দেশে বিভিন্ন ধরনের মাদকের ব্যবহার, ব্যবসা ও চোরাচালান নতুন নয়। মাদক ব্যবসার আড়ালে বিদেশে অর্থপাচারের বিষয়টিও বহুল আলোচিত। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর মাদকের বড় কারবারিরা গা-ঢাকা দেয়। অনেকেই আবার পাড়ি জমিয়েছে বিদেশে। তাই বলে মাদক ব্যবসা বন্ধ হয়নি। বন্ধ হয়নি এর ব্যবহারও। পুলিশ ও নারকোটিক্স বিভাগের তথ্যে জানা যায়, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কিছু অবনতি ঘটায় আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে মাদক কারবারিরা। সম্প্রতি রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় জেনেভা ক্যাম্পে মাদক ব্যবসা ও বেচাকেনাকে কেন্দ্র করে সক্রিয় হয়ে উঠেছে একাধিক গ্রুপ। মাদক ব্যবসা ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে গোলাগুলির ঘটনায় অন্তত দশজন নিহতসহ অনেক আহতের খবর আছে। পল্লবীতে দুই গ্রুপের সহিংস সংঘাতে নিহত হয়েছেন এক গৃহবধূ। ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তারসহ বিপুল পরিমাণ বিভিন্ন মাদক আটকের তথ্যও দিয়েছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। এই সূত্রের খবর, বর্তমানে দেশে মাদকসেবীর সংখ্যা ৮০ লাখ। আশঙ্কা এই যে, তরুণদের মধ্যে ইয়াবাসহ মাদকসেবীর সংখ্যা বাড়ছে দিন দিন। পরে তারা জড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন অপরাধে।
সারাদেশে বর্তমানে মাঠপর্যায়ে সক্রিয় রয়েছে অন্তত লক্ষাধিক খুচরা মাদক ব্যবসায়ী, যাদের মধ্যে শতাধিক গডফাদার, এমনকি জনপ্রতিনিধিও রয়েছে। সবচেয়ে উদ্বেগজনক খবর হলো, দেশ থেকে মাদক ব্যবসা ও চোরাচালানের আড়ালে প্রতিবছর অন্তত দশ হাজার কোটি টাকার সমপরিমাণ অর্থপাচার হয়ে যাচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। বর্তমানে ২৪ ধরনের মাদক বেশি বিক্রি হচ্ছে। এসবের মধ্যে ইয়াবা, গাজা, ফেনসিডিল, মরফিন, হেরোইন, আইস ইত্যাদি বেশি। নতুন নতুন মাদকও আসছে দেশে। সে তুলনায় মাদক কারবারিদের গ্রেপ্তার ও মামলার সংখ্যা আশানুরূপ নয়। কেননা, চোরাচালানিদের রয়েছে আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক ও যোগাযোগ, আধুনিক প্রযুক্তিসহ নিত্যনতুন অপকৌশল। আছে সর্বোপরি বিপুল অর্থের হাতছানি ও লেনদেন। যেটি লক্ষণীয় তা হলো, অধিকাংশ ক্ষেত্রে ছোট মাদক কারবারি ও চোরাচালানিরা ধরা পড়াসহ জেল খাটলেও, কিছুদিন পরেই গডফাদারদের সৌজন্যে জামিন পেয়ে বেরিয়ে যায়। আর পালের গোদারা থেকে যায় ধরাছোঁয়ার বাইরে।
যেটি শঙ্কার তা হলো, আন্তর্জাতিক মাফিয়া চক্র কোটি কোটি টাকার মাদক পাচারের জন্য ট্রানজিট রুট হিসেবে ব্যবহার করে থাকে বাংলাদেশকে। দেশে কোকেন, অ্যামফিটামিন, ইয়াবা, হেরোইন, ফেনইথাইলামিনসহ প্রাণঘাতী মাদক উৎপন্ন না হলেও, প্রায়ই বিমানবন্দরসহ বিভিন্ন রুটে জব্দ হচ্ছে এসবের চালান। ফলে, প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে নিরাপত্তা। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ক্ষুণ্ন হচ্ছে দেশের ভাবমূর্তি। তদুপরি মাদক পাচারের সঙ্গে জড়িত বাহক শ্রেণির মানুষ ধরা পড়লেও ডন ও গডফাদাররা থেকে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। আবার বাহকরা ধরা পড়ার পর সাক্ষ্য-প্রমাণের অভাবে জামিনে বেরিয়ে পড়ছে। পরবর্তীতে আবারও তারা মাদক পাচারের বাহক হিসেবে কাজ করছে। মাদকের ভয়াবহ আগ্রাসন রোধে দেশে মাদক সেবন ও বহনের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রয়েছে। তারপরও মাদকের চালান ও ব্যবহার কমানো যাচ্ছে না। কাজেই মাদকের সর্বাত্মক প্রতিরোধে সরকারকে আরও তৎপর এবং কঠোর হওয়া জরুরি। মাদকের নেতিবাচক প্রভাবে যুবসমাজ ধ্বংসের দিকে পা বাড়ালে সমাজ ও সংস্কৃতি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। বাধাগ্রস্ত হতে পারে দেশের সার্বিক উন্নয়ন।
মাদক ব্যবসার অর্থপাচার
শীর্ষ সংবাদ: