ব্রেস্ট ফিডিং
একটি শিশু ভূমিষ্ঠ হবার পর সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন খাবার। সে হিসেবে 'মায়ের দুগ্ধ' একটি শিশুর প্রথম খাবার। যাহাকে বলা হয় 'শাল দুধ'। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) এর মতে -'প্রতিবছর বিশ্বে প্রায় ৪ মিলিয়ন নবজাতকের মৃত্যু ঘটে জন্মের ৪ সপ্তাহের মধ্যে। এর থেকে ৩১ শতাংশ শিশুর মৃত্যু রোধ করা যেতে পারত যদি নবজাতকের জন্মের ১ ঘন্টার মধ্যে মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানো হতো।'
মাতৃদুগ্ধ নবজাতক শিশু এবং মা দু'জনের জন্যই অত্যন্ত উপকারী। একটি শিশুর সুষম বৃদ্ধি ও মানসিক বিকাশ সাধনে শতভাগ পুষ্টি মাতৃদুগ্ধ নিশ্চিত করে থাকে। মায়ের শালদুগ্ধে কোন ক্ষতিকারক উপাদান নেই। যা শতভাগ খাঁটি ও ভেজালমুক্ত। একটি শিশুর রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে 'মাতৃদুগ্ধ' অতি প্রয়োজন। মায়ের বুকের দুধ শিশুর হজম শক্তি বৃদ্ধি করে। কারণ মায়ের বুকের দুধে থাকে— অ্যান্টিবডি, এনজাইম ও ভিটামিনসহ নানা গুনাগুন। শুধু তাই নয় মায়ের দুধ শিশুকে বিভিন্ন রোগ থেকে রক্ষা করতে সহায়তা করে। বুকের দুধে লিনোলেনিক এসিড, ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড, কোলেস্টেরলসহ বিভিন্ন উপাদান থাকে। যা শিশুর মস্তিষ্ক গঠনে সাহায্য করে। মায়ের দুধে থাকে পর্যাপ্ত পরিমানে ভিটামিন-এ, ভিটামিন-সি—যা শিশুকে অন্ধত্ব ও স্কার্ভি থেকে রক্ষা করে।
মায়ের শাল দুধ শিশুর প্রথম প্রাকৃতিক টিকা বা প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে। শিশুকে দুগ্ধপান করার ফলে মায়ের স্তন ও জরায়ু ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কা কমে যায়। মায়ের বুকের দুধ পান একটি প্রাকৃতিক জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি হিসেবে কাজ করে। দুধ দেওয়ার মাধ্যমে মা ও শিশুর আত্মিক বন্ধন সুদৃঢ় হয়। মা ও শিশুর মধ্যে গভীর ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এ সকল উপকারি দিক বিবেচনায় নিয়ে প্রত্যেক শিশুকে মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানো উচিত। যদি মায়েদের জন্য 'ব্রেস্ট ফিডিং' কর্ণার না থাকে,তাহলে একটি শিশু আলোচ্য বিষয়গুলো থেকে বঞ্চিত হবে।
বর্তমানে কর্মক্ষেত্রে নারীরা পুরুষের তুলনায় কোন অংশে পিছিয়ে নেই। জীবিকার সন্ধানে তাদের বের হতে হচ্ছে ঘরের বাহিরে। সাধারণত তিন থেকে ছয় মাস একটি শিশুকে মাতৃদুগ্ধ পান করানো যায়। কিন্তু কর্মক্ষেত্রে চলে আসায় মায়েরা সেই সুযোগটি পাচ্ছেন না। বাংলাদেশে শিশু অধিকার সংবিধান কর্তৃক স্বীকৃত। বাংলাদেশ শিশু অধিকার সংরক্ষণের জন্য ১৯৭৪ সালে শিশু আইন পাস হয়। আর শিশুনীতি প্রণীত হয় ২০১১ সালে । যেখানে একজন শিশুর সার্বিক সুরক্ষা ও স্বার্থ নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। ২০০৯ সালে দেশের কর্মক্ষেত্রে ব্রেস্ট ফিডিং কর্নারের স্থাপনের নির্দেশনা দিয়ে থাকলেও এখনো তা পূরণ হয়নি।
শুধু কর্মক্ষেত্রে নয় পাবলিক স্থানগুলোতেও বিশেষ স্থান নির্বাচন করা জরুরি। যেসব মায়েরা তাদের নবজাতক শিশুদের নিয়ে ট্রেনে ভ্রমন করেন। সেখানে মায়েরা শিশুকে দুধ পান করানো নিয়ে এক বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েন। তেমনি করে শপিং মল, রাস্তা , বিভিন্ন পার্ক, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান , অফিস-আদালতসহ প্রায় প্রতিটি জায়গায় এমন প্রতিক‚ল পরিস্থিতি মুখোমুখি হতে হচ্ছে মায়েদের। তাই মায়েদের নিরাপত্তা ও শিশুর সুস্বাস্থ্য নিশ্চিতকরণে 'ব্রেস্ট ফিডিং' কর্ণার প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন। সুস্থ সবল মেধাবী জাতি গঠনের জন্য শিশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টির প্রতি গভীর মনোযোগ দিতে হবে সরকারকে। ২০২৫ সালের মধ্যে সব জায়গায় 'ব্রেস্ট ফিডিং' কর্ণার এর ব্যবস্থা করা এখন সময়ের দাবি। পাবলিক স্থানগুলো থেকে শুরু করে কর্মক্ষেত্রের গ্রাম কিংবা শহরে কোথাও যেন একজন মা তার শিশুকে দুধ পান করাতে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে না পড়েন। নিরাপদ পরিবেশ হোক ব্রেস্ট ফিডিং।
শিক্ষার্থী, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়