.
স্বাধীনতার পর থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত দেশের সমবায় সমিতিগুলো নানাবিধ সীমাবদ্ধতার মধ্যেও বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রেখেছে। সমবায়ের সঙ্গে সম্পর্কিত উল্লেখযোগ্য। কিছু লক্ষ্য হলো- ক্ষুধা দূরীকরণ, খাদ্য নিরাপত্তা অর্জন এবং পুষ্টি ও কৃষির টেকসই উন্নয়ন স্থিতিশীল ও অংশগ্রহণমূলক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত এবং পূর্ণকালীন উৎপাদনমূলক কর্মসংস্থানসহ উপযুক্ত কাজের পরিবেশ তৈরি করা। রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন বৈষম্য বিলোপ, উৎপাদন ও ভোগ কাঠামোর স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা ইত্যাদি।
আদর্শ, মূল্যবোধ এবং গণতান্ত্রিক অনুশীলনের ক্ষেত্রে সমবায় দর্শন সুশাসনের অন্যতম হাতিয়ার। বর্তমানে সারাদেশে মোট সমবায় সমিতির সংখ্যা প্রায় ২ লাখ এবং প্রায় ১ কোটির বেশি সমবায়ী রয়েছেন। ৫৩তম জাতীয় সমবায় দিবসে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় উপদেষ্টা হাসান আরিফ বলেন, একতাই সমবায় আন্দোলনের মূল চালিকাশক্তি। কিন্তু নানা কারণে সমবায় সমিতিগুলোর মধ্যে বিদ্যমান মতপার্থক্য বা দ্বন্দ্বগুলো যখন আদালত পর্যন্ত গড়ায়, তখনই ব্যর্থ হয় সমবায় আন্দোলন। সমবায় আন্দোলনকে ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না। এই আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পথের সকল প্রতিবন্ধকতাকে ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার মাধ্যমে দূর করা এখন সময়ের দাবি।
কেউ কেউ বলে থাকেন যে, দেশে সমবায় আন্দোলন ব্যর্থ বা অকার্যকর প্রতিপন্ন হয়েছে। তবে সংশ্লিষ্ট অনেকের মতে, এহেন ধারণা মোটেই বাস্তবভিত্তিক নয়। প্রকৃতপক্ষে, আমাদের মতো দরিদ্র দেশের নানাবিধ সমস্যাক্লিষ্ট আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতিতে, সমবায় সমিতিগুলোর সুষ্ঠু গঠন ও সুযোগ্য পরিচালনার জন্য যে শিক্ষা ও সচেতনতা, কারিগরি জ্ঞান, বস্তুগত উপকরণ ও চাহিদা উপযোগী অবকাঠামো প্রয়োজন ছিল, অনেক ক্ষেত্রে তা যথাসময়ে সরবরাহ বা প্রয়োগ করা হয়নি। এজন্য সমবায় পদ্ধতি বিফল হয়েছে মনে করা মোটেও সংগত নয়। তবে এটা অনস্বীকার্য যে, পৃথিবীর অন্যান্য দরিদ্র ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর ন্যায়, বাংলাদেশের সমবায় আন্দোলনও নানাবিধ সমস্যা ও সীমাবদ্ধতার মধ্যে দিয়ে অগ্রসর হচ্ছে।
সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে শোষণ ও বৈষম্যমুক্ত জীবন উপহার দেয় সমবায়। ব্যক্তিগত, সামাজিক ও জাতীয় অর্থনৈতিক উন্নয়নে সমবায় সমিতির ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। সমবায়কে কেন্দ্র করে বিশ্বের অনেক দেশে শতভাগ শিক্ষা বাস্তবায়ন এবং দারিদ্র্যবিমোচন হয়েছে। বাংলাদেশেও সমবায় সমিতিগুলোর মাধ্যমে এর প্রতিফলন ঘটানো দরকার। প্রয়োজনে সমবায় কাঠামোকে সংস্কার করে নতুন করে গড়ে তোলা যেতে পারে। সকল সমবায় সমিতি এক হলে বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়তে সবচেয়ে বেশি কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে। সমবায় কার্যক্রমের গতিশীলতা বৃদ্ধির মাধ্যমে দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করাও সম্ভব। দেশের সমবায় সমিতিগুলোর ব্যবস্থাপনায় যে সব ত্রুটি-বিচ্যুতি, সীমাবদ্ধতা বা ব্যর্থতা পরিলক্ষিত হয়েছে, তা নিরাময়যোগ্য। তাই সমবায়ের লক্ষ্যমাত্রাগুলো অর্জন করতে সমবায় পদ্ধতির প্রয়োগ, অনুশীলন ও সফলতা অর্জনে প্রয়োজনীয় কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা জরুরি। সমবায় সমিতিগুলোর বুনিয়াদ পুনর্গঠন ও উন্নয়ন কর্মসূচি শক্তিশালীকরণের মাধ্যমে ভবিষ্যতে দেশের দারিদ্র্য ও বঞ্চনার অভিশাপ দূর হবে বলেই প্রত্যাশা।