সম্পাদকীয়
দেশে জুলাই-আগস্টে অনুষ্ঠিত ছাত্র-জনতার সফল অভ্যুত্থানে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ৮ আগস্ট গঠিত হয় অন্তর্বর্তী সরকার। নবগঠিত সরকারের অগ্রাধিকার কর্মসূচিÑ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কারের পাশাপাশি দেশবাসীসহ রাজনৈতিক অঙ্গনে বরাবরই একটি গুঞ্জন ছিল যে, কবে হবে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন। এ বিষয়ে বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে একটা চাপও রয়েছে।
তার আগে অন্তর্বর্তী সরকারের অঙ্গীকার ছিল নির্বাচন কমিশন সংস্কারের। এরই ধারাবাহিকতায় মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই ৫ সেপ্টেম্বর কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন পদত্যাগ করেন একযোগে। উল্লেখ্য, এই কমিশন শপথ নিয়েছিল ২০২২ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি।
অতঃপর নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনে যোগ্য ব্যক্তি বাছাইয়ের জন্য আপিল বিভাগের বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরীকে সভাপতি করে গঠিত হয়েছে ছয় সদস্যের অনুসন্ধান কমিটি। কমিটিতে সদস্য হিসেবে থাকছেন প্রধান বিচারপতি মনোনীত হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি একেএম আসাদুজ্জামান এবং রাষ্ট্রপতি মনোনীত দুজন বিশিষ্ট নাগরিক। তারা হলেনÑ পিএসসির সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক জিন্নাতুননেসা তাহমিদা বেগম এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক অধ্যাপক সি আর আবরার।
এর বাইরে আইন অনুযায়ী পদাধিকার বলে সদস্য হিসেবে থাকবেন বাংলাদেশের মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক এবং বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান। এই কমিটি নতুন প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের জন্য প্রতি পদের বিপরীতে দুজন করে ব্যক্তির নাম সুপারিশ করবে। আইন অনুযায়ী অনুসন্ধান কমিটি গঠনের ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ প্রেরণের কথা রয়েছে।
মঙ্গলবার সচিবালয়ে আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল গণমাধ্যমকে বলেছেন, আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের যাত্রা শুরু হয়েছে। এও বলেন, ভোটার তালিকা নিয়ে প্রচুর প্রশ্ন রয়েছে। বিগত নির্বাচনগুলো ছিল ভুয়া। এবার ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা হবে। অন্তর্বর্তী সরকার একটি সুন্দর নির্বাচন উপহার দেবে জাতিকে। তবে নির্বাচন অনুষ্ঠানে কত সময় লাগবে সে প্রশ্নের উত্তরে আইন উপদেষ্টা বলেন, তা নির্ভর করে অনেকগুলো ‘ফ্যাক্টরের’ (বিষয়ের) ওপর।
দ্বিমতের কোনো অবকাশ নেই যে, নিকট অতীতে অনুষ্ঠিত অধিকাংশ জাতীয় নির্বাচন ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। রাজনৈতিক দলগুলো দলমতের ঊর্ধ্বে থেকে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে কখনোই একটি সর্বজনগ্রাহ্য স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে পারেনি। নির্বাচনে মনোনয়ন বাণিজ্য থেকে শুরু করে অর্থ ও পেশী শক্তির ব্যবহার, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের অপহরণ, হয়রানি-হানাহানি-মারামারি, ব্যালট বাক্স ছিনতাই এমনকি খুনোখুনির ঘটনা পর্যন্ত ঘটেছে। যে কারণে জনসাধারণ অবাধে শঙ্কামুক্তভাবে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে ব্যর্থ হয়েছে।
তদুপরি যে কোনো নির্বাচনে পরাজয়কে সহজভাবে মেনে নেওয়ার সংস্কৃতি এখন পর্যন্ত গড়ে উঠতে পারেনি দেশে। অতীতের সেই প্রেক্ষাপট বিবেচনায় বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান চ্যালেঞ্জ হবে আগামীতে দেশে একটি স্বচ্ছ নিরপেক্ষ অবাধ গ্রহণযোগ্য শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্পন্ন করা। যেখানে ভোটাররা নিঃশঙ্কচিত্তে প্রয়োগ করতে পারবেন তাদের ভোটাধিকার। এরকম একটি নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সর্বাগ্রে চাই একটি সুষ্ঠু ও যথাযথ হালনাগাদ ভোটার তালিকা। সর্বোপরি একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন। নতুন ইসি গঠনে গঠিত অনুসন্ধান কমিটি তা করতে সক্ষম হবে বলেই প্রত্যাশা।