ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০১ নভেম্বর ২০২৪, ১৭ কার্তিক ১৪৩১

বেহাল হাসপাতাল

প্রকাশিত: ২০:০৮, ১ নভেম্বর ২০২৪

বেহাল হাসপাতাল

..

সম্প্রতি গণমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, দিনাজপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এমআরআইসহ পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রায় অর্ধেক যন্ত্রপাতিই অচল। চলতি বছরের শুরুতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ স্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের নিমিউ অ্যান্ড টিসি বিভাগে হাসপাতালে অচল-সচল   মেরামতযোগ্য যন্ত্রপাতির তথ্য পাঠিয়েছে। এতে  দেখা যায়, ৫৫৫টি যন্ত্রের মধ্যে ২৫৭টিই অচল। অচল যন্ত্রের মধ্যে এমআরআই সিটি স্ক্যানের মতো বড় যন্ত্র যেমন আছে, তেমনি আছে পালস অক্সিমিটারের মতো ছোট যন্ত্রও। প্রশ্ন হচ্ছে, শুধু দিনাজপুরের চিত্রই কি এমন? বাদবাকি বাংলাদেশের হাসপাতালগুলোয় কোনো সংকট নেই? এর উত্তর নেতিবাচক হলে সন্তুষ্টি মিলত। কিন্তু দেশের এমন কোনো সরকারি হাসপাতাল পাওয়া যাবে না, যেটি নিজেই অল্পবিস্তর ব্যাধিগ্রস্ত।

হাসপাতালটির কয়েকজন চিকিৎসক-নার্স জানান, দিনাজপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে বর্তমানে কিছু প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষা-নিরীক্ষা, ইসিজি, আলট্রাসনোগ্রাম ছাড়া অন্য কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয় না। প্রায় ২৪ ঘণ্টা হাসপাতালের করিডর ওয়ার্ডে বেসরকারি ক্লিনিক ডায়াগনস্টিক সেন্টারের প্রতিনিধিরা থাকেন। কিছু ওয়ার্ডবয়ের সহযোগিতা নিয়ে রোগীদের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে নিয়ে যান এই প্রতিনিধিরা। বেসরকারি হাসপাতালে প্রতি পরীক্ষা-নিরীক্ষায় সরকারি হাসপাতালের চেয়ে কমপক্ষে ২০-৪০ শতাংশ অতিরিক্ত টাকা গুনতে হয় রোগীদের। ছাড়া কিছু চিকিৎসকও রয়েছেন, যারা সংশ্লিষ্ট ডায়াগনস্টিক  সেন্টার থেকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পরামর্শ দেন  রোগীদের। উল্লেখ্য, আলোচিত হাসপাতালের পরিচালক বলেন, ‘সারাদেশে প্রান্তিক হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসক-সংকট আছে। বিষয়টি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানে। আমরা অস্বীকার করতে পারব না যে, সব সরকারি হাসপাতালেই নির্ধারিত শয্যার চেয়ে কমপক্ষে দ্বিগুণ রোগী থাকে।

দেশে সকল নাগরিকের জন্য স্বাস্থ্যসেবা সুগম করা যায়নি, এটি বাস্তবতা। সব সরকারই চেষ্টা করেছে সুবিধাবঞ্চিত দরিদ্র শ্রেণির চিকিৎসার সুযোগ করে দিতে। কতটুকু সফলতা এসেছে, সেটি খুব তর্কসাপেক্ষ নয়। অন্যপক্ষে বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা দিনদিন ব্যয়বহুল হয়ে পড়ছে। ওষুধের দাম লাগামহীনভাবে বেড়ে যাওয়ায় একমাত্র উচ্চবিত্ত শ্রেণি ছাড়া সবার ক্ষেত্রেই যথাযথ পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসা গ্রহণ দুঃসাধ্য হয়ে উঠেছে। স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটবাংলাদেশ ন্যাশনাল হেলথ অ্যাকাউন্টস ১৯৯৭-২০২০প্রতিবেদনে স্বাস্থ্যব্যয়ের একটা হিসাব মিলেছিল। তাতে দেখা যায়, স্বাস্থ্য খাতে সরকারের ব্যয়ের অংশ বছর বছর কমছে। বিপরীতে ব্যক্তির পকেটের খরচ দিন দিন বাড়ছে। বর্তমানে স্বাস্থ্য ব্যয়ের তিন-চতুর্থাংশ বহন করছেন ব্যক্তি নিজেই। এটি ভাবনার বিষয়। স্বাস্থ্য খাতে শুধু বাজেট বাড়িয়ে এই পরিস্থিতির পরিবর্তন সম্ভব নয়। এর জন্য প্রয়োজন প্রধানত ওষুধ ৎপাদন বিপণন সংস্কৃতিতে ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ।

একবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তাদের এক বৈশ্বিক প্রতিবেদনে বলেছিল, বাংলাদেশে চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে গিয়ে ২৪ শতাংশ মানুষ বিপর্যয়মূলক ব্যয়ের মধ্যে পড়ছেন। চিকিৎসা করাতে গিয়ে প্রতিবছর ৬২ লাখের বেশি মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যাচ্ছেন।  রোগগ্রস্ত মানুষের মতো অসহায় আর কেউ নেই। নাগরিকের অসহায়ত্ব দূর করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। সেই দায়িত্ব পালন যাতে সুষ্ঠু কার্যকর হয়, সেজন্য সুদূরপ্রসারী যথাযথ পরিকল্পনা প্রণয়ের বিকল্প নেই।

×