ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৯ অক্টোবর ২০২৪, ১৩ কার্তিক ১৪৩১

ঢাকার দিনরাত

মারুফ রায়হান

প্রকাশিত: ২০:৩৪, ২৮ অক্টোবর ২০২৪

ঢাকার দিনরাত

বিমানবন্দরের অন্দরমহল এবং ভিআইপি লাউঞ্জ

ঢাকার বায়ুদূষণ প্রতিদিন বেড়ে চলেছে। তবে মাঝে মধ্যে ঝড়বৃষ্টি হলে শহরটির বায়ুমানের কিছুটা উন্নতি হয়। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ভারতের ওডিশা উপকূলে আছড়ে পড়া ‘দানা’ প্রবল ঘূর্ণিঝড় ছিল।  ঘূর্ণিঝড় দানার প্রভাবে ঢাকার বায়ুমানের কিছুটা উন্নতি হয়। বৃহস্পতিবার দিনভর বৃষ্টিও হয়।

মোহাম্মদপুর : শঙ্কিত জনপদ

হঠাৎ করেই কি মোহাম্মদপুরে ছিনতাই ও ডাকাতি বেড়ে গেল! ঢাকার উত্তরা, মীরপুর ও মোহাম্মদপুর, এই তিন এলাকায় পরিকল্পিতভাবে আবাসন ব্যবস্থা গড়ে উঠলেও এখন সব স্থানই অত্যন্ত জনবহুল ও বিকট-বেহাল। অপরাধও সংঘটিত হয়ে চলেছে নানাবিধ। স্বস্তির কথা ছিনতাই ও ডাকাতিসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত সন্দেহে মোহাম্মদপুর থেকে ৪১ জনকে আটক করা হয়েছে। অভিযানে সেনাবাহিনী ছাড়াও অংশ নেয় র‌্যাব ও পুলিশ। এদিকে মোহাম্মদপুর থানা এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ৭২ ঘণ্টার মধ্যে নিয়ন্ত্রণে আনার আলটিমেটাম দেন স্থানীয় বাসিন্দারা। গত দুমাস ধরে চুরি-ছিনতাই ও ডাকাতি অব্যাহতভাবে বেড়ে যাওয়ার অভিযোগ তুলে শনিবার বিকেলে মোহাম্মদপুর থানা ঘেরাও করেন তারা।  
সরেজমিন ঢাকা উদ্যান : আলো নিভলেই জেঁকে বসে ছিনতাই আতঙ্কÑ এমন শিরোনামে সমকালে প্রকাশিত বকুল আহমেদের রিপোর্ট পড়লাম। সেখানে লেখা হয়েছে : ‘কুলসুম বেগমের বয়স্ক মা থাকেন ভাইয়ের সঙ্গে। রাজধানীর মোহাম্মদপুরের ঢাকা উদ্যান এলাকায় দুজনের বাসার দূরত্ব মিনিট পাঁচেকের। রাতবিরাতে কুলসুম মাকে দেখতে যান। গার্মেন্ট ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম শুক্রবার সন্ধ্যায় ছেলে মো. হৃদয়কে নিয়ে বোনের বাসায় আসেন। ফেরার সময় মা দেখতে চেয়েছে বললে রফিকের সঙ্গেই বেরিয়ে পড়েন কুলসুম। কিন্তু মাত্র দুই মিনিট পরই তারা ভয়ানক পরিস্থিতির মুখোমুখি হন।

হাসপাতালের শয্যায় রফিক ২৫টি ও হৃদয় ২৭টি কোপের ক্ষত নিয়ে কাতরাচ্ছেন। ঢাকা উদ্যান, একতা, নবোদয়, নবীনগর ও শ্যামলী হাউজিং এবং তুরাগ নদসংলগ্ন ওয়াকওয়েতে প্রতিদিনই কাউকে না কাউকে এমন পরিণতি ভোগ করতে হচ্ছে। দিনের আলো নিভলেই জেঁকে বসছে আতঙ্ক। এ আতঙ্ক ছিনতাইয়ের। স্থানীয়রা জানান, একদল উচ্ছৃঙ্খল যুবক চাপাতি হাতে দৌড়ায় আর কোপায়। সামনে যাকে পায়, কুপিয়ে সর্বস্ব কেড়ে নেয়। রেহাই পান না দোকানিরাও। কুলসুম বেগম বলেন, ‘বাসা থেকে নেমে তিনজন হাঁটছি।

৪ নম্বর সড়ক মোড়ে পৌঁছে দেখি ২৫-৩০ জন যুবক দৌড়াচ্ছে, হাতে চাপাতি। সামনে যাকে পাচ্ছে, কুপিয়ে সব কেড়ে নিচ্ছে। ডাকাত, ডাকাত চিৎকার করতেই আমরাও শিকারে পরিণত হলাম। ভাই ও তাঁর ছেলেকে কোপাল; আমাকে পেটাল লোহার পাইপ দিয়ে। সঙ্গে থাকা মোবাইল ফোন ও ১৫ হাজার টাকা কেড়ে নিল। সাহায্য চাইলেও কেউ আসেনি। দোকানিরা সাঁটার নামিয়ে দেন।’

বিমানবন্দরের অন্দরমহল এবং ভিআইপি লাউঞ্জ
গত সপ্তাহে ঢাকার দিনরাত-এর পাঠকরা কলামটি পাননি। কয়েকদিনের জন্য কলকাতায় গিয়েছিলাম। ভারতের ভিসা পাওয়া এখন বেশ সমস্যাজনক। আমার ছ’মাসের ভিসার মেয়াদ ফুরানোর বাকি ছিল মাত্র পনেরো দিন। তাই হুট করেই ভ্রমণের পরিকল্পনা করি। শুনেছিলাম সংবাদপত্রের পেশায় যারা আছেন তাদের জন্যে ভারত ভ্রমণ বর্তমানে কিছুটা ঝামেলার, বিমানবন্দরে নানা প্রশ্নবাণে বিদ্ধ হওয়ার আশঙ্কা। এসব শুনে অবশ্য আমার সামান্যতমও টেনশন হয়নি। আক্ষরিক অর্থেই আমার বোর্ডিং পাস পেতে দুই মিনিট এবং ইমিগ্রেশন পার হতে দেড় মিনিট লেগেছে। কলকাতা বিমানবন্দরেও প্রবেশ-প্রস্থান বেশ সুগম হয়েছে। লাগেজ পেতে ঢাকায় যা একটু বেশি সময় লেগেছে। এছাড়া অস্বস্তি বা বিরক্তিকর কোনো কিছুই ছিল না। 
আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের নিয়ম অনুসারে উড্ডয়নের তিন ঘণ্টা আগে বিমানবন্দরে প্রবেশই আমার মতো অনেকের জন্য বিরক্তির। কমপক্ষে দুই ঘণ্টা সেখানে বসে থাকতে হবে, এটা সুনিশ্চিত। তবে আমি যার পরিবারের একজন সদস্যের মতো, সেই এমডি ছোট ভাইয়ের কল্যাণে তাঁর ব্যাংকের প্লাটিনাম লাউঞ্জ ব্যবহারের সুবিধা পাওয়ায় বেশ আরাম হয়ে যায়। কর্তৃপক্ষের বিশেষ নির্দেশনা ছিল এটা বুঝতে পারি সেখানে কর্মীদের আন্তরিক সেবা দান এবং হাসিমুখে কিছু প্রয়োজন আছে কিনা তার খোঁজখবর নেওয়া থেকে।

যাহোক, পাঁচতারকা হোটেলের লাউঞ্জের সমমানের ওই ভিআইপি লাউঞ্জের খাবার ও কফির মানও ছিল দারুণ। এমন ভালো ব্ল্যাক কফি শহরের অনেক নামি-দামি কফিশপেও পাইনি। গুগল করে জানলাম, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সিটি ব্যাংক একাই বরাদ্দ নিয়েছে তিনটি ভিআইপি লাউঞ্জ। এর দুটি আন্তর্জাতিক টার্মিনালে ও একটি অভ্যন্তরীণ টার্মিনালে। প্রথম বেসরকারি ব্যাংক হিসেবে সিটি ব্যাংক শাহজালাল বিমানবন্দরে ভিআইপি লাউঞ্জের বরাদ্দ নেয় ২০১০ সালে। সে সময় থেকে ‘সিটি ব্যাংক আমেরিকান এক্সপ্রেস লাউঞ্জ’ নামে চালু থাকা ভিআইপি লাউঞ্জটি থেকে শুধু ব্যাংকটির আমেরিকান এক্সপ্রেস গোল্ড কার্ডের গ্রাহকরাই সেবা নিতে পারছেন।

আন্তর্জাতিক টার্মিনালে সিটি ব্যাংককে দ্বিতীয় ভিআইপি লাউঞ্জের বরাদ্দ দেওয়া হয় গত বছর সেপ্টেম্বরে। ‘সিটি ব্যাংক আমেরিকান এক্সপ্রেস প্লাটিনাম লাউঞ্জ’ নামে চালু হওয়া এ লাউঞ্জটিও শুধু সিটি ব্যাংকের আমেরিকান এক্সপ্রেস প্লাটিনাম ক্রেডিট কার্ডধারী আন্তর্জাতিক রুটের যাত্রীদের জন্য বরাদ্দ। ব্যাংকটিকে অভ্যন্তরীণ টার্মিনালের একমাত্র ভিআইপি লাউঞ্জটি বরাদ্দ দেওয়া হয় ২০১৩ সালে।

‘আমেরিকান এক্সপ্রেস ডোমেস্টিক লাউঞ্জ’ নামে চালু থাকা লাউঞ্জটিও কেবল সিটি ব্যাংকের ইস্যু করা আমেরিকান এক্সপ্রেস গোল্ড কার্ডের গ্রাহকদের জন্য বরাদ্দ। যাহোক, প্রসঙ্গক্রমে এখানে কিছু তথ্য তুলে ধরছি তাদের সুবিধায় যারা বছরে এক-আধবার বিদেশে যান, কিন্তু বিমানবন্দরে ওরকম বিশেষ লাউঞ্জ ব্যবহারের সুযোগ পান না। তবে তার আগে একটি সুখবর।  
চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে সুখবরটি পেয়েছিলাম। বিদেশগামী কর্মীদের বিমানবন্দরের প্রতিটি স্তরে সেবা দিতে একজন সহায়তাকারী সঙ্গে থাকবেন বলে জানিয়েছেন প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, প্রবাসীদের ভিআইপি সুবিধা নিশ্চিত করতে বিমানবন্দরে বিশেষ লাউঞ্জ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে জায়গা ঠিক করা হয়েছে, বেসামরিক বিমান পরিবহন কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও কথা হয়েছে। মাসখানেকের মধ্যে লাউঞ্জ চালু হতে পারে বলে আশা করা যাচ্ছে। অপরদিকে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যানও অনুরূপ ধারণা দিয়েছেন।

এক মাসের মধ্যে প্রবাসী যাত্রীদের জন্য হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বহুতল কার পার্কিংয়ের দ্বিতীয় তলায় একটি বিশেষ লাউঞ্জের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সেখানে দূর দুরান্ত থেকে আসা প্রবাসীদের বিশ্রাম নেওয়া এবং স্বল্পমূল্যে স্বাস্থ্যকর খাবারের ব্যবস্থা করা হবে। 
ভ্রমণের সময় বিমানবন্দর অনেকের জন্যই চাপ ও ক্লান্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা, ভিড়, আর কোলাহলের মাঝে শান্তি খুঁজে পাওয়া বেশ কঠিন। তবে যারা বিমানবন্দরে লাউঞ্জ ব্যবহার করেন, তাদের জন্য অপেক্ষার সময়টা অনেকটা স্বস্তিদায়ক হয়ে ওঠে। লাউঞ্জগুলোর প্রধান সুবিধা হলো আরামদায়ক পরিবেশ। ভিড় ও কোলাহল থেকে দূরে আপনি এখানে প্রশান্তিতে বসে বিশ্রাম নিতে পারবেন। লাউঞ্জগুলোতে সাধারণত আরামদায়ক চেয়ার এবং সোফা থাকে যা আপনাকে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করার ক্লান্তি দূর করতে সহায়তা করে।
বেশিরভাগ ক্রেডিট কার্ড লাউঞ্জ অ্যাক্সেস বিনামূল্যে বা স্বল্প খরচে প্রদান করে। বিমানবন্দরের লাউঞ্জগুলো সাধারণত প্রিমিয়াম যাত্রীদের জন্য হলেও, আজকাল এটি অনেক ভ্রমণকারীর জন্যও সহজলভ্য হয়ে উঠেছে। লাউঞ্জ ব্যবহারের সুযোগ কারা পাবেন তা নির্ভর করে কয়েকটি ফ্যাক্টরের ওপর। অনেক ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিশেষ ক্রেডিট কার্ড গ্রাহকদের জন্য লাউঞ্জ অ্যাক্সেস সুবিধা প্রদান করে। এসব ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে আপনি বিনামূল্যে বা স্বল্প খরচে লাউঞ্জের সুবিধা নিতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ, ভিসা, মাস্টারকার্ড বা আমেরিকান এক্সপ্রেসের কিছু প্রিমিয়াম কার্ড লাউঞ্জ ব্যবহারের বিশেষ সুবিধা দিয়ে থাকে।

জাফর আমিন একজন রহস্যময় মানুষ
সমাজে বিশেষ ব্যতিক্রমী মানুষ বড় একটা দেখা যায় না। আমি সভ্যভব্যসুশীল কোনো ব্যতিক্রমী ব্যক্তির কথা বোঝাচ্ছি না। বলতে চাইছি কোনো জটাধারী, বিশেষ বেশবাসধারী কিংবা অর্ধ বা পুরো নগ্ন, চারপাশ সম্পর্কে নির্মোহ নিস্পৃহ রহস্যময় মানুষের কথা। ঢাকা মহানগরীতে পথেঘাটে এমন দুয়েকজনের দেখা হয়তো আমরা পেয়েও যাই, তবে তাদের উপেক্ষা করি অপ্রকৃতিস্থ পাগল ভবঘুরে সংসারত্যাগীÑ এসব তকমা দিয়ে। তবে এসবের ভেতর ছদ্মবেশী ‘উন্মাদ’ যে একেবারেই থাকে না, সেটি দিব্যি দিয়ে বলা যাবে না।

উদরপূর্তির জন্য মানবসন্তান কতোই না ফন্দিফিকির করে থাকে। যদিও সত্যি সত্যি আধ্যাত্মিক ব্যক্তিও আছেন আমাদের সমাজে, যাদের কোনো না কোনো অলৌকিক বিষয়আশয়ের প্রত্যক্ষদর্শী বা পরোক্ষ শ্রবণকারী মানুষ থাকেন, যারা শতভাগ সেটি বিশ^াস করেন। আমরা থাকি বিশ^াস-অবিশ^াসের দোলাচলে। 
বরিশালের জাফর আমিনের কথা ঢের শুনেছি আমার সুফি ও কবিবন্ধু সুমনের কাছে, যাকে তিনি অনেকের মতো জাফর মামা বলে সম্বোধন করেন। তরুণ বয়সে খুলনায় জাফর আমিনের সহচর ছিলেন তিনি, তার কয়েকজন পরিচিত ব্যক্তি ও বন্ধুর মতোই। একাডেমিক শিক্ষা বেশি না হলেও জাফর আমিনের সঙ্গে আলাপে এমন কিছু প্রকৃত জ্ঞানের সন্ধান পেয়েছেন বন্ধুটি, যাতে মনে হয়েছে এই রহস্যময় ব্যক্তি ঢাউশ গ্রন্থ রচনাকারী আন্তর্জাতিক দার্শনিকদের চাইতে একটুও কম উচ্চতাসম্পন্ন দার্শনিক নন। 
তিনি স্বল্প সময়ের জন্য ঢাকায় এসেছেন জেনে তাঁর সাক্ষাৎ লাভের উদ্দেশ্যে মধ্যরাতে বসুন্ধরায় গেলাম বন্ধুটির সঙ্গে। কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে ছিলেন, উঠে বসলেন। যদিও আমার দিকে ফিরেও তাকালেন না। পরনের একমাত্র বস্ত্রখ- বেসামাল গামছা যুৎমতো কোমরে বাঁধবার জন্য খুলেই ফেললেন। এতে যে তিনি পুরোপুরি নগ্ন হয়ে গেছেন সেটি আমলে নিলেন না। বরিশালে নিজের এলাকায় কখনো পুরো নগ্ন, কখনো অর্ধনগ্ন, আবার কখনো বা পোশাক-আশাকে পুরোটা আবৃত (শীতকালে সম্ভবত) থাকেন।

দুহাতের দশ আঙুলে তাঁর ১০ আংটি, সোনালি চুড়িও আছে ৬টি করে উভয় হাতে; গলায় মালা, মাদুলি ও তসবিহ। পায়ের কাছে আছে লোহার কিছু উপকরণ। আবারও শুয়ে পড়লেন তিনি কাশতে কাশতে। হাঁক পেড়ে আমাদের রাতের খাবার দিতে বললেন। তিনি না খেয়ে তার প্রিয় সহচর, মানে আমার বন্ধুটির অপেক্ষায় ছিলেন। আমরা তো খেয়েই এসেছি। তাই তিনি আর খাবারের দিকে গেলেন না। তার পাশে শুতে বললেন সুমনকে। বন্ধু শয়ন করলে আমি অন্য ঘরে চলে এলাম চা পান করতে। কিছুক্ষণের মধ্যেই আমাকে ডেকে পাঠালেন এবং আদেশ করলেন বন্ধুর পাশে শয়ন করতে। গৃহস্বামী বললেন, মারুফ ভাই কি আপনার পাশে শোবেন? এ কথা শুনে আমি কপট রাগ দেখিয়ে বললাম, বেশি কথা বলেন কেন, তিনি যেখানে বলেছেন আমি সেখানেই শুচ্ছি।

একথা শুনে তিনি হো হো করে হেসে উঠলেন। তিনজনে শুয়ে আছি। তিনি দুহাত ওপরে তুলতে বললে তুলি, আবার চুপচাপ শুয়ে থাকি। পরে অবশ্য তিনি আমাদের ডান হাত টেনে নিয়ে তার হাতের ওপরে রাখতে বললেন এবং এক নিঃশ^াসে প্রায় কুড়ি-পঁচিশ মিনিট উচ্চস্বরে দোয়া পড়ে গেলেন। তাঁর কথাগুলো আমাদেরও তাঁর সাথে সাথে বলতে হলো। 
গৃহস্বামী, খুলনার অনুজপ্রতীম বৃক্ষপ্রেমী বন্ধুর কাছে তাঁর গুরু জাফর আমিন সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি হোয়াটসআপে নিচের কথাগুলো লিখে পাঠান। পাঠকের জন্যে পুরোটাই তুলে দিচ্ছি: ‘জাফর আমিন, জন্ম ১৯৫৪, স্থান মানপাশা, নলসিটি, জেলা ঝালকাঠি। বাবা সাধারণ গৃহস্থ, তিনি বাবার প্রথম স্ত্রীর একমাত্র সন্তান, তার ছোট মার ঘরে তিন ভাই এক বোন। জাফর আমিন দশম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেন। পেশায় শ্রমিক ছিলেন। ১৯৮৬ সাল থেকে তাঁর আধ্যাত্মিক জীবনের সূচনা;  দীক্ষাগুরুর নাম আফতাব ফকির, পটুয়াখালি।

কথিত আছে জাফর আমিন একবার খান জাহান আলীর (রাহ:) মাজারের দিঘির মধ্যে কুমিরের সঙ্গে সাত দিন জলে অবস্থান করেন, এরপর একটা কুমির ঘাড়ে নিয়ে উঠে আসেন। এরপর থেকে তিনি সবসময়ই ধ্যানমগ্ন থাকেন। কিছু ঘটনা : তিনি বিদ্যুতের ৩৩,০০০ ভোল্ট তারের ওপর দিয়ে হেঁটে গিয়ে তার জোড়া দিয়েছেন। তাঁর হাতে কোনো টাকা এলেই তিনি দরিদ্র মানুষদের দিয়ে দেন অথবা রান্না করে খাওয়ান। তার এলাকায় এমপি ছিলেন যিনি, জাফর একবার তার ওয়াজ মাহফিল বন্ধ করে দেন।

এর কিছু দিন পর ওই রাজনীতিক সংসদ সদস্য পদ হারান এবং পরে অসুস্থ হয়ে মারা যান। জাফর আমিনকে বিভিন্ন সময়ে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে। কিন্তু দ্রুত সময়ের মধ্যে ছেড়ে দিতে এবং মাফ চাইতে বাধ্যও হয়েছে। এক পুলিশ অফিসার তাঁকে নির্যাতন করেন একবার। পরদিন সেই পুলিশ পাগল হয়ে যান। জাফর আমিন আসলেই একজন রহস্যময় মানুষ। তাঁর আঙুলের পরশে আমার ভাঙ্গা মেরুদণ্ড ভালো হয়ে যায়।’

২৭ অক্টোবর, ২০২৪

[email protected]

×