ্যন্তরীণ সব নীতিতে প্রেসিডেন্ট যেমন ভূমিকা রাখেন, দেশের বাইরে ভূমিকা রাখেন প্রধান কূটনীতিক হিসেবে। 
বিশ্বজুড়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অন্যান্য দেশের হওয়া চুক্তিগুলোর মূল অনুমোদনও আসে প্রেসিডেন্ট থেকেই। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের বর্তমান ক্ষমতা অনেকটা যুক্তরাজ্যের সংবিধানের মতো অলিখিত হয়ে গেছে। কংগ্রেসের অনুমোদন ছাড়া ট্রুম্যান যেভাবে কোরিয়ায় সামরিক বাহিনী পাঠিয়েছিলেন, সেটি কংগ্রেসের সীমাবদ্ধতাকেই তুলে ধরে। ট্রুম্যানের মতো পরবর্তী সময়ে অনেক প্রেসিডেন্টই যুদ্ধ ঘোষণা না করে বিদেশের মাটিতে সৈন্য পাঠিয়েছেন। ১৯৭৩ সালে কংগ্রেসের অনুমোদন ছাড়া দুই মাসের বেশি বিদেশের মাটিতে সৈন্য রাখার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। এরপরও বৈশ্বিক সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্রের সংশ্লিষ্টতা কমেনি।

প্রেসিডেন্টরা ব্যক্তিগত উদ্যোগে যখন ক্ষমতা সংহত করেছেন, পরবর্তী প্রেসিডেন্ট এসে সেই সংহত অবস্থান থেকে নিজের প্রেসিডেন্সি শুরু করেছেন। যেমনÑ থিওডর রুজভেল্টের সময়ই যুক্তরাষ্ট্র বৈশ্বিক শক্তি হিসেবে গড়ে ওঠে। জাপানের উত্থানের মধ্যে প্যাসিফিকে স্বার্থ রক্ষায় মধ্যস্থতা করেন পোর্টমাউথ চুক্তিতে, সৈন্য পাঠান কিউবা আর ডমিনিকান রিপাবলিকে। যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনী পৃথিবীজুড়ে অগ্রসর হতে শুরু করে। দ্রুত এগিয়ে যায় আমেরিকার শিল্পায়ন। উড্রো উইলসন এসে দেশের অর্থনীতি সংস্কারের পাশাপাশি প্রথম বিশ্বযুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্ব দেন। প্রস্তাবনা দেন লিগ অব ন্যাশনস তৈরির। ফ্রাঙ্কলিন ডি রুজভেল্ট এসে মহামন্দা কাটানোর জন্য যুদ্ধ-অর্থনীতি তৈরি করেন।

এখনো যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির বড় অংশ আসে অস্ত্র ব্যবসা থেকে। এর পাশাপাশি ছিল বৈশ্বিক মঞ্চে প্রেসিডেন্ট রুজভেল্টের মধ্যস্থতা করার ক্ষমতা, যেটি যুক্তরাষ্ট্রকে পরিণত করে পুঁজিবাদী পৃথিবীর নেতা হিসেবে। পরিশেষে বলা যায় যে, মার্কিন রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার গুরুত্ব ও ব্যাপকতা বিরোধ ও বিতর্কের ঊর্ধ্বে। তার সব থেকে বড় পরিচয় হলো তিনি জাতির নেতা, জনসাধারণের মুখপাত্র। মার্কিন রাষ্ট্রপতি হলেন মার্কিন মুলুকের নৈতিক মুখপাত্র।
লেখক : যুক্তরাজ্য প্রবাসী গবেষক

×