সম্পাদকীয়
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ডেনিম পোশাক রপ্তানির ক্ষেত্রে বরাবরই বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ভালো। করোনার প্রভাব ও বৈশ্বিক যুদ্ধের কারণে সামগ্রিক ব্যবসা কিছু নেতিবচাক হলেও ডেনিম পোশাক রপ্তানিতে ৪২ শতাংশের মতো প্রবৃদ্ধি ঘটেছে। গার্মেন্টস ব্যবসায়ীরা জানান, তিন কারণে বাংলাদেশের ডেনিম পণ্য এখন বিশ্বসেরা। প্রথমত, ডেনিম ফেব্রিক্সের কাঁচামাল উৎপাদন হয় বাংলাদেশে। ফলে দাম কম। দ্বিতীয়ত, অভিনব ডিজাইন এবং সৃজনশীল ডেনিম পোশাক প্রস্তুত করতে বাংলাদেশের নৈপুণ্য। তৃতীয়ত, বাংলাদেশের ডেনিমের কারখানাগুলো অত্যাধুনিক এবং ওয়াশিংয়ের ক্ষেত্রে উৎকৃষ্ট। ফলে উৎপাদিত পণ্যের ফিনিশিং হয় আকর্ষণীয়।
ডেনিম নামের বিশেষ কাপড় দিয়ে তৈরি পোশাকের নাম জিন্স। শুরুতে ডেনিম কাপড়ে তৈরি প্যান্টকে জিন্স বলা হতো। এখন জিন্স শব্দটি এতই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে যে, অনেকে ডেনিম কাপড়কেই চেনেন জিন্স নামে। আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তার কারণে প্যান্টের পাশাপাশি ডেনিম কাপড় দিয়ে এখন ছেলে-মেয়েদের শার্ট ও জ্যাকেট, পাঞ্জাবি, মেয়েদের টপস, বাচ্চাদের পোশাক তৈরি হচ্ছে সমানতালে। ফ্যাশন সচেতন মানুষের হাতব্যাগ, কাঁধে ঝোলানোর ব্যাগ, ল্যাপটপ ব্যাগ, এমনকি পায়ের জুতায়ও স্থান করে নিয়েছে ডেনিম কাপড়।
যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) শীর্ষ ডেনিম সরবরাহকারী হওয়ায় বিশ্ববাজারে আরও বেশি রপ্তানির জন্য বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে বাংলাদেশ। ২০১৭ সাল থেকে ইইউ-এ শীর্ষ ডেনিম রপ্তানিকারক দেশ বাংলাদেশ। এই অঞ্চলে প্রতি তিন জনের একজন বাংলাদেশে উৎপাদিত ডেনিম প্যান্ট পরেন। তবে তুরস্ক, পাকিস্তান ও ভিয়েতনামসহ প্রায় সব প্রতিযোগী দেশ সব সময়ই ডেনিম বাজারে শক্তিশালী অবস্থানে থাকায় প্রতিযোগিতা এখন তীব্র। ইইউ ও যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমের দেশগুলোয় উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে গত তিন বছরে ডেনিম পণ্যের বিক্রি কমেছে।
২০২৬ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী ডেনিমের বাজার ৭৬ দশমিক এক বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এটি বছরে চার দশমিক আট শতাংশ হারে বাড়বে। স্থানীয় উদ্যোক্তারা ডেনিম খাতে প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন। দেশে ইতোমধ্যে ৪২টি আধুনিক কারখানা গড়ে উঠেছে। এ থেকে প্রতি বছর ৯০ কোটি মিটারের বেশি ডেনিম কাপড় উৎপাদন সম্ভব। গত কয়েক বছরে ইইউ ও যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ডেনিম সরবরাহে প্রতিবেশী চীনকেও ছাড়িয়ে গেছে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) তথ্য অনুসারে, আগামী পাঁচ বছরে ৭০ কোটি ডলারের ডেনিম রপ্তানির লক্ষ্য নিয়ে হবিগঞ্জে দুটি কারখানার জন্য দেড় হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও ভারত, জাপান, চীন, লাতিন আমেরিকা ও মধ্যপ্রাচ্য বাংলাদেশী ডেনিমের ক্রমবর্ধমান গন্তব্যস্থল। এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ ডেনিম জিন্স সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রামের প্যাসিফিক জিন্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ এম তানভীর বলেছেন, ‘২০২৩ সালের তুলনায় এ বছর ডেনিম উৎপাদন ১২ শতাংশের বেশি বাড়ানোর লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
চলতি বছরে ডেনিমের চাহিদা গত বছরের তুলনায় ভালো। ফ্যাশনে পরিবর্তন এবং ডেনিম আরও নরম ও আরামদায়ক হওয়ায় বিশ্বব্যাপী এর চাহিদা বাড়ছে।’ দেশের চলমান সংকট এবং রপ্তানি আয় বাড়াতে এই চাহিদাকে কাজে লাগাতে হবে। আরও আধুনিক এবং বৈচিত্র্যময় পোশাক তৈরি করে কিভাবে রপ্তানি বাড়ানো যায়, সে বিষয়ে প্রয়োজন সুপরিকল্পনা।