প্রতি বছর এই সময়টাতে মশার উপদ্রবে সাধারণ মানুষ বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন। মশার আক্রমণ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই অত্যাচার থেকে রক্ষা করার জন্য প্রশাসনের কোন ভূমিকা এখনও দেখা যাচ্ছে না। জনজীবনে যাবতীয় সমস্যাগুলোর মধ্যে এটিও একটি মারাত্বক সমস্যা। বর্তমানে যেভাবে মশার উপদ্রব দেখা যাচ্ছে, তা বিগত কয়েক বছরেও ছিলো। দুর্নীতি আর লুটপাটে এই সেক্টরে কখনও উন্নতি ছিলো না। প্রতিবছরই মশার জ্বালায় অতিষ্ঠ হয়ে উঠে জনজীবন। প্রতি বছর সিটিকর্পোরেশনকে মশা নিধনের জন্য বিরাট অংকের টাকা দেওয়া হয়। সিটিকর্পোরেশনের অধীনে মশা নিধনের জন্য বেতনভুক্ত কর্মচারীও রয়েছে অনেক। এরপরেও মশার অত্যাচার থেকে রক্ষা পায় না নগরবাসী।
সকাল বিকেল মশার ওষুধ ছিটানোর কথা হলেও তা হয়না। এগুলো যথাযথ ভাবে হওয়া দরকার। অন্তত এই সরকারের সময়ে এসব বাস্তবায়ন জরুরী। সিটিকর্পোরেশন মশার যে ওষুধ ছিটায় তা আদৌ কাজ করে কিনা দেখার কেউ নেই। এর জন্য প্রয়োজন সঠিক মনিটরিং। কিন্তু মশার ওষুধ ছিটানোর মধ্যেও বড় অনিয়ম ঘটছে। এই ওষুধ দিতে হয় বিশেষ করে প্রজনন স্থলে। বছরের উপযুক্ত সময়ে এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে এ ওষুধ ছিটাতে হয় মশার ওষুধ একই দিনে দুবার প্রয়োগ করার নিয়ম। একবার ভোরে ও সকালে দিতে হয় মশার লার্ভা ধ্বংস করার জন্য। আবার বিকেল বা সন্ধ্যায় দিতে হবে প্রাপ্ত বয়স্ক মশা মারার জন্য। সর্বোপরি মশার ওষুধের গুনগত মান অবশ্যই হতে হবে যথাযথ।
উন্নত বিশ্বে এমনটা ভাবা না গেলেও বাংলাদেশে সবই সম্ভব। বেশ কয়েক বছর আগে মশার কারণে বিমান উড্ডয়নও বন্ধ করতে হয়। এই মশার উৎপাত বৃদ্ধি হওয়া রোধ করতে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের যে ভূমিকা রাখার কথা ছিলো সেটা রাখেনি। যার কারণে বছরের পর বছর এর কুফল আমরা ভোগ করছি। মশা বাহিত রোগ ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে অসংখ্য মানুষ দীর্ঘদিন রোগে ভূগেছে। ডেঙ্গুতে প্রতিদিন মানুষ আক্রন্ত হচ্ছে। মৃত্যুর সংখ্যাও লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। এছাড়াও এই মশার মাধ্যমে মানুষ ম্যালেরিয়া এবং জিকা ভাইরাসের মতো মারাত্বক রোগে আক্রান্ত হতে পারে।
মশার এমন উপদ্রবে আমাদের নাগরিক দায়ও রয়েছে। আমরা জানি কচুরিপনা, ডোবা, নালা এবং অপরিষ্কার ড্রেন মশার জন্মস্থল, তারপরও এগুলো পরিষ্কার রাখি না আমরা। রাস্তার পাশে ময়লা আবর্জনা ফেলে আমরা মশার আবাসস্থল সৃষ্টি করি উল্টো। মনে রাখতে হবে জনসচেতনতাই সকল সমস্যার সমাধান। আমরা নিজেরা যদি সচেতন না হই তবে সিটিকর্পোরেশনের উপর হাজার দায় চাপালেও কোনো সমাধান হবে না। মশার প্রজননের ক্ষেত্রগুলো অনেকাংশই ঘরের মধ্যে থাকে। বাসা-বাড়ির আঙ্গিনা, ফুলের টব, ছাদের বাগান, ভবনের চৌবাচ্চা, এসি ফ্রিজের জমানো পানি থেকে মশার বংশ বিস্তার বেশী ঘটে। এগুলোতো আর সিটি কর্পোরেশনের লোক এসে পরিষ্কার করা সম্ভব নয়। তাই মাসে একবার হলেও নিজেদের বাসা-বাড়ি এবং ভবনের আশপাশ পরিষ্কার করা জরুরী। নিজেরা সচেতন না হলে শুধু সিটিকর্পোরেশনের কর্মসূচী দিয়ে মশার উৎপাত রোধ করা কখনোই সম্ভব হবে না। তাই আগে নিজেদের দায়িত্ব পালন করতে হবে। আমাদের সকলের মিলে মশা যেনো জন্মাতে না পারে সেই পদক্ষেপ নিতে হবে। কারণ মশা জন্মাতে না দিলে আমাদের আর মশা নিধন করার জন্য ওষুধ ছিটাতে হবেনা। সব ধরনের মশা নিধনের ওষুধ মানবদেহের জন্য ক্ষতিকারক। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্ক ব্যাক্তিদের জন্য। যাদের হাঁপানী ও শ্বাসকষ্ট রয়েছে তাদের জন্য বড় ধরনের অসুবিধা এসব ওষুধে। তাই মশার ক্ষেত্র যেমন ধ্বংস করতে হবে, তেমনি মশা যেনো আর না জন্মাতে পারে সেই ব্যপারে দায়িত্বশিল আচরণ সকলের কাম্য। তাই আসুন মশার হাত থেকে নিজে সুরক্ষা থাকি এবং অন্যদেরকেও সুরক্ষা রাখি।
মশার উপদ্রবে বিপর্যস্ত জনজীবন
শীর্ষ সংবাদ: