সম্পাদকীয়
মানুষ স্বপ্ন দেখে। বলা হয়, মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় অথবা তার চেয়েও কিছু বেশি। স্বপ্ন না দেখলে যুক্তরাষ্ট্রের রাইট ভ্রাতৃদ্বয় আকাশে ওড়ার জন্য বিমান আবিষ্কার করতেন না। আর তারা যদি আকাশে উড্ডয়ন করতে না পারতেন, তাহলে পরবর্তীকালে মহাকাশে পরিভ্রমণ করাও সম্ভব হতো না মানুষের পক্ষে। কাজেই শুধু স্বপ্ন দেখলেই হবে না, সেই স্বপ্ন যথাযথভাবে বাস্তবায়নের জন্যও উদ্যোগী ও সফল হতে হবে স্বাপ্নিকদের। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা শান্তিতে নোবেল জয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশের তরুণদের সেই স্বপ্ন দেখা এবং তা বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়েছেন।
গত রবিবার তেজগাঁওয়ে নিজ কার্যালয়ে এনডিসি ও এএফডব্লিউসি কোর্সের সদস্যদের উদ্দেশে বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধান উপদেষ্টা এই আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘আমি বিশেষ করে তরুণদের চিন্তা করতে ও স্বপ্ন দেখতে উৎসাহিত করি। স্বপ্ন হলো পরিবর্তনের সূচনা। স্বপ্ন দেখলে পরিবর্তন হবে। আপনি যদি স্বপ্ন না দেখেন তবে এটি কখনই হবে না।’
স্বীকার করতে হবে, বর্তমানে বাংলাদেশে যে অভূতপূর্ব পরিবর্তনের সূচনা হয়েছে, তার মূলে রয়েছে তরুণ প্রজন্ম, যাদের বলা হয় জেন-জি। আমরা যদি ছাত্রবিপ্লব ও সফল অভ্যুত্থানের দিকে তাকাই, তাহলে দেখতে পাব যে, এটি মূলত তরুণ প্রজন্মের আন্দোলন। যারা কোটা সংস্কার তথা বাতিলের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণ থেকে আন্দোলন শুরু করে ক্রমান্বয়ে তা ছড়িয়ে দিয়েছিল সারাদেশে প্রধানত প্রযুক্তি তথা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে। আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির এই ইতিবাচক দিকটি তরুণদের বিপ্লব সফল করে তুলেছে।
এখন তরুণদের প্রধান দায়িত্ব ও কর্তব্য হলো বাংলাদেশকে আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান-প্রযুক্তির নিত্যনতুন আবিষ্কার ও কৌশলকে কাজে লাগিয়ে সাধারণ মানুষের আশা-আকাক্সক্ষা ও চাহিদা পূরণ করা। উন্নয়ন-অগ্রগতিতে সমৃদ্ধ একটি আধুনিক ও পরিবর্তনশীল বাংলাদেশ গড়ে তোলা। যেটি হবে যথেষ্ট স্মার্ট, প্রযুক্তিনির্ভর এবং চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার উপযোগী।
সারাবিশ্বে তরুণ প্রজন্ম এখন সমগ্র মানব ইতিহাসের সবচেয়ে শক্তিশালী অংশ। তাদের হাতে রয়েছে বহুমুখী প্রযুক্তি, যা তাদের নিত্যনতুন আইডিয়া, সৃজনশীল ভাবনা ও উদ্ভাবনসহ মানব কল্যাণের কাজে উৎসাহিত ও উদ্যোগী করে তুলেছে। তরুণরা কোনো রাজনীতিবিদ নয়। কোনো রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা বা ইচ্ছাও তাদের নেই। তারা নিজেদের স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য চায় একটি নতুন বাংলাদেশ। তবে তরুণদের এটাও ভাবতে হবে যে, আমি বিশ্বের জন্য কি করতে পারি। শান্তিতে নোবেল জয়ী ড. ইউনূস বলেন, বিশ্বের মানুষ শান্তি চায়।
অথচ বেশিরভাগ মানুষ শান্তির নামে মানুষ হত্যা করে। বর্তমান বিশ্বে অনেক স্থানে যুদ্ধ বিগ্রহ, হানাহানি, অশান্তি বিরাজমান। সে অবস্থায় আমাদের ‘বিশেষ করে তরুণদের প্রতিদিনের সমস্ত উচ্চারণ সমস্ত দর্শনের প্রতিশ্রুতি হতে হবে যে, আমরা শান্তি চাই। দেশের ভিতরে শান্তি, সকল দেশের মধ্যে শান্তি এবং বিশ্বব্যাপী শান্তি।’ আর তাহলেই তরুণ প্রজন্মের স্বপ্ন সুন্দর ও সার্থক হয়ে উঠবে। গড়ে উঠবে নতুন বাংলাদেশ।