সম্পাদকীয়
ফুটবলে টানা দ্বিতীয়বারের মতো সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপ অর্জন করেছে বাংলাদেশ। দুই বছর আগে নেপালের দশরথ রঙ্গশালাতেই নেপালকে কাঁদিয়ে প্রথমবার সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জিতেছিল বাংলাদেশ। স্বাগতিকদের ২-১ গোলে হারিয়ে সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা ধরে রেখেছেন লাল-সবুজের অদম্য মেয়েরা, দেশের ফুটবলে যা নতুন এক ইতিহাস। বড় কোনো শিরোপা জিতে সেটি ধরে রাখার কীর্তি ছেলেরা দেখাতে না পারলেও সাবিনা খাতুনের নেতৃত্বে তা পেরেছেন বাংলার মেয়েরা।
শাবাশ বাংলার নারী ফুটবলার। তাদের জানাই আন্তরিক অভিনন্দন। প্রথম ম্যাচে পাকিস্তানের সঙ্গে পিছিয়ে পড়ে হতাশার ড্র করলেও মনোবল হারাননি ঋতুপর্ণা-মনিকারা। এক পর্যায়ে বাংলাদেশের সেমিফাইনালে ওঠা কিছুটা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল। কিন্তু ভারতকে ৩-১ গোলে উড়িয়ে গ্রুপসেরা হয়ে ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ। সেমিফাইনালে ভুটান পাত্তাই পায়নি। ৭-১ গোলের বড় জয় বাংলাদেশের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দেয় বহুগুণ। যার সুবাদে ফাইনালে স্থানীয়দের জয়ের প্রত্যাশা গুঁড়িয়ে দেওয়া সম্ভব হয়েছে।
দক্ষিণ এশীয় নারী ফুটবলে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের পর স্বদেশে ফিরে বিমানবন্দর থেকেই বীরকন্যা ফুটবলারদের অভূতপূর্ব রাজসিক সংবর্ধনা দিয়েছিল মানুষ। এবারও ছাদখোলা গাড়িতে বীরকন্যাদের সংবর্ধনা দেওয়ার কথা। ছাদখোলা বাসে ট্রফি হাতে বিজয়ীদের আনন্দ শোভাযাত্রা এদেশে অভিনব, যা দেশের ক্রীড়াজগতে নতুন ইতিহাসের সূচনা করেছিল নারী ফুটবলারদের অভূতপূর্ব বিজয়েই। অগণিত ফুটবলপ্রেমী মানুষের হৃদয়ে এমন অনুভূতির অনুরণন যেন চ্যাম্পিয়ন সাবিনা-সানজিদা-রূপনা-কৃষ্ণাদের হাত ধরেই দেশের ফুটবলের ভবিষ্যৎ এগিয়ে চলেছে বিজয়ীবেশে।
বহু বছর দেশবাসী এমন অভিন্ন পরম আনন্দে উদ্বেলিত হয়নি। বাংলাদেশের মানুষ প্রতিভাকে কদর করতে জানে। তাই এতটুকু কার্পণ্য ছিল না বীরের বেশে ফেরা বাংলাদেশ নারী দলকে বরণ করে নেওয়ায়। আশা করা যায় এবারও এর ব্যতিক্রম হবে না।
আমরা বারবার বলে আসছি, ফুটবলে শুধু আশা আর সদিচ্ছাই সব নয়, প্রতিপক্ষের সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের জন্য প্রয়োজন পড়ে নিজেদের উন্নত করার। সাধ থাকলেই তো আর হয় না, থাকা চাই সামর্থ্য। ইতিহাসের পাতা থেকে আমরা জানতে পারি ২০১৬ সালে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ টুর্নামেন্টে গ্রুপ পর্যায়ে আমাদের ফুটবলাররা নেপালকে হারাতে পারেনি। নেপালই শেষ পর্যন্ত হয়েছিল চ্যাম্পিয়ন। আমাদের পরামর্শ ছিল ফুটবলার এবং ফুটবল সংগঠক/ বিশেষজ্ঞরা আত্মবিশ্লেষণের মাধ্যমে আগামীতে এগিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে একটি সুষ্ঠু পরিকল্পনা তৈরি করুন।
আজ আমরা দেখতে পাচ্ছি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা অনুযায়ী পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করে খেলোয়াড়দের অভিন্ন ছাতার নিচে রেখে প্রশিক্ষণ প্রদানের ফলে দেশের নারী ফুটবলাররা অসামান্য কৃতিত্ব প্রদর্শনে সক্ষম হয়েছেন। আমরা আশাবাদী যে, ফুটবলের নারীরা আগামী দিনগুলোতে দেশের জন্য আরও সাফল্য বয়ে আনবেন। শুধু নারী ফুটবলের কথাইবা বলি কেন, এই টানা দ্বিতীয় শিরোপা পুরুষদের ফুটবলের জন্যও নিশ্চয়ই বড় প্রেরণা ও পথরেখা-নির্দেশক হবে। এই সফলতাকে পুঁজি করেই দেশের ফুটবলে নতুন গতি আসবে, ঘটবে নতুন বাঁকবদল- এমনটাই প্রত্যাশা দেশবাসীর। নারীদের সাফল্যের মধ্য দিয়ে প্রায় হতোদ্যম, ঝিমিয়ে পড়া দেশীয় ফুটবলে সঞ্চার হোক নতুন প্রাণের।