.
ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের কাছে হজ অন্তত তাৎপর্যপূর্ণ ইবাদত। সামর্থ্যবান প্রত্যেক মুসলমানের জন্য হজ ফরজ। অর্থাৎ কাবা শরিফ তাওয়াফ এবং মদিনা মনোয়ারা জিয়ারত অবশ্য কর্তব্য। শারীরিক, মানসিক এবং আর্থিক দিক দিয়ে সামর্থ্যবান লোকজন হজ করতে যাবেন এটাই প্রত্যাশিত। হজ এমন এক মহাসমাবেশ যেখানে সমগ্র বিশ্বের বিভিন্ন বিভিন্ন বর্ণের, ভাষা এবং আকার-আকৃতির মুসলমান একই ধরনের পোশাকে সজ্জিত হয়ে একই কেন্দ্রবিন্দুতে এসে সমবেত হন। ইহরাম বাঁধা, কাবা শরিফ তাওয়াফ করা, আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করার মতো কাজের সঙ্গে সবার মুখে উচ্চারিত হয় ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’।
হজের উদ্দেশ্য শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন। সেই সঙ্গে আল্লাহর নির্দেশে সমগ্র বিশ্বমানবকে আপন করে পাওয়ার আকুতিতে হৃদয়ের গভীরে অঙ্কুরিত হয় বিশ্ব মুসলিমের ঐক্যের সেতুবন্ধ।
বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের সঙ্গে বাংলাদেশ থেকেও হাজার হাজার ধর্মপ্রাণ মুসলমান হজ পালন করতে যান। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ২০২৫ সালে সরকারিভাবে হজে যাওয়ার সাশ্রয়ী দুটি প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। ফলে, এবার গত চার বছরের তুলনায় লাখ টাকার অধিক পরিমাণ কম খরচে হজ সম্পন্ন করা যাবে, যা নিঃসন্দেহে হজ পালনকারীদের জন্য আনন্দদায়ক ও স্বস্তিকর। এবার ‘প্যাকেজ-১’-এ খরচ ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৭৮ হাজার ২৪২ টাকা এবং ‘প্যাকেজ-২’-এ খরচ হবে ৫ লাখ ৭৫ হাজার ৬৮০ টাকা। হজের সময় পবিত্র কাবা শরিফের এক থেকে দেড় কিলোমিটারের মধ্যে যারা থাকবেন, তাদের জন্য প্যাকেজ-২ এবং কাবা শরিফের তিন কিলোমিটারের মধ্যে যারা থাকবেন, তাদের জন্য প্যাকেজ-১ ঘোষণা করা হয়েছে। উল্লেখ্য, গত বছর সরকারিভাবে হজে যেতে সাধারণ প্যাকেজে ৫ লাখ ৮৭ হাজার ৩৮৭ টাকা খরচ হয়েছিল। বিশেষ হজ প্যাকেজের মূল্য ছিল ৯ লাখ ৩৬ হাজার ৩২০ টাকা। তবে এবার বিশেষ প্যাকেজ থাকছে না। তাছাড়া এবার বেসরকারি হজ এজেন্সিগুলোকেও তাদের ব্যবস্থাপনায় হজ পালনকারীদের ‘প্যাকেজ-১’-এর অনুরূপ সেবা প্রদানের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম হজযাত্রী প্রেরণকারী দেশ। দেশের ৯০ শতাংশের বেশি হজযাত্রী এবং শতভাগ ওমরা যাত্রী বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় সৌদি আরবে যান। তবে বরাবরই ট্রাভেলস এজেন্সিগুলো হজ ও ওমরা যাত্রীদের সঙ্গে নানা অনিয়ম-অব্যবস্থা এবং প্রতারণার অভিযোগ ওঠে। বেশিরভাগ যাত্রীরই যেহেতু বেসরকারি হজ এজেন্সিগুলোর ওপর নির্ভর করতে হয়, সেহেতু এই সুযোগটাই কাজে লাগায় অসাধু এজেন্সিগুলো। ধর্মীয় এমন সংবেদনশীল বিষয়ে প্রতারণা কোনোভাবেই কাম্য নয়। তাছাড়া নানা কারণে দিন দিন খরচ বেড়ে যাওয়ায় অনেকেই ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও হজ পালন করতে পারেন না। তাই দেশের হজযাত্রীরা যাতে কোনো রকমের দুর্যোগ-ভোগান্তি ছাড়াই স্বস্তিতে হজ ও ওমরা পালন করতে পারেন, স্বল্প খরচে মুসলিমরা আরও বেশি তাদের ধর্মীয় এই গুরুত্বপূর্ণ কর্তব্য পালনে উৎসাহ পান- সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সেই ব্যবস্থা নিশ্চিত করা জরুরি।