আমাদের চারপাশে যা কিছু আছে তাই পরিবেশ। চারপাশের অবস্থা, জলবায়ু, প্রভাব বিস্তারকারী অন্যান্য জীব ও জৈব উপাদান সবকিছুই পরিবেশের অন্তর্ভুক্ত।আর এর সবকিছুই একজন ব্যক্তিকে প্রভাবিত করে। ফলে কেউ যদি সচেতন না হয়, তাহলে জীবন চলাচল ব্যহত হবে।প্রতি বছর ০৫ জুন পালিত হয় বিশ্ব পরিবেশ দিবস।পরিবেশের মতো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু শুধু দিবস হিসেবে উদযাপন উচিত হবে না। পরিবেশ দূষণ কমাতে হবে। ১৯৭২ সালে জাতিসংঘের মানবিক পরিবেশ বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে গৃহীত সিদ্ধান্তের আলোকে জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচীর (ইউএনপি) আয়োজনে প্রতি বছর ১০০টিরও বেশি দেশে এ দিবস পালিত হয়।আমাদের অসচেতনতার জন্য পরিবেশ হুমকির মুখে আছে। প্রতিনিয়ত পরিবেশ দূষিত হয় এমন কর্মকাণ্ড বেড়েই চলছে। খোদ রাজধানী ঢাকা ক্রমশ বসবাসের অনুপযোগী হয়ে উঠছে। লন্ডনভিত্তিক ম্যাগাজিন দ্য ইকোনমিস্টের ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (ইআইইউ) এক জরিপে বিশ্বের বাসযোগ্য শহরের তালিকায় ঢাকার অবস্থান ছিল শেষের দিক থেকে সপ্তম। সেই ছোট বেলা থেকে পড়ে আসছি আমাদের চারপাশে যা কিছু রয়েছে সব কিছু মিলেই আমাদের পরিবেশ।অথচ আমরা দিনদিন চারপাশের অবস্থানকে মারাত্মক হুমকির মুখে ফেলে দিচ্ছি।পরিবেশ দূষণের প্রকার গুলোর মধ্যে আছে শব্দ দূষণ, পানি দূষণ, মাটি দূষণ, বায়ু দূষণ ইত্যাদি।পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে হলে ব্যক্তিগত যানবাহনের ব্যবহার কমাতে হবে,
অপ্রয়োজনে এসি,ওয়াশিং মেশিন, ডিসওয়াশার ব্যবহার বন্ধ করতে হবে,পটকা, আতশবাজি ফোটানো থেকে বিরত থাকতে হবে। কীটনাশক, রাসায়নিক সারের প্রয়োগ সঠিক মাত্রায় করতে হবে,ট্যানারি শিল্পের জন্য আলাদা অঞ্চল গড়ে তুলতে হবে,মেডিকেল বর্জ্য যত্রতত্র ফেলানো বন্ধ করতে হবে,নালা নর্দমা নিয়মিত পরিষ্কার করা,উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ দ্রুত সময়ে শেষ করা,ফুটপাতের আশপাশে ময়লা ফেলানো, মূত্র বিসর্জন ইত্যাদি কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে, প্লাস্টিকের ব্যবহার কমিয়ে আনা এবং পরিবেশ আইনের যথাযথ প্রয়োগ করতে হবে।
বর্তমান সময়ে সবচেয়ে বেশি জরুরি বৃক্ষ রোপন করা।কেননা পরিবেশ রক্ষায় বৃক্ষের ভূমিকা অনস্বীকার্য। বৃক্ষ মানুষের প্রকৃত বন্ধু। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে গাছ মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণ করছে। অক্সিজেন সরবরাহ ও কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্রহণের মাধ্যমে গাছ প্রানীকূলের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখছে। একটি পরিণত গাছ বছরে ৪৮ পাউন্ড কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ করে। যা বৈশ্বিক উষ্ণতা কমাতে প্রবলভাবে সাহায্য করছে। কিন্তু আজ আমরা তথাকথিত নগরায়ন ও উন্নয়নের নামে নির্বিচারে কেটে ফেলছি এসব গাছ। যার ফলশ্রুতিতে বাস্তুতন্ত্র তার ভারসাম্য হারাচ্ছে। প্রকৃতি থেকে হারিয়ে যাচ্ছে নানা প্রজাতির উদ্ভিদ ও প্রাণী।আমরা জানি যে,পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় ভূখণ্ডের মোট আয়তনের ২৫ শতাংশ বনভূমি থাকা অপরিহার্য। সেখানে, বাংলাদেশের বনভূমি রয়েছে ১৪ দশমিক ১ শতাংশ। সুতরাং, প্রয়োজনের তুলনায় বনভূমি রয়েছে শতকরা ৫৬ দশমিক ৪ শতাংশ, ঘাটতি রয়েছে ৪৩ দশমিক ৬ শতাংশ, যার প্রভাব পড়ছে বাংলাদেশের জলবায়ুর ওপর।সম্প্রতিক দেশের তাপমাত্রা জানান দিচ্ছে, আমাদের পরিবেশের কী ভয়াবহতার দিকে যাচ্ছে।তারপরও দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নির্বিচারে বৃক্ষনিধন কার্যক্রম চলমান রয়েছে। প্রয়োজনের তুলনায় বৃক্ষের সংখ্যা কম হলে বাতাসে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের মাত্রা বেড়ে যায় এবং তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়। পৃথিবী নামক এই গ্রহে মানবজাতির অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে তাই বৃক্ষরোপণের কোনো বিকল্প নেই। ব্যক্তিপর্যায় থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয়ভাবে বৃক্ষায়ন কর্মসূচি বাড়াতে হবে। কেবল তাহলেই রক্ষা পাবে পরিবেশ, রক্ষা পাবো আমরা।
বিভিন্ন শহরে যেহেতু গাছ লাগানো সম্ভব না, তাই পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় ছাদকৃষিই অন্যতম ভরসার নাম।শব্দটি বাংলাদেশে কিছুটা অপ্রচলিত হলেও বহির্বিশ্বে ইতিমধ্যেই এটি বিপ্লব সৃষ্টি করেছে। সারাবিশ্বে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে এর পরিধি। বিশ্বের সাথে মিলিয়ে বাংলাদেশেও বড় বড় শহরগুলোতে এর ব্যপকভাবে চর্চা শুরু হয়েছে। বিশেষ করে রাজধানী শহর ঢাকাতে ছাদকৃষির ব্যাপকতা চোখে পড়ার মতো। বর্তমানে প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে বৃক্ষনিধনের ফলে প্রতিনিয়ত তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রচণ্ড গরমে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠছে ।শহর অঞ্চলে গাছপালা কম থাকায় অক্সিজেন উৎপাদন কম এবং কার্বন-ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ বাড়ছে প্রতিনিয়ত।বড় বড় শহরগুলোতে অধিক জনসংখ্যা, যানবাহন ও গাছপালা কমে যাওয়ার কারণে পরিবেশের উপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে।গাছ কেটে গাছ লাগানোর পরিবর্তে বড় বড় ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। বসতি বাড়ার সাথে সাথে শহরের পরিবেশ দিন দিন প্রতিকূলে যাচ্ছে মানুষের।শহরের অধিকাংশ জায়গা দখল করে আছে ফাঁকা ছাদ, যা তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে বেশ সহায়ক। এমন পরিস্থিতিতে শহরগুলোতে বসবাসের উপযোগী করতে হলে গাছ লাগানোর কোনো বিকল্প নেই। যেহেতু সারি সারি ভবনের কারণে গাছ লাগানোর জায়গা তেমন নেই, সেহেতু বাড়ির ছাদে কিংবা ব্যালকনিতে সুষ্ঠুভাবে বাগান করা হলে তাপমাত্রা অনেকাংশেই কমানো সম্ভব।ভবনের ফাঁকা ছাদগুলোকে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারলে এই সমস্যা থেকে অনেকাংশে নিস্তার লাভ করা সম্ভব হবে।ভবনের ছাদে বাগান করা গেলে বাগানের গাছ এ তাপ শুষে নেয় এবং গাছের দেহ থেকে যে পানি জলীয়বাষ্প আকারে প্রস্বেদন প্রক্রিয়ায় বেরিয়ে যায়, তা সেই স্থানের তাপমাত্রা কয়েক ডিগ্রি কমিয়ে আনে। অসংখ্য ছাদবাগান বা শহুরে গাছপালা এ প্রক্রিয়ায় শহরের উচ্চ তাপমাত্রাকে কমিয়ে আনে। ছাদকৃষি শুধু শখ থেকে নয়, পরিবেশের প্রয়োজনে করতে হবে। বিশেষ করে ঢাকা শহরের জন্য। এতে একদিকে যেমন পরিবেশ নির্মল থাকবে, অন্যদিকে পারিবারিক ফুল, ফল ও শাকসবজির চাহিদা মিটিয়ে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখারও সুযোগ রয়েছে। ছাদকৃষি শুধু একটি শখের কাজের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে এটি একসঙ্গে অর্থ আয়ের উৎস, পারিবারিক পুষ্টিসাধন এবং সর্বোপরি পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় ভূমিকা রাখবে।সরকারীভাবে ছাদকৃষির মতো সম্ভাবনাময় খাত সম্পর্কে জনগনকে উৎসাহিত করা হলে এটি আরও বৃদ্ধি পাবে।
সর্বশেষ যেটি জরুরি তাহলো ব্যাপক জনসচেতনতা ও কার্যকরী পদক্ষেপ।কেননা আমাদের চারপাশের সবকিছু নিয়েই আমাদের পরিবেশ।নশ্বর পৃথিবীতে বিদ্যমান প্রাণী কূলের সুস্থতা, প্রাণবন্ততা, দৃঢ়চেতা মনোবল ও কর্মদক্ষতা নির্ভর করে সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন নির্মল পরিবেশের উপর। অথচ পরিবেশের সুরক্ষায় মানবজাতির উদাসীনতা ও অপতৎপরতা প্রকাশ পায় প্রতিনিয়ত। তবে বর্তমানে পৃথিবীর সর্বস্তরের মানুষ পরিবেশ রক্ষায় উদ্বেগ প্রকাশ করছে। কিন্তু কার্যকর পদক্ষেপ ও জনসচেতনতার অভাবে পরিবেশ রক্ষা সম্ভবপর হচ্ছে না। পৃথিবীকে জীবের জন্য বসবাস যোগ্য করার নিমিত্তে পরিবেশ রক্ষার বিকল্প নেই। সরকারের উচিত উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়নে নীতিমালা প্রণয়ন। পাশাপাশি গৃহীত নীতিমালা কতটুকু কার্যকর হচ্ছে সে ব্যাপারে সজাগ দৃষ্টি রাখা। পাশাপাশি পরিবেশ রক্ষার উপকারী দিক গুলো তুলে ধরে জনসচেতনতা বৃদ্ধির উদ্যোগ গ্রহণ করা। পরিবেশ রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ গুলো হতে পারে,, যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা ফেলা থেকে বিরত থাকা, আবর্জনাপুর্ণ ডোবা-নালা ভরাট করে ফেলা, কলকারখানার বর্জ্য সুচারুরূপে অপসারণ কল্পে উদ্যোগ গ্রহণ, অগণিত বৃক্ষ রোপণ ও বনায়নের কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা।
পরিবেশ ভারসাম্য রক্ষায় সচেতনতা
শীর্ষ সংবাদ: