ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ২২ কার্তিক ১৪৩১

মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার 

প্রকাশিত: ২০:৩১, ৬ নভেম্বর ২০২৪

মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার 

সম্পাদকীয়

মালয়েশিয়া থেকে সুসংবাদ এসেছে বাংলাদেশী শ্রমজীবীদের জন্য। দেশটির প্ল্যান্টেশন সেক্টরে বাংলাদেশী কর্মী নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এসব কর্মীর কাজ হবে মূলত মালয়েশিয়ার সুবিস্তৃত সুবিশাল পাম গাছের (যা থেকে আহরিত হয় পাম তেল) ও রাবার বাগানের পরিচর্যা। মোটা দাগে বলা যায় কৃষি শ্রমিক। এ বিষয়ে বাংলাদেশী শ্রমজীবীদের সবিশেষ দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা রয়েছে। কাজেই আশা করা যায় যে, যথেষ্ট সংখ্যক কর্মীর চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হবে বাংলাদেশের পক্ষে। সম্প্রতি মালয়েশিয়ার প্ল্যান্টেশন সেক্টরে বাংলাদেশী কর্মী নিয়োগের সিদ্ধান্তে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার সভাপতিত্বে ২৬ অক্টোবর একসভা অনুষ্ঠিত হয়।

সেখানে বাংলাদেশী আগ্রহী শ্রমজীবীদের স্বার্থে কতিপয় সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, কর্মী পাঠানোর জন্য মালয়েশিয়ার বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে চাহিদাপত্র সত্যায়নের শেষ তারিখ চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর। জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) থেকে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মীদের বহির্গমন ছাড়পত্র নেওয়ার শেষ তারিখ ১৫ জানুয়ারি ২০২৫। নির্দেশনা মোতাবেক রিক্রুটিং এজেন্সি কর্মীদের কাছ থেকে সরকার নির্ধারিত সর্বোচ্চ অভিবাসন ব্যয় ৭৮ হাজার ৯৯০ টাকার বেশি অর্থ নিতে পারবে না। তদুপরি সব লেনদেন উপযুক্ত লিখিত দলিল, রসিদ বা ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে সম্পন্ন করতে হবে। রিক্রুটিং এজেন্ট ব্যতীত অন্য কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কর্মীদের লেনদেন করতে নিষেধ করা হয়েছে। এসব বিষয়ে নিয়মিত সরকারি পর্যায়ে মনিটরিং করা হলে মালয়েশিয়ার বাংলাদেশী কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত হতে পারে। 
উল্লেখ্য, কিছুদিন আগে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম এক সংক্ষিপ্ত সফরে ঢাকায় আসেন। এদিন হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সংক্ষিপ্ত একান্ত বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে। তাঁরা পরস্পর চার দশকের বেশি সময় ধরে একে অপরকে চেনেন। পরে রাজধানীর একটি স্থানীয় হোটেলে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পর যৌথভাবে সংবাদ সম্মেলন করেন। এতে সমধিক গুরুত্ব পেয়েছে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের শ্রমশক্তি রপ্তানির বিষয়টি। সে দেশে উপযুক্ত কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম বলেছেন, তাঁর সরকার সব শর্ত পূরণ সাপেক্ষে ইতোপূর্বে যেতে না পারা ১৮ হাজার বাংলাদেশী শ্রমিককে সে দেশে নেওয়ার বিষয়ে অগ্রাধিকার দেবে।

উল্লেখ্য, বর্তমানে প্রায় ৮ লাখ বাংলাদেশী কাজ করেন মালয়েশিয়ায়। এর মধ্যে ২০২২ সালের আগস্ট থেকে চলতি বছরের মে পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৪ লাখ অভিবাসী হয়েছেন। তখন সময়সীমা বেঁধে দেওয়ায় এবং বিমানের টিকিট না পাওয়ায় প্রায় ১৮ হাজার বাংলাদেশী শ্রমিক যেতে পারেননি। এর পাশাপাশি নেওয়া হবে নতুন শ্রমজীবী। 
দুঃখজনক হলো, শ্রমিক পাঠাতে সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য, ভুয়া ওয়ার্ক পারমিট এবং অধিকার লঙ্ঘনের মতো নানা অভিযোগের ভিত্তিতে নিকট অতীতে শ্রমিক নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছিল মালয়েশিয়া। ঢাকায় মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের ফলপ্রসূ সফরের প্রেক্ষাপটে সে দেশের শ্রমবাজার খুলেছে বাংলাদেশী শ্রমজীবীদের জন্য, যেটি নিঃসন্দেহে একটি সুসংবাদ। এখন কোনো অবস্থাতেই যাতে এর অপব্যবহার না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে।

×