ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ কার্তিক ১৪৩১

লেন্স স্থাপনে নৈরাজ্য

প্রকাশিত: ২০:১৪, ৮ নভেম্বর ২০২৪

লেন্স স্থাপনে নৈরাজ্য

মানবদেহের অত্যন্ত সংবেদনশীল এবং গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হলো চোখ। রোগীদের চোখের চিকিৎসা করার ক্ষেত্রে চিকিৎসকরা প্রয়োজনে লেন্স ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তাছাড়া আজকাল চশমার পরিবর্তে কন্টাক্ট লেন্সের ব্যবহারও বেশ লক্ষণীয়। সম্প্রতি দেশের স্বনামধন্য এক পত্রিকার প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, দৃষ্টিশক্তির সমস্যা নিরসনে চোখে কৃত্রিম স্বচ্ছ লেন্স স্থাপনে রীতিমতো নৈরাজ্য চলছে। গত ডিসেম্বরে বিভিন্ন আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের ১২৯ ধরনের লেন্সের দাম নির্ধারণ করে দেয় ঔষধ প্রশাসন। সেই সঙ্গে হাসপাতালগুলোতে নতুন মূল্য তালিকা নোটিস বোর্ডে প্রদর্শনেরও নির্দেশ রয়েছে। তারপরও প্রায় কোনো হাসপাতালেই এই মূল্য তালিকা দৃশ্যমান নেই। উল্লেখ্য, দেশে চোখের চিকিৎসার একমাত্র বিশেষায়িত হাসপাতাল রাজধানীর আগারগাঁওয়ের চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট। এখানে রোগীর চাপ বেশি থাকার কারণে একটি ছানি অপসারণে অস্ত্রোপচারের তারিখ পেতে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়। ফলে, বাধ্য হয়ে বেসরকারি হাসপাতালে ছানি অপারেশন করাতে যান অনেকে। আর এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে লেন্সের দাম কয়েক গুণ বাড়িয়ে প্যাকেজের মাধ্যমে ছানি অপারেশন করছে  বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, প্যাকেজের মাধ্যমে অপারেশনে ওটি চার্জ, সিট ভাড়া ও ওষুধের খরচসহ সার্ভিস চার্জের নামে নানা অজুহাতে হাসপাতালগুলো রোগীদের কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নিচ্ছে কয়েক গুণ বেশি অর্থ। এক্ষেত্রে রোগীদের প্রদত্ত বিলে আলাদা করে লেন্সের দাম উল্লেখ থাকে না। এমনকি প্যাকেজ ব্যবস্থায় অপারেশনে রোগীরা ইচ্ছা করলেও নিজেদের পছন্দের সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান থেকে লেন্স কিনতে পারেন না। ফলে, রোগীরা হয়রানি ও প্রতারণার শিকার হচ্ছেন এবং লেন্সের দাম নিয়েও ধোঁয়াশায় থাকছেন। অথচ ঔষধ প্রশাসনের নিয়ম অনুযায়ী, প্যাকেজে অপারেশন করা নিষেধ। উপরন্তু নিবন্ধন বাতিলের পরও বিভিন্ন হাসপাতালে অতিরিক্ত দামে চোখের লেন্স সরবরাহ করছে অনেক প্রতিষ্ঠান। ঔষধ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের কমিশন প্রদানের প্রলোভন দেখিয়ে এই কাজ হচ্ছে, যা রীতিমতো উদ্বেগজনক।
রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের হাসপাতালগুলোর ব্যাপক অব্যবস্থা-অনিয়ম-দালাল ও দুর্নীতি সর্বজনবিদিত। দুই-একটি বিরল-ব্যতিক্রম বাদে বেশিরভাগ সরকারি হাসপাতালের দশা বেহাল, চিকিৎসাসেবা অপর্যাপ্ত ও হয়রানিমূলক। বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবাও দিন দিন ব্যয়বহুল হয়ে পড়ছে। ওষুধের দাম লাগামহীন বেড়ে যাওয়ায় স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য যথাযথ ও পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসা গ্রহণ বর্তমানে প্রায় দুঃসাধ্য। চোখের সুস্থতা সামগ্রিক স্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য। তাই সব ধরনের ঝুঁকি এবং বিপদ থেকে এই বিশেষ অঙ্গটিকে নিরাপদ রাখা আবশ্যক। চোখের চিকিৎসায় বাজারে বিভিন্ন দাম ও মানের লেন্স পাওয়া যায়। তবে চোখে শুধু দামি লেন্স লাগালেই নিশ্চিন্ত থাকা যাবে এমনটির নিশ্চয়তা নেই। লেন্স স্থাপনের কাজটি যথাযথ না হলে যত দামি লেন্সই চোখে বসানো হোক না কেন, তা কোনো উপকারে আসে না। আবার চোখে সঠিকভাবে স্থাপন করা গেলে স্বল্পমূল্যের লেন্সেও দিব্যি কাজ চালিয়ে যাওয়া যায়। কাজেই চোখের চিকিৎসায় লেন্স স্থাপনের ক্ষেত্রে রোগীদের হয়রানি দূর করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ, ব্যবসায়ী ও চিকিৎসকসহ সকলের সচেতনতা কাম্য।

×