ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৯ অক্টোবর ২০২৪, ১৩ কার্তিক ১৪৩১

বিঘ্নিত রেলসেবা

-

প্রকাশিত: ২০:৩০, ২৮ অক্টোবর ২০২৪

বিঘ্নিত রেলসেবা

সম্পাদকীয়

দেশে বিভিন্ন সময় নতুন রেলপথ ও স্টেশন ভবন নির্মাণ, সিগন্যালিং ব্যবস্থার আধুনিকায়নসহ বিভিন্ন খাতে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করেছে বিভিন্ন সরকার। তারপরও খাতটির সংকট কাটছে না। রেলে এত বিনিয়োগ সত্ত্বেও বাড়েনি যাত্রীসেবার কাক্সিক্ষত মান। শিডিউল বিপর্যয়, দুর্ঘটনা, অবকাঠামোগত দুর্বলতার বিষয়গুলো কাটিয়ে উঠতে পারেনি সংস্থাটি। যেসব লক্ষ্যে রেলে বিপুল বিনিয়োগ করা হয়েছে, সেগুলোর শতভাগ লক্ষ্য অর্জিত হয়নি। অপর্যাপ্ত, মেয়াদোত্তীর্ণ ইঞ্জিন ও কোচ, পুরনো ও জীর্ণ রেললাইন এবং ঝুঁকিপূর্ণ সেতু, ধীরগতি আর চাহিদা অনুযায়ী টিকিট না পাওয়ার অভিযোগ মাথায় নিয়েই প্রতিবছর লোকসান গুনে চলেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। 
অটোমেটিক সিগন্যালিং সিস্টেমে সমস্যার কারণে গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশনে পঞ্চগড় এক্সপ্রেসের পাঁচটি বগি লাইনচ্যুত হয়। ফলে, সেদিন কয়েক ঘণ্টা ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ট্রেনটি ধীরগতিতে থাকায় কোনো হতাহতের ঘটনা না ঘটলেও ভেঙে পড়ে রেলওয়ের শিডিউল। বাতিল হয় দুটি ট্রেনের যাত্রা। এ ছাড়াও বিভিন্ন ট্রেন কয়েক ঘণ্টা বিলম্বে কমলাপুর স্টেশন ছেড়ে যায়। ফলে, চরম দুর্ভোগে পড়েন ট্রেনের যাত্রীরা। স্টেশনে এসেও ট্রেনে উঠতে না পেরে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেক যাত্রী। তবে, বিলম্বিত ট্রেনে যেতে না চাওয়া যাত্রীদের টিকিট ফেরত নিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ। 
সংশ্লিষ্টদের মতে, রেল কর্তৃপক্ষের দুর্বল ব্যবস্থাপনার কারণে প্রায়ই দেশের বিভিন্ন স্থানে দুর্ঘটনা ঘটে। ইতোমধ্যে গেটকিপারদের অবহেলা ও অসতর্কতায় রেলক্রসিংগুলোতে ট্রেনের সঙ্গে যাত্রীবাহী গাড়ি, তেলবাহী ট্যাঙ্কলরি, বাস ইত্যাদির মুখোমুখি সংঘর্ষের মতো বড় ও অস্বাভাবিক কয়েকটি দুর্ঘটনা ঘটেছে। সেই সঙ্গে রাস্তা পারাপারে সাধারণ পরিবহনগুলোর নিয়ম না মানা, যত্রতত্র অনুমতি না নিয়ে অবৈধ রেলক্রসিং তৈরি করা, রেলক্রসিংয়ের গেটে গেটম্যান না থাকা, রাস্তা পারাপারে পথাচারীদের সিগন্যালের জন্য অপেক্ষা না করা, নাশকতামূলক কর্মকা-, কোনো কোনো ক্ষেত্রে চালকদের অবহেলার কারণেও ঘটছে ট্রেন দুর্ঘটনা। পাশাপাশি রেলপথের দু’পাশে বাজার বা বিভিন্ন অবৈধ স্থপনাও ট্রেন দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। 
সম্প্রতি সংঘটিত ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশনের দুর্ঘটনা দুর্বল রেল ব্যবস্থাপনারই একটি উদ্বেগজনক উদাহরণ বলা যায়। স্বল্পব্যয়, নিরাপদ ও কম দুর্ঘটনাপ্রবণ যান হিসেবে ভ্রমণের জন্য মানুষের কাছে রেলের ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে। এখনো মানুষ রেলপথকেই সব থেকে নিরাপদ মনে করে। অথচ অনিয়ম ও দুর্নীতি থেকে বেরোতে পারছে না যাত্রীসেবামূলক সরকারি প্রতিষ্ঠানটি। বিভিন্ন সময় ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটায় এ পরিবহনে ঝুঁকিও বেড়েছে।

সচরাচর প্রকৃত সমস্যাগুলো সঠিকভাবে চিহ্নিত করে সমাধানের কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হয় না। কিছু চেষ্টা করা হলেও সেগুলো ফলপ্রসূ হয় না। এ অবস্থার উত্তরণে রেলওয়ের যাত্রীসেবার মান বাড়ানোর বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নেওয়া বাঞ্ছনীয়। রেল ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহি নিশ্চিত করা জরুরি।

×