সম্পাদকীয়
পুলিশ বাহিনীতে সংস্কারের কথা বারবার উচ্চারিত হচ্ছে। দেড় দশকের কিছু সময় আগে একবার সেটির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। পুলিশ রিফর্ম প্রজেক্টের (পিআরপি) অধীনে প্রস্তাবিত পুলিশ অধ্যাদেশ-২০০৭ প্রণয়ন করা হয়েছিল। অধ্যাদেশটি অনুমোদন করার আগে জনমত যাচাইয়ের সিদ্ধান্ত হয়। অধ্যাদেশ অনুমোদনের পক্ষে ৭০ হাজার লোক মত দেন। মতামতসহ অধ্যাদেশটি আবার তৎকালীন প্রধান উপদেষ্টার কাছে পাঠানো হয়। তিনি অভিমতসহ অধ্যাদেশটি পর্যালোচনার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দেন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে গঠন করা হয় পর্যালোচনা কমিটি। এ কমিটি অধ্যাদেশের ২৩টি ধারাসহ কয়েকটি উপধারার বিষয়ে আপত্তি জানায়। দীর্ঘকাল সেটি আলোর মুখ দেখেনি। অতীতে দেশবাসীর পর্যবেক্ষণ হলো- পুলিশের অবস্থান ছিল জনআস্থার বিপরীতে। বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে পেশাদারিত্ব নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। সর্বশেষ, সাম্প্রতিক ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নির্বিচারে অস্ত্র ব্যবহারের পর ফের পুলিশ সমালোচিত হয়। তাই দায়িত্ব নেওয়ার পরই পুলিশ সংস্কারে জোর দেয় অন্তর্বর্তী সরকার। এরই মধ্যে পুলিশ সংস্কার কমিশন কাজ শুরু করেছে।
পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রধান সফর রাজ হোসেন গণমাধ্যমে বলেন, আমাদের লক্ষ্য জনবান্ধব পুলিশ কিভাবে তৈরি হবে, তা নিশ্চিত করা। আমরা যেমন পুলিশের নিজেদের সমস্যার কথা শুনছি, একইভাবে পুলিশ নিয়ে জনগণের যে মতামত রয়েছে তা-ও শুনছি। সবার বক্তব্য লিপিবদ্ধ করার কাজ চলছে। আইনকানুন বদলের প্রস্তাবও আসছে। সংস্কারের কাজ অনেক চ্যালেঞ্জিং। সবার মতামত নিয়ে সংস্কারের প্রস্তাব দেওয়া হবে। সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক মুহাম্মদ নুরুল হুদার মতে, পুলিশ সংস্কার হিসেবে তিনটি বিষয় অগ্রাধিকার দেওয়া যেতে পারেÑ নিয়োগ, বদলি ও পদোন্নতি রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করা। পুলিশ সদস্যদের অপেশাদার ও বেআইনি কর্মকাণ্ডের তদন্তে স্বতন্ত্র কমিশন গঠন ও তদন্তের উৎকর্ষ বাড়ানো।
আমরা আশা করব, গণমানুষের পক্ষ থেকে যেসব সুচিন্তিত পরামর্শ আসবে, সেগুলো যথাযথভাবে বিবেচনা করা হবে। গঠনমূলক পরামর্শ সব সময়েই কাজে আসে। যুগোপযোগী আধুনিক পুলিশ বাহিনী গঠনের পূর্বশর্ত হলো সংস্কার। তাই সংস্কারের কাজটি সততা, নিষ্ঠা ও দেশপ্রেম থেকে সম্পন্ন হলে উপকার হবে দেশের মানুষের। পুলিশকে জনগণের বন্ধু ও অপরাধীদের শত্রু করে তোলার কাজটি সহজ নয়। এক্ষেত্রে পুলিশের মানসিকতারও পরিবর্তন প্রয়োজন। পুলিশ ছুঁলে আঠারো ঘা, শতাব্দীপ্রাচীন এই প্রবাদটিকে মিথ্যে প্রমাণ করে জনবান্ধব পুলিশ গঠনে যে কোনো ভালো উদ্যোগই মানুষের সমর্থন পাবে।
ইংল্যান্ড, সিঙ্গাপুর ও ভারতে নানাভাবে পুলিশের সঙ্গে কমিউনিটির এক ধরনের সংযুক্তি আছে। ইংল্যান্ডসহ অনেক উন্নত দেশে মেট্রোপলিটন পুলিশ ভলান্টিয়ার, ভলান্টিয়ার পুলিশ ক্যাডেট, ন্যাশনাল পুলিশ ক্যাডেট কোর রয়েছে। ভারতেও আছে স্টুডেন্ট পুলিশ ক্যাডেট। শিক্ষার্থীরা সেখানে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটে নানা কাজে যুক্ত হতে পারেন। বাংলাদেশেও এমনটি করা সম্ভব হলে যুগান্তকারী পরিবর্তন সাধিত হতে পারে।