ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ কার্তিক ১৪৩১

রেল যাত্রায় সুরক্ষা সংকট

সৈয়দা ফারিভা আখতার

প্রকাশিত: ১৯:১৯, ৮ নভেম্বর ২০২৪; আপডেট: ১৯:৩২, ৮ নভেম্বর ২০২৪

রেল যাত্রায় সুরক্ষা সংকট

বাংলাদেশের পরিবহন ব্যবস্থার মধ্যে অন্যতম জনপ্রিয় মাধ্যম হলো রেলপথ। এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাওয়ার জন্য বা বিভিন্ন কাজে এক দেশ থেকে আরেক দেশে যাতায়াত করার জন্য রেলপথ ব্যবহার করা হয়। প্রতিদিন বহুযাত্রী রেলপথ ব্যবহার করে তারা তাদের গন্তব্যে পৌঁছায়। কিন্তু এই রেলযাত্রা যতটা সুবিধাজনক ঠিক ততটাই এর সাথে জড়িত আছে নিরাপত্তার ঝুঁকি। বিভিন্ন ধরনের দুর্ঘটনা, অপরাধ, অপরিকল্পিত ভাবে ট্রেন চলাচল এবং ট্রেনের ভেতরে বা স্টেশনে ছিনতাই, যৌন হয়রানি ইত্যাদি অনেক বিষয়েই যাত্রীদের নিরাপত্তা অনেক বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব বিষয় মাথায় রেখে আমাদের মাঝে অনেক প্রশ্ন উঠে আসে। এই রেলযাত্রা কি আসলেই নিরাপদ? রেলপথে যাত্রা করার সময় আমাদের সুরক্ষা কি আসলেই সুনিশ্চিত?

দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় এক গুরুত্বপূর্ণ মিকা রাখে রেল পরিবহন। যাত্রীদের জন্য এই রেলব্যবস্থা বেশ হুমকির মুখে এসে দাঁড়িয়েছে। গত কিছু বছর ধরে রেলপথ নিয়ে নানা ধরনের দুর্ঘটনা অস্বস্তিকর খবরও আসছে। কিন্তু এর মধ্যে সবথেকে বড় দুর্ঘটনা হলো ট্রেন দুর্ঘটনা। এই কিছুদিন আগেই রাজশাহীর কাদিরগঞ্জে ট্রেনের সাথে এক পিকআপের ধাক্কায় তিনজন যাত্রীসহ মোট পাঁচজন আহত হয়েছে। রাজশাহীর রেলস্টেশন থেকে ছেড়ে যাওয়া দ্রæ গতির একটি ট্রেন কাদিরগঞ্জ গ্রেটাররোড মসজিদ এলাকা দিয়ে পার হচ্ছিলো ঠিক সেই সময় রেলক্রসিং দিয়ে উপশহরের দিকে যাওয়ার পথে নীল কালারের একটি পিকআপের সাথে ট্রেনটির ধাক্কা লাগে এবং ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। রেলওয়ে ক্রসিংয়ের এই অব্যবস্থাপনা যাত্রীদের জীবনকে মারাত্মক ঝুঁকির মুখে এনে ফেলেছে। এছাড়াও পুরনো রেললাইনে এবং ট্রেনের ত্রæটি এমনকি সিগন্যালিং সিস্টেমের সমস্যাও প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে। আবার দেখা গেছে, অনেক স্থানে রেলক্রসিংয়ে সেফটি গেট বা সিগন্যাল ব্যবস্থা নেই। যার ফলে পথচারীরা দুর্ঘটনার শিকার হন। এমনকি ট্রেনের গতির কারণে অনেক সময় পথচারীরা রেললাইন পার করার সময় দুর্ঘটনার শিকার হন। এই দুর্ঘটনাগুলোর কারণে বহু মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে এমনকি আহতও হচ্ছে অনেক যাত্রী। এসব দুর্ঘটনা শুধু যে শারীরিকভাবেই যাত্রীদের ক্ষতিগ্রস্ত করছে বিষয়টা তা না বরং সামাজিক অর্থনৈতিক দিক থেকেও ব্যাপক ক্ষতির প্রভাব ফেলছে। এসব দুর্ঘটনার ফলে যাত্রীদের যাত্রা বিলম্বিত হচ্ছে, ফলে তাদের কর্মজীবন, ব্যবসা এবং শিক্ষা জীবনেও ব্যাপক প্রভাব পড়ছে। এছাড়াও, ট্রেন দুর্ঘটনার কারণে অনেক পরিবার তাদের প্রিয়জনকে হারিয়ে শোকাহত হয়ে পড়ে। এসব দুর্ঘটনা দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতা এবং জনস্বাস্থ্যের উপর ব্যাপকভাবে প্রভাব ফেলছে।

এছাড়াও রেলপথে চুরি, ছিনতাই এবং অন্যান্য আরো অনেক অপরাধমূলক কার্যকলাপের শিকার হয় রেলযাত্রী।

ট্রেনের অতিরিক্ত ভিড় এবং রেলস্টেশনের নির্জন এলাকাগুলোতে অপরাধীরা সহজেই আক্রমণ চালায় এবং যাত্রীদের সাথে থাকা তাদের মূল্যবান জিনিসগুলো চুরি হওয়ার ঘটনাও বেশ শোনা যায়। আবার দেখা গেছে, রেলপথে নারী যাত্রীদের জন্য নিরাপত্তার তেমন কোনো সুযোগ সুবিধা নাই। এমনকি দীর্ঘযাত্রার সময় নারীদের জন্য আলাদা কমপ্লিট নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং শৌচাগারের ব্যবস্থাও নেই। যার কারণে নারীযাত্রীদের বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। এগুলা ছাড়াও বিভিন্ন সময় ট্রেনের ভিতরে যাত্রীদের বিভিন্ন ধরনের বিশৃঙ্খলা অস্বস্তিকর পরিবেশের সম্মুখেও পড়তে হয়। বিশেষ করে, কোনো ট্রেনের জন্য যাত্রীদের ধাক্কাধাক্কি কিংবা আগে ওঠার প্রতিযোগিতাতো প্রায়ই দেখা যায়। এমনকি ট্রেনের টিকেট যাচাইয়ের ক্ষেত্রেও অনেক অব্যবস্থাপনা দেখা যায়। ধরনের পরিস্থিতি যাত্রীদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি করে, যা পরবর্তীতে অনেক বড় ধরনের সংঘর্ষে পরিণত হয়। আবার বিশ্ববিদ্যালয় বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছুটির দিনে গুলোতে রেলপথে অনেক ভিড় দেখা যায়। ফলে যাত্রীদের জন্য সিট পাওয়া অনেক কঠিন হয়ে পড়ে এবং অনেক সময় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েও যাত্রা করতে হয়। আবার অনেক রেলস্টেশনগুলো এমনও আছে যেখানে আধুনিক টিকিট সিস্টেমেরও অভাব দেখা যায়। এই টিকিট ক্রয়ের জন্য যাত্রীদের অনেক লম্বা লাইনে দাঁড়াতে হয়। ফলে যাত্রীদের এক বাজে দুঃসহ অভিজ্ঞতা হয়। আবার অনেক স্টেশন আছে যেখানে টিকিট বিক্রির জন্য সঠিক তথ্য বা প্রযুক্তির অভাবও দেখা যায়। যার কারণে অনেক যাত্রী বিভিন্ন ধরনের বিভ্রান্তিতেও পড়েন।

তাই যাত্রীদের জীবন রক্ষা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে আমাদের রেল ব্যবস্থার অবকাঠামো আধুনিকীকরণ এবং প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার করতে হবে। সিগন্যালিং সিস্টেম, ট্রেনের রক্ষণাবেক্ষণ, এবং রেলক্রসিং নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটানোর পাশাপাশি ট্রেন চালকদের সঠিক প্রশিক্ষণ এবং মনিটরিং সিস্টেমের দিকেও নজর দিতে হবে। তাই রেল যাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য সবাইকে বিষয় সম্পর্কে সচেতন করতে হবে। এমনকি যাত্রীদের সচেতন করার জন্য বিভিন্ন ধরনের অভিযান প্রচারও করতে হবে। এছাড়াও নিরাপদ চলাচলের জন্য নিয়মাবলী সম্পর্কে সবাইকে জানাতে হবে এবং যেকোন পরিস্থিতিতে বা যাত্রীরা যেকোনো ধরনের সন্দেহজনক কার্যকলাপের সম্মুখীন হলে সাথে সাথে পুলিশের কাছে জানাতে হবে। তাই এমন একটি বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে যেখানে রেলপথে যাত্রা হবে সবার জন্য নিরাপদ, স্বাচ্ছন্দ্যময় এবং আরামদায়ক।

শিক্ষার্থী, রাজশাহী কলেজ

×