বাংলাদেশে ছাত্ররাজনীতি দীর্ঘদিন ধরেই গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করে আসছে। স্বাধীনতা সংগ্রাম, গণতান্ত্রিক আন্দোলন, এবং বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে ছাত্ররাজনীতি অগ্রণী ভ‚মিকা পালন করেছে। সর্বশেষ চব্বিশ এর গণঅভ্যুত্থানেও এর ভ‚মিকা ছিল অপরিসীম। কিন্তু গত এক যুগেরও বেশি সময় ধরে বিভিন্ন ক্যাম্পাসে দলীয় লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতির জন্য ছাত্র রাজনীতি সমালোচিত হয়েছে অনেকবার। ছাত্র রাজনীতির আড়ালে চাঁদাবাজি, মারামারি, বিশ্ববিদ্যালয়ের হল দখল ও বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকাÐ চলতে দেখা গিয়েছে। ফলে বিগত কয়েক বছর ধরে ছাত্ররাজনীতি তার জনপ্রিয়তা হারাতে বসেছিল। এজন্য বর্তমান সময়ে ছাত্ররাজনীতি নানা বিতর্কের জন্ম দিচ্ছে, যার ফলে ছাত্ররাজনীতির আদর্শ ও কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। ছাত্ররাজনীতির প্রতি সাধারণ শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ উঠে আসছে বিভিন্ন সময়ে, কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কিন্তু বেশিরভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র রাজনীতি থেকেই যাচ্ছে।
এজন্য সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছে ছাত্র রাজনীতি গ্রহণযোগ্য করতে হলে এর সংস্কার জরুরি। বিগত বছরগুলোর মতো করে রাজনীতি চালিয়ে গেলে ছাত্র রাজনীতি সুফল বয়ে আনার বিপরীতে সমালোচিত হাওয়ার আশঙ্কা বেশি। তাই ছাত্ররাজনীতির মূল উদ্দেশ্য হওয়া উচিত শিক্ষার্থীদের নৈতিক ও আদর্শিক মূল্যবোধ গড়ে তোলা। এটি শিক্ষার্থীদের সমাজ ও দেশের প্রতি দায়িত্বশীল করে তুলবে। ছাত্ররাজনীতির প্রথম দায়িত্ব হওয়া উচিত শিক্ষার্থীদের স্বার্থ রক্ষা করা, যেমন শিক্ষার মান উন্নয়ন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোগত উন্নয়ন, এবং শিক্ষার্থীদের অধিকার সংরক্ষণ ইত্যাদি। ছাত্ররাজনীতি শুধু রাজনৈতিক কার্যক্রমে সীমাবদ্ধ না রেখে বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক ও গবেষণামূলক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে পারে। এটি শিক্ষার্থীদের জ্ঞান বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে। অতীত সময় থেকে দেখা যাচ্ছে ছাত্ররাজনীতি প্রায়ই সংঘাত ও সহিংসতার সঙ্গে জড়িয়ে যায়। এটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিবেশ নষ্ট করে। তাই ছাত্ররাজনীতি হওয়া উচিত শান্তিপূর্ণ ও সংঘাতমুক্ত। ছাত্ররাজনীতি গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা করতে পারে। শিক্ষার্থীরা নির্বাচনের মাধ্যমে নিজেদের প্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারে, যা গণতন্ত্রের প্রতি তাদের আস্থা বৃদ্ধি করবে। এছাড়াও ছাত্র রাজনীতি শিক্ষার্থীদের সামাজিক উন্নয়নে ভ‚মিকা রাখতে উদ্বুদ্ধ করতে পারে। সমাজের বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা যেতে পারে। উচ্চ শিক্ষায় ছাত্র রাজনীতির কথা বললে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয়টি সামনে আসে।
বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ছাত্ররাজনীতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই পর্যায়েই শিক্ষার্থীরা ভবিষ্যতের নেতৃত্বের গুণাবলি অর্জন করে। তবে, ছাত্ররাজনীতি কীভাবে পরিচালিত হবে তাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যেন এটি শিক্ষার্থীদের জন্য সহায়ক ও উপকারী হয়। ছাত্ররাজনীতি হতে পারে দেশের ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব গড়ে তোলার একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম, তবে এর জন্য প্রয়োজন সঠিক দিকনির্দেশনা ও নৈতিক ভিত্তি। এটি যদি আদর্শিক ও দায়িত্বশীলভাবে পরিচালিত হয়, তবে ছাত্ররাজনীতি শিক্ষার্থীদের জীবনে এবং দেশের সার্বিক উন্নয়নে অপরিহার্য ভ‚মিকা রাখতে পারে। ছাত্ররাজনীতিকে অবশ্যই শিক্ষার মান উন্নয়ন, শিক্ষার্থীদের অধিকার রক্ষা, এবং সামাজিক দায়িত্ববোধ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভ‚মিকা পালন করতে হবে। এভাবেই ছাত্ররাজনীতি একটি ইতিবাচক ও প্রগতিশীল সমাজ গঠনে সহায়ক হতে পারে। তাই ছাত্র সংগঠনগুলো তাদের নীতি নির্ধারণ সংস্কার করতে হবে, দলীয় লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি ছাড়তে হবে, ছাত্র সংসদ কেন্দ্রিক রাজনীতির বিষয়ে আগ্রহী হতে হবে। ছাত্ররাজনীতিকে শিক্ষার্থীদের কল্যাণ, শিক্ষার মান উন্নয়ন এবং সামাজিক দায়িত্ববোধ গড়ে তোলার লক্ষ্যে পরিচালিত করতে হবে।
শিক্ষার্থী, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়