সম্পাদকীয়
বর্তমানে রাজধানীতে কয়েক কোটি লোকের বসবাস। অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ অফিস-আদালত, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, শপিংমল, স্কুল-কলেজ, হাসপাতালও গড়ে উঠেছে এই শহরেই। দিন দিন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বিপুল সংখ্যক লোকের আগমন ও বসবাসের ফলে নানা সংকটও বাড়ছে পাল্লা দিয়ে। সেগুলোরই অন্যমত একটি যানজট। নগরীতে প্রায় সব রাস্তাঘাটেই চলাচল করতে গিয়ে কমবেশি দুর্ভোগ পোহাতে হয়। বিশেষ করে যানজটের কারণে রাজধানীর গুলিস্তান যেন দুর্ভোগের চরম অবস্থানে পরিণত হয়েছে। ফুটপাত ও রাস্তা দখল করে গড়ে ওঠা অবৈধ দোকান এবং রাস্তা দখল করে অবৈধ গাড়ি পার্কিংয়ের কারণে প্রতিদিন গুলিস্তানে আসা-যাওয়ার পথে এক-দুই ঘণ্টা যানজটে আটকে থাকতে হয়।
ঢাকা-সিলেট এক্সপ্রেসওয়ের কাজ শেষ হলে আরও করুণ অবস্থা তৈরি হতে পারে। তাই এখনই সময় গুলিস্তানসহ ঢাকা প্রবেশমুখের যানজট নিরসনের জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণ করা। তাছাড়া মঙ্গলবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত মহাসম্মেলনকে কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে তীব্র যানজট দেখা দিয়েছিল। সম্মেলনস্থলের আশপাশের বিভিন্ন সড়কে গাড়ি রাখায় রাজধানী কার্যত ছিল অচল। কারওয়ান বাজার, শাহবাগ, মগবাজার ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকাগুলোতে সিগন্যালে দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে ছিল অগণিত যানবাহন। কোটা সংস্কার আন্দোলনের পর অনেক ক্ষেত্রে কিছু পরিবর্তন হলেও ঢাকার যানজট পরিস্থিতির তেমন কোনো উন্নতি দেখা যাচ্ছে না। বিভিন্ন দাবি আদায়ের লক্ষ্যে সড়ক অবরোধ কর্মসূচি যানজট পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ করে তুলছে।
রাজধানীর যানজট নিরসনে বিভিন্ন সরকারের আমলে অনেক প্রকল্প হাতে নেওয়া হলেও পুরোপুরি যানজটমুক্ত করা যায়নি রাজধানীকে। নগরীর পরিসর বাড়লেও প্রয়োজনের তুলনায় সড়কের সংখ্যা অনেক কম। ফলে, ক্রমাগত চাপ বাড়ছে সব রাস্তায়, অলিতে-গলিতে। যানজটে রাজধানীবাসীর প্রতিদিন শুধু মূল্যবান কর্মঘণ্টাই নষ্ট হচ্ছে না, বিপুল অঙ্কের আর্থিক ক্ষতিও হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, মূলত অপরিকল্পিত নগরায়ণই যানজটের জন্য দায়ী। আইন অমান্য করে যে যেভাবে পারছে গাড়ি চালাচ্ছে। নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা না থাকায় যান্ত্রিক গাড়ির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মূল সড়কে চলছে ব্যাটারিচালিত রিক্সাও। অথচ ট্রাফিক আইন মানলেই যানজটের সমস্যা অর্ধেকে নামিয়ে আনা সম্ভব।
একটি শহরে সড়কপথের পাশাপাশি বিকল্প যোগাযোগব্যবস্থা (শহরের মধ্যে বা পাশে খাল বা দীর্ঘ লেক) থাকলে সড়কে চাপ পড়ে কম। ঢাকায় এ রকম ব্যবস্থা গড়ে তোলার সুযোগ থাকলেও সঠিক পরিকল্পনার অভাবে তা গড়ে ওঠেনি। ফলে, সড়কের ওপর চাপ বেড়েছে। যার মূল্য দিতে হচ্ছে নগরবাসীকে। যানজটের কারণে দেশের অর্থনীতির ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। কমছে কর্মঘণ্টা। অনেকেই বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী। কিন্তু যানজট যদি এভাবে জেঁকে বসে, তাহলে উদ্যোক্তারা উৎসাহ হারাবে। তাই যানজট নিরসনে প্রয়োজনীয় পরিকল্পিত পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। দেশে ফ্লাইওভার, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে এবং মেট্রোরেল চালু হলেও সেক্ষেত্রে প্রয়োজন সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা। দেশের যানজট সমস্যা বেশ চ্যালেঞ্জিং হলেও সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে যানজট পরিস্থিতি সহনীয় পর্যায়ে রাখা সম্ভব। এ বিষয়ে সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি প্রত্যাশিত।