সম্পাদকীয়
মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ বা স্ট্রোক একটি নীরব ঘাতক ব্যাধি। দেশে স্ট্রোকে আক্রান্তের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। বিশ্বে মৃত্যুর তৃতীয় প্রধান কারণ স্ট্রোক। প্রতিবছর প্রায় দেড় কোটি মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হন। এর মধ্যে মারা যান অর্ধকোটি আর পঙ্গুত্ব বরণ করেন অর্ধকোটি। চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্ট্রোকের সবচেয়ে বড় কারণ হলো উচ্চ রক্তচাপ। দেশে এখন ১৫ থেকে ২০ লাখ স্ট্রোকের রোগী রয়েছেন, যাদের মধ্যে প্রায় ৫ লাখ ভুগছেন দীর্ঘস্থায়ী প্রভাবে।
সাধারণত পঞ্চাশোর্ধ ব্যক্তিদের মধ্যে স্ট্রোকে আক্রান্তের হার বেশি লক্ষ্য করা গেলেও রোগটি যে কোনো বয়সেই হতে পারে। ৫০ বছর বয়সের পর প্রতি ১০ বছরে স্ট্রোকের ঝুঁকি দ্বিগুণ হয়। আক্রান্তদের মধ্যে পুরুষের সংখ্যা বেশি। ফাস্টফুডে আসক্তদের মধ্যে স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা অধিক। শিশু ও তরুণদের অনেকে খাদ্যাভ্যাসের কারণে স্ট্রোকের ঝুঁকিতে পড়তে পারেন।
দেশে রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি হলেও তাদের চিকিৎসায় যে পরিমাণ নিউরোসার্জন থাকা প্রয়োজন বা রয়েছেন, তা পর্যাপ্ত নয়। উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে সেবাটি অপ্রতুল হওয়ায় রোগীদের রাজধানী ও বিভাগীয় শহরের হাসপাতালে ছুটতে হয়। রাজধানীর ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল, বিএসএমএমইউ ও নিউরোসায়েন্সেস হাসপাতাল এবং কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতালে স্ট্রোক ব্যবস্থাপনার সুবিধা রয়েছে। ঢাকার বাইরে কয়েকটি বিভাগে স্ট্রোক সেন্টার চালু করার কথা থাকলেও এখনও কার্যকর হয়নি।
স্ট্রোকের চিকিৎসা অপ্রতুল হওয়ায় দিন দিন আক্রান্ত রোগীদের মৃত্যু এবং পঙ্গুত্বের ঝুঁকি বাড়ছে। এছাড়াও সচেতনতার ঘাটতি, ডায়াবেটিস, ধূমপান ও তামাকজাত পণ্য সেবনের প্রবণতা, অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপনসহ নানা কারণে অনেকে মৃত্যুবরণ করছেন স্ট্রোকে। অধিকাংশ মানুষ এই রোগের লক্ষণ বুঝতে না পারার কারণে হাসপাতালে রোগীকে নিয়ে যেতে দেরি করেন। অথচ স্ট্রোকের রোগীর জন্য প্রথম চার ঘণ্টা গোল্ডেন আওয়ার বা অতি গুরুত্বপূর্ণ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। স্ট্রোকের রোগীকে জরুরি ভিত্তিতে হাসপাতালে নিয়ে যেতে পারলে মৃত্যুঝুঁকি অনেকটাই কমে যাবে বলে মনে করেন স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা।
ঘাতক এই ব্যাধি থেকে বেঁচে থাকতে সচেতনতার বিকল্প নেই। স্ট্রোক প্রতিরোধে সবার আগে জীবন যাপনের ধরনে পরিবর্তন আনা, ডায়েট মেনে চলা ও নিয়মিত শরীরচর্চা করা জরুরি। আমাদের সবার উচিত খাদ্যাভ্যাস ও শারীরিক কসরতের দিকে নিজে সজাগ দৃষ্টি দেওয়া এবং অন্যকেও উৎসাহিত করা। আমরা যেন রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলে পরিবার-পরিজনের সঙ্গে সুস্থ জীবন যাপন করতে পারি। স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল- কথাটির সঙ্গে কমবেশি সবাই পরিচিত।
কিন্তু দেখা যায়, সারাদিনের কর্মব্যস্ততার ফলে আমরা স্বাস্থ্যের দিকে নজর দিতে ভুলে যাই এবং এই অসচেতনতার জন্য নানা রোগে আক্রান্ত হই। অথচ আমাদের প্রতিদিনের একটু স্বাস্থ্য সচেতনতার প্রয়াসে জীবনের অধিকাংশ সময় রোগব্যাধি থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব।