ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ২১ কার্তিক ১৪৩১

ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসা বিকাশে সহায়ক ভূমিকায় ডিজিটাল উদ্ভাবন

অনলাইন রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২১:৫৬, ৫ নভেম্বর ২০২৪

ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসা বিকাশে সহায়ক ভূমিকায় ডিজিটাল উদ্ভাবন

ডিজিটাল উদ্ভাবন

ব্যবসার সামগ্রিক বিকাশ অর্জনে, ব্যবসায়িক কার্যক্রম সহজতর করতে ও ভোক্তার অভিজ্ঞতাকে আরও স্বাচ্ছন্দ্যময় করতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসাগুলো ক্রমেই প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের দ্বারস্থ হচ্ছে।

ডিজিটাল উদ্ভাবনের সাথে তাল মিলিয়ে চলার ও বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার প্রয়োজনীয়তা এই পরিবর্তনকে ক্রমশ ত্বরান্বিত করছে।

গার্টনারের মতে, প্রযুক্তির প্রভাবে কর্মদক্ষতা নিশ্চিতের যে চাহিদা তৈরি হয়েছে তা বিবেচনা করে, ২০২৫ সালের মধ্যে ৭০ শতাংশ ব্যবসা তাদের নতুন অ্যাপ্লিকেশনের জন্য কোডবিহীন প্রযুক্তি ব্যবহার করবে।

স্পাইসওয়ার্ক জিফ ডেভিসের একটি প্রতিবেদন অনুসারে, ৫৩ শতাংশ মাঝারি ও ২৭ শতাংশ ক্ষুদ্র ব্যবসা তাদের আইটি খরচ বাড়িয়েছে যা তাদের ডিজিটাল প্রযুক্তির এই জোয়ারের সাথে খাপ খাওয়াতে প্রযুক্তিগত বিনিয়োগ বাড়ানোর দিকে ইঙ্গিত করে।
তীব্র প্রতিযোগিতাপূর্ণ এই বাজারে, ভোক্তাদের জন্য উন্নতমানের পণ্য ও সেবা পরিবেশনের লক্ষ্যে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসাগুলো প্রযুক্তিকে ব্যাপকভাবে কাজে লাগাচ্ছে।

অর্থনৈতিক বিশ্বায়নের প্রভাবে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসাগুলোর অগ্রসর থাকার যে প্রয়োজনীয়তা তৈরি হচ্ছে প্রযুক্তি সেই প্রয়োজন মেটাতে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। এই সময়ের ভোক্তারা দ্রুত, নিরবচ্ছিন্ন ও নিজের পছন্দসই অভিজ্ঞতা প্রত্যাশা করে থাকেন আর ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসাগুলো যাতে উন্নততর কাস্টমার রিলেশনশিপ ম্যানেজমেন্ট, ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম ও যুগোপযোগী ডিজিটাল মার্কেটিং কৌশলের মাধ্যমে তাদের ক্রেতাদের প্রত্যাশা পূরণ করতে আরও সক্ষম করে তুলছে।
উন্নত প্রযুক্তির আরেকটি উল্লেখযোগ্য সুবিধা হচ্ছে কার্য সম্পাদনের দক্ষতা।

প্রযুক্তি দৈনন্দিন কাজ স্বয়ংক্রিয়করণ, ভুল হ্রাসকরণ, কর্মপ্রক্রিয়া সহজীকরণে সহায়তা করায় ব্যবসাগুলো কৌশলগত দিকে মনোযোগ দিতে পারে। এতে করে কর্মদক্ষতা বাড়ার ফলে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পায় ও কার পরিচালন ব্যয় ও সংকোচিত হয়। প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ কায়িক শ্রমের প্রয়োজনীয়তা কমানো ও উপযুক্ত সমাধান প্রদানের মাধ্যমে পরিচালন ব্যয় উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস করে।


প্রযুক্তিগতভাবে উন্নত ব্যবসাগুলো বিভিন্ন ক্ষেত্রে সফলতার স্বাক্ষর রাখছে। ডেটা অ্যানালেটিক্স ও বিজনেস ইন্টেলিজেন্স টুলসের ম্যানেজারদের বিভিন্ন উপাত্ত প্রদান করে যার সহায়তায় তথ্য-ভিত্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ সহজ হয়। কোনো প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা যে জায়গায়ই থাকুক না কেন, মাইক্রসফট টিমস এবং স্ল্যাকের মতো কাউড প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে তারা স্বাচ্ছন্দ্যে যোগাযোগ করতে পারে এবং সহযোগিতামূলক কাজের পরিবেশ বজায় রাখতে পারে। এর পাশাপাশি বিজনেস ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার কার্যকরী উপায়ে হিসাব, মজুদ পণ্য ও অর্থ ব্যবস্থাপনা সহজ করে দেয় যাতে করে ব্যবসা পরিচালনা আরও নিরবচ্ছিন হয়।


এই ক্রমবর্ধমান ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে, পরিশীলিত বিজনেজ ম্যনেজমেন্ট সফটওয়্যারের ভূমিকা ক্রমশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এই সফটওয়্যারগুলো ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসাকে ডিজিটাল রূপান্তরে সম্পূর্ণভাবে অংশগ্রহণ করার ক্ষমতা দেয়, তাদের ক্রিয়াকলাপগুলিকে স্ট্রিমলাইন করতে, প্রয়োজনীয় তথ্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিতে, দ্রুত পরিবর্তনশীল বাজারে প্রতিযোগিতামূলক থাকতে এবং তারা যাতে দেশের নিয়ম ও প্রবিধানের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ থাকে তা নিশ্চিত করতে সক্ষম করে।

হিসাবকার্য, মজুদ পণ্যের ব্যবস্থাপনা, পে-রোল, কমপ্লিয়েন্স, ইত্যাদি ব্যবসার প্রয়োজনীয় বিভিন্ন কাজকে একটা প্ল্যাটফর্মে নিয়ে এসে মানুষের কাজ কমায়, ভুল হওয়ার সম্ভাবনা কমায় এবং সময় বাঁচায়। 

এধরনের সফটওয়্যারের একটা মূল সবিধা হচ্ছে, এগুলো রিয়েল-টাইম ইনসাইট দিতে পারে। এর মাধ্যমে ব্যবসা আর্থিক প্রতিবেদন, বিক্রয়ের হিসাব, অর্থ-প্রবাহ, সবকিছুকে এক জায়গা থেকেই পর্যবেক্ষণ করতে পারে। এর মাধ্যমে ব্যবসায়ীরা ত্বরিৎ সিদ্ধান্ত নিতে পারে, এবং কোন জায়গায় ভালো কাজ হচ্ছে বা কোন জায়গার কাজ পিছিয়ে পড়ছে তা চিহ্নিত করতে পারে। এসব সফটওয়্যার ব্যবসায় কোন দিকে আগাচ্ছে সে সম্পর্কে তথ্য দিয়ে ব্যবসাকে সদা-পরিবর্তিত ব্যবসায়িক পরিবেশে খাপ খাইয়ে নেয়ার উপযোগী করে তোলে। 

এছাড়াও, বিজনেজ ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার কাজের প্রবাহকে ঝামেলাহীন করে, কাজের দক্ষতা বাড়ায়। একটা সফটওয়্যারের মাধ্যমেই সব কাজ করার ফলে, ভিন্ন ভিন্ন টুলসেরও যেমন দরকার হয় না, তেমনি এতে করে মানুষের আলাদা করে ডাটা এন্ট্রি করতে গিয়ে সময় নষ্ট হয় না। এর মাধ্যমে অর্ডার ম্যনেজমেন্ট ও সময়মতও চালান তৈরি করে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসা তাদের কাস্টমার সার্ভিসকে উন্নত করতে পারে।

এরূপ দক্ষতার ফলে প্রতিষ্ঠানের সঞ্চয় বাড়ে, যা পরবর্তীতে অন্যান্য ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করা যায়। তাই দেখা যায় যে, বিজনেজ ম্যনেজমেন্ট সফটওয়্যার দক্ষতা বাড়িয়ে এবং খরচ কমিয়ে ক্ষুদ্র ও মাঝারি প্রতিষ্ঠানকে প্রতিযোগিতামূলক ব্যবসায়িক পরিবেশে টিকে থাকতে সহায়তা করে।

লেখক, সালাহউদ্দিন সানজি, কান্ট্রি ম্যানেজার, ট্যালি সলিউশনস, বাংলাদেশ 

শহিদ

×