.
তীব্র যানজট অধু্যূষিত রাজধানী ঢাকার নতুন যন্ত্রণা ও দুর্ভোগের নাম ব্যাটারিচালিত রিক্সা। মনুষ্যচালিত রিক্সার তবু একটি পৌরসভার টোকেন নম্বর থাকে, যদি সেটি অবৈধ না হয়। তবে ব্যাটারিচালিত রিক্সাগুলোর এর বালাই নেই। লাইসেন্সবিহীন এসবের চালকদেরও তেমন দক্ষতা তথা প্রশিক্ষণ আছে বলে মনে হয় না। বর্তমানে অবস্থাদৃষ্টে প্রতীয়মান হয় যে, ঐতিহ্যবাহী মনুষ্যচালিত রিক্সার চেয়ে ব্যাটারিচালিত রিক্সাই সমধিক। রাজধানীর বাইরে ছোট-বড় শহর, গ্রাম-গঞ্জের কথা তো বলাইবাহুল্য। দেশের প্রায় সর্বত্রই ব্যাটারিচালিত রিক্সা ও ভ্যানের প্রাবল্য ও অপ্রতিহত দাপট লক্ষ্য করা যায়। নামও সব বিচিত্র- অটো, ভটভটি, নসিমন, করিমন, আলমসাধু আরও কত কি স্থানীয় নাম। নির্মাণে তেমন খরচও নেই। সাধারণ মানের মিস্ত্রিরা বিদ্যুৎচালিত মোটর সংযোজন করে বিভিন্ন আকার-আকৃতির ছোট-বড় অবকাঠামো নির্মাণ করে দেয়। চলে বিদ্যুতের চার্জে। ওজনেও হালকা পাতলা।
লাইসেন্স ও প্রশিক্ষণবিহীন এসব চালক রাস্তায় চলাচলের কোনো নিয়মকানুন জানে না, মানেও না। প্রায়ই চলে যায় বিপথে। ডান-বাম, ছোট গাড়ি, বড় গাড়ি, সড়ক-মহাসড়ক কিছুই মানে না। অধিকাংশ ব্যাটারিচালিত রিক্সাই প্রায় ব্রেকবিহীন। ফলে যে কোনো মুহূর্তে যেখানে সেখানে ঘটে দুর্ঘটনা। বর্তমানে সারাদেশে সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ মোটরসাইকেল ও ব্যাটারিচালিত রিক্সা। অথচ এরা রাস্তার নিয়ম-কানুন অথবা ট্রাফিক পুলিশ কারও পরোয়া করে না। যেমনি বেপরোয়া, তেমনি বিপজ্জনক।
কিছুদিন আগে রাজধানীর শাহবাগে মনুষ্যচালিত রিক্সা চালকদের রাস্তা অবরোধ করতে দেখা গেছে ব্যাটারিচালিত রিক্সা নিষিদ্ধ করার দাবিতে। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে মূল সড়কে ব্যাটারিচালিত রিক্সা চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল। এর প্রতিবাদে তারা রীতিমতো ক্ষোভ-বিক্ষোভসহ রাস্তা অবরোধ, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে বিভিন্ন সরকারি স্থাপনায়। এক পর্যায়ে তৎকালীন সরকার নমনীয় হয়ে রাজধানীর অলি-গলিতে ব্যাটারিচালিত রিক্সা চলাচলের অনুমতি দেয়। তবে কিছুদিন না যেতেই তারা পুনরায় বেপরোয়া হয়ে অবাধে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে রাজধানীর রাজপথ। এতে একদিকে যেমন জানমালের নিরাপত্তাসহ সড়ক দুর্ঘটনার ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে, অন্যদিকে তীব্র যানজটসহ অপচয় হচ্ছে মূল্যবান বিদ্যুতের। তাই সময় এসেছে ঢাকাসহ বড় শহরগুলোতে অবিলম্বে ব্যাটারিচালিত রিক্সা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা। এর পাশাপাশি আপাতত রাজধানী ঢাকায় মনুষ্যচালিত রিক্সাও পর্যায়ক্রমে তুলে দেওয়া বাঞ্ছনীয়।
জনভারাক্রান্ত ঢাকার অবস্থা এমনিতেই বেসামাল। মানুষের যাতায়াতের জন্য সে তুলনায় সড়ক-মহাসড়ক খুবই অপ্রতুল। তদুপরি গণপরিবহনের সংখ্যা অনেক কম। রাজধানীতে নিবন্ধিত মোটরযানের মধ্যে মাত্র ১০ শতাংশ গণপরিবহন। প্রাইভেট কারের সংখ্যা অনেক বেশি। ব্যক্তিগত গাড়ির অনুপাতে বাড়ছে না গণপরিবহন। এর বাইরেও রয়েছে রিক্সা, ব্যাটারিচালিত রিক্সা, ভ্যানগাড়ি, মোটরসাইকেল ইত্যাদি। তদুপরি ঢাকা দীর্ঘদিন থেকে রাজধানী হিসেবে গড়ে উঠলেও ট্রাফিক ব্যবস্থা সেকেলে। এক্ষেত্রে আদৌ কোনো উন্নতি ও অগ্রগতি হয়নি। অ্যানালগ পদ্ধতিতে আর যাই হোক, আধুনিক শহর গড়ে তোলা যায় না। এখন সময় এসেছে রিক্সা, অটো, ব্যাটারিচালিত রিক্সা ইত্যাদির পরিবর্তে বড় ও সুপরিসর গণপরিবহনের সংখ্যা বাড়িয়ে রাজধানী ঢাকাকে যানজট মুক্ত আধুনিক শহর হিসেবে গড়ে তোলা।