সম্পাদকীয়
রাজধানীর অসহনীয় তীব্র যানজটের বিষয়টি সুবিদিত, যেটি ইতোমধ্যেই ঢাকাকে বিশ্বের অন্যতম বসবাসের অনুপযোগী শহর হিসেবে পরিচিত করে তুলেছে। যানজট নিরসনে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সরকার নানামুখী কর্মসূচি, পরিকল্পনা প্রণয়ন ও প্রকল্প গ্রহণ এবং বাস্তবায়ন করেছে। বাস্তবে সেসব জনসেবা তথা জনকল্যাণে এবং যানজট নিরসনে অবদান রাখতে সক্ষম হয়েছে খুব সামান্যই। অনুরূপ দুটি উচ্চাভিলাষী ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে এবং বিআরটি-৩ প্রকল্প।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে রাজনৈতিক বিবেচনায় পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) আওতায় গ্রহণ করা হয় ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পটি। এর আওতায় রাজধানীর উত্তরা বিমানবন্দরের কাওলা থেকে যাত্রাবাড়ীর কুতুবখালী পর্যন্ত ১৯ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়ক প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে সেতু বিভাগ। গত বছর ফার্মগেট পর্যন্ত একটি অংশ চালু হয়। বর্তমানে এই অংশটুকু ব্যবহারও হচ্ছে। কিন্তু তিন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে টানাপোড়েনের কারণে গত ৯ মাস ধরে বন্ধ রয়েছে প্রকল্পের কাজ।
প্রকল্পটি রাজধানীর বাইরে দিয়ে নির্মাণের কথা থাকলেও তৎকালীন যোগাযোগমন্ত্রীকে ভুল বুঝিয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের জমির ওপর দিয়ে নির্মাণ কাজ শুরু হয়। যে কারণে রেলওয়ের অন্যান্য প্রকল্পের সঙ্গে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের সাংঘর্ষিক অবস্থা তৈরি হয়। ফলে, যে প্রকল্প পাঁচ বছরে শেষ হওয়ার কথা, সেটি শেষ করা যায়নি ১৫ বছরেও। অন্যদিকে প্রকল্প ব্যয় দুই দফা এবং মেয়াদ তিন দফা বাড়ানো হয়েছে। এ পর্যন্ত কাজ হয়েছে প্রায় ৭৫ শতাংশ। বাকি কাজ কবে শেষ হবে তা বলতে পারে না কেউ। ফলে, রেলওয়ের পাশাপাশি দুর্ভোগ বেড়েছে জনগণের। দুর্ঘটনাও ঘটেছে নানা সময়ে।
২০১২ সালের ডিসেম্বরে গ্রেটার ঢাকা সাসটেইনেবল আরবান ট্রান্সপোর্ট প্রজেক্ট (বিআরটি, গাজীপুর-বিমানবন্দর) অনুমোদন করা হয়। গাজীপুরের শিববাড়ি থেকে উত্তরা বিমানবন্দর পর্যন্ত ১০ দশমিক পাঁচ কিলোমিটার দীর্ঘ বিআরটি প্রকল্পটি ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও শেষ হয়নি ১২ বছরেও।
বারবার প্রকল্প ব্যয় ও মেয়াদ বাড়িয়ে চলতি বছরের ডিসেম্বর নাগাদ প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত ২৫টি বিআরটি স্টেশন ও ১৩৭টি বাস ক্রয়সহ আনুষঙ্গিক অনেক কাজ বাকি। যে কারণে প্রকল্পের মেয়াদ আরও এক বছর বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্র্র্তৃপক্ষ থেকে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে গিয়ে ইতোমধ্যে ঘটেছে কয়েকটি দুর্ঘটনা, যাতে সাধারণ মানুষের মৃত্যুসহ ক্ষয়ক্ষতির খবরও আছে।
এসবই ভুল পরিকল্পনা, চাপিয়ে দেওয়া রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত, অযোগ্য ঠিকাদার নিয়োগ, তদুপরি প্রকল্পের ব্যয় ও সময়সীমা বাড়িয়ে রাষ্ট্র তথা জনগণের অর্থ নয়-ছয়ের অকাট্য উদাহরণ। যার অনিবার্য খেসারত দিতে হয়েছে দেশের সাধারণ মানুষকে। সেক্ষেত্রে গণপরিবহন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে নিয়মিত কঠোর মনিটরিংয়ের মাধ্যমে দ্রুত মাথাভারী প্রকল্প দুটির নির্মাণ কাজ শেষ করা বাঞ্ছনীয়। তাহলে জনগণ এর যথাযথ সুফল পেতে সক্ষম হবে।